জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে তিন দিনেই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে। রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্দরে আটকা পড়েছে প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কনটেইনার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধর্মঘট চলতে থাকলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হবেন তারা।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহনের বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে ৩৮ হাজার ২০০টি কনটেইনার রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ইয়ার্ডে থাকে ৩০ থেকে ৩২ হাজার কনটেইনার।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বন্দরের একজন টার্মিনাল ম্যানজার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ৬ হাজার ৪০০টি কনটেইনার আটকা পড়েছে। ধর্মঘট চলতে থাকলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহনের বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন জেটিতে থাকা জাহাজে গড়ে চার হাজার কনটেইনার উঠানামা হয়। তবে শুক্রবার মাত্র এক হাজার ২০০টি কনটেইনার উঠানামা সম্ভব হয়েছে। শনিবার এই সংখ্যা আরও কমে গেছে। এদিন মাত্র ৪০০ কনটেইনার উঠানামা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে রপ্তানি পণ্য পরিবহন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ধর্মঘটের কারণে কারখানা থেকে যেমন ডিপোতে রপ্তানি পণ্য আনা যাচ্ছে না, তেমনি ডিপোতে আটকে থাকা পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেয়া যাচ্ছে না।
বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার থেকে ১৯টি আইসিডিতে কোনো কাজই হয়নি। একারণে কনটেইনার উঠানামার কাজ ব্যাহত হয়েছে।’
পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির সংকট কাটিয়ে পোশাক রপ্তানিতে প্রাণ ফিরছিল। অর্ডার বাড়ার সুযোগ আসছে। এই ধরনের কর্মসূচির কারণে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু করে পরিবহন সংগঠনগুলো। কর্মসূচির প্রথম দিন থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে শুরু করে। তবে শুক্রবার খুব বেশি প্রভাব না পড়লেও শনিবার থেকে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি পণ্য খালাসের কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।
বন্দর থেকে জানা গেছে, রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি পণ্যের বড় অংশ পোশাকশিল্পের কাঁচামাল। এই কাঁচামাল খালাস না হওয়ার অর্থ পোশাক প্রস্তুতকারকদের নির্ধারিত সময়ে পণ্য উৎপাদনে যেতে না পারা। ফলে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ার প্রভাব পড়ছে রপ্তানিতে।
পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সেপ্টেম্বরে ৩৫ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এক কনটেইনার পণ্যও রপ্তানি হয়নি। বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশন সেবার ১৫ দফা দাবিতে ওই কর্মবিরতি পালন করেছিল।