ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে সমর্থন দেয়ার তিন দিনের মাথায় উল্টো কথা বললেন বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেছেন, ‘সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে মালিক-শ্রমিকদের দিয়ে পরিবহন ধর্মঘটের নামে নাটক করিয়েছে।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সোমবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত মানববন্ধনে নুর এ মন্তব্য করেন।
নিজের বক্তব্যে যুক্তি দিয়ে নুর বলেন, ‘জনগণ রাস্তায় নামবে বলে আগেই পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা আগেই বলেছিলাম, তেলের দাম কমানোর আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাই, তবে ভাড়া বৃদ্ধির আন্দোলনকে স্বাগত জানাতে পারছি না। এর আগেও আমরা দেখেছি অন্যান্য দলের সমাবেশ থাকলে পরিবহন অটোম্যাটিক্যালি বন্ধ হয়ে যায়।
‘বিভিন্ন সংগঠন ও সরকার সবকিছু এক রকম। সরকার মালিক-শ্রমিকদের দিয়ে ধর্মঘটের নামে নাটক করেছে। জ্বালানির দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ আর ভাড়া বাড়িয়েছে ২৭ শতাংশ।’
নুরের এই বক্তব্য তিন দিন আগের বক্তব্যের বিপরীত। সেদিন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের মালিকপক্ষের একটি কর্মসূচি চলছে, যেটি যথার্থ। হঠাৎ করে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়া একবারে ১৫ টাকা ডিজেল, কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে জনজীবনে বিপর্যয় ঘটেছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব। তেলের দাম যে বৃদ্ধি করা হয়েছে এটি প্রত্যাহার করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বসে এটার একটা সমন্বয় করতে হবে।’
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনায় ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে শুক্রবার থেকে দিন ধরে বাস বন্ধ রাখে পরিবহন মালিক সমিতি। এতে সারা দেশে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়ে মানুষ।
এমন বাস্তবতায় রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাস ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠক করে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। বৈঠক শেষে সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাস চালুর আহ্বান জানান।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ১ টাকা ৮০ পয়সা। আর মহানগরে বড় বাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ২ টাকা ১৫ পয়সা। আর মিনিবাসে তা ১০ পয়সা কম হবে।
তেলের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে নুর বলেন, ‘বিশ্ববাজারে যদি কোনো কিছুর দাম বাড়ে তবে সেটার দেশের বাজারে কিছু সামঞ্জস্যতা আছে। তাই বলে হঠাৎ করেই দুই-তিন টাকা নয়, একেবারে ১৫ টাকা ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা যুক্তি হিসেবে বলেছে, হঠাৎ করেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে।
‘গত দেড় বছর বিশ্ববাজারে তেলের দাম শূন্যের কোটায় ছিল। এর আগেও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কয়েকবার কমেছে, কিন্তু সরকার যে দাম বাড়িয়েছিল সেটি আর কমেনি। অনেক সমালোচনার পর ২০১৬ সালে ৩ টাকা কমিয়েছিল। সেই হিসাবে গত সাত বছরে সরকার ৪০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান দামে যদি সরকার লোকসান দেয়, তাদের লোকসান হবে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা; বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা। গত ছয় বছরে যে লাভ করেছে সেই লাভ দিয়ে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায় আগামী ৬ মাস।’
বাস ভাড়া কমানোর আহ্বান জানিয়ে নুর বলেন, ‘জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য কমাতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’
এই ‘জনবিচ্ছিন্ন সরকার’ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, জনগণের কষ্ট তত বাড়বে উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগ তত বাড়বে। কাজেই মাফিয়াদের বিদায় করার জন্য যে সংগ্রাম প্রয়োজন, সেই আন্দোলন-সংগ্রাম আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’