বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রেইনট্রি ধর্ষণ মামলা: ‘সঠিক তদন্ত না হওয়ায় এমন রায়’

  •    
  • ১১ নভেম্বর, ২০২১ ২১:১০

বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘ট্রাইবুনালের রায়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, মামলাটি মিথ্যা নয়। মিথ্যা হলে ট্রাইবুনাল ভিকটিম বাদীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় প্রসিকিউশন দাখিলের নির্দেশ দিতেন। মূলত সঠিক তদন্ত না হওয়ায় আজ এমন রায় হলো। এর কারণে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ভৎসনা করেছেন।’ 

রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় সঠিক তদন্ত না হওয়ায় সব আসামি খালাস পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ।

তিনি বলেছেন, ‘ট্রাইবুনালের রায়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, মামলাটি মিথ্যা নয়। মিথ্যা হলে ট্রাইবুনাল ভিকটিম বাদীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় প্রসিকিউশন দাখিলের নির্দেশ দিতেন। মূলত সঠিক তদন্ত না হওয়ায় আজ এমন রায় হলো। এর কারণে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ভৎসনা করেছেন।’

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৬ মে বনানী থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

বৃহস্পতিবার আলোচিত এই মামলার রায় দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার। এতে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়েছেন।

রায়ের একটি অংশে বলা হয়, “এখানে ধর্ষণের তিনটি উপাদান উল্লেখ রয়েছে, ‘সম্মতি ব্যতিরেকে’, ‘ভীতি প্রদর্শন’ বা ‘প্রতারণামূলক সম্মতি আদায়’– কোনোটিই এই মামলায় বিদ্যমান নাই। ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা হলো, চিকিৎসক মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাননি মর্মে মতামত দিলেন, ভুক্তভোগীরা পরিধেয় কাপড়ে কোনো পুরুষের সিমেনের কণা পাওয়া যায় নাই এবং আসামি নাঈম আশরাফের সঙ্গে ডিএনএ টেস্ট ম্যাচ করে নাই, তারপরও তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি চার্জশিট দাখিল করে আদালতের পাবলিক টাইম নষ্ট করেছেন। এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেপ কেসের বিচার ব্যাহত হয়েছে। তিনি অন্য কোনো পক্ষ কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে এই চার্জশিট দিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠিয়েছেন। আজকের দিনসহ এই মামলায় ৯৪ কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘ঘটনার অনেক দিন পর মেডিক্যাল হওয়ায় সেখানে স্বভাবিকভাবে ধর্ষণের আলামত আসবে না। তাই এ মামলায় পারিপার্শ্বিক সাক্ষী ও আসামিদের স্বীকারোক্তিই ভরসা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘এই মামলার রায়ের পর একজন ভিকটিমের মায়ের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। আমি উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

সঠিক তদন্ত না হাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছি। অভিযোগ প্রমাণে আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না। তারপরও আদালত আসামিদের খালাসের আদেশ দিয়েছে। এ রায়ে আমরা সংক্ষুদ্ধ।’

এর আগে সংশ্লিষ্ট আদালতের এই বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর বলেছিলেন, ‘আমাদের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেননি। এ ছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ জমা দেয়া হয়নি।’

তিনি বলেছিলেন, ‘চিকিৎসা প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আছে, পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় আদালত যদি মনে করে আসামিদের দণ্ড দিতে পারে।’

রায়ের পরে সাফাত আহমেদের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এই মামলার তদন্তকারী টিম মামলা তদন্তে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এই মামলাটি গ্রহণ করার পর থেকে তারা যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, আমরা বিস্মিত হয়েছি। তাদের ব্যর্থতায় আদালত বলেছেন, এই মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট হওয়াই উচিত ছিল না। তারা কাউকে খুশি করার জন্য এ কাজ করেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘ধর্ষিত হওয়ার পর এমন কিছু উপাদান থাকে (কাপড়চোপড়, ডিএনএ, মেডিক্যাল রিপোর্ট) যা খুব জরুরি। কারণ মেডিক্যাল রিপোর্টটা যদি না থাকে তাহলে সমাজে সকলেই মিথ্যা মামলায় নিমজ্জিত হতে পারে। এটি একটি সায়েন্টিফিক ফরেনসিক রিপোর্ট। ডাক্তার যদি বলেন হয়েছে, তাহলে মেনে নিতেই হবে।’

মামলার অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফের আইনজীবী এম এ বি খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী মডেল পিয়াসা ষড়যন্ত্র করে উচ্চপর্যায়ের ব্যবসীদের কাছে হেনস্তা করার জন্য এ ঘটনার এক মাস আট দিন পরে মামলা করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। আদালত সবদিক বিবেচনা করে মামলার মেডিকেল রিপোর্ট, ডিএনএ টেস্ট, আসামিদের দেয়া ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি, নারী ও নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় ভিকটিমের জবানবন্দি এবং ২২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি পর্যালোচনা করে আসামিদের খালাস দিয়েছে।’

তিনি আদালতের রায় পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এই মামলা যে ধারায় করা হয়েছে সেটি প্রমাণ হয়নি। মামলায় যে উপাদান রয়েছে, তা এই ধারায় প্রমাণ হয়নি। যখন কোনো নারী ধর্ষিত হয়, তাকে অবশ্যই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে হবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেটা প্রমাণিত হয়। ৭২ ঘণ্টা পার হলে সেই বিষয়ে মেডিক্যাল রিপোর্টে কোনো কিছু আসার সম্ভাবনা নেই, আসতে পারে না। আসামিদের সঙ্গে ভিকটিমের ডিএনএ ম্যাচ করে করে নাই বলে সবাই খালাস পেয়েছে।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার বলেন, ‘৭২ ঘণ্টার পর মেডিক্যাল টেস্ট করা হলেই ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। তাই ৭২ ঘণ্টার বেশি হলে মামলা না নেয়ার আদেশ দিচ্ছি। কেননা তাতে মামলা প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।’

এ বিভাগের আরো খবর