নারায়ণগঞ্জ থেকে নেত্রকোণা যাবেন শাহ আলম। সকাল পৌনে ১০টায় বাসা থেকে বের হন তিনি। বাস বন্ধ। প্রায় ঘণ্টাখানেক হেঁটে পৌঁছান নারায়ণগঞ্জের কালীবাজার মোড়ে। সেখান থেকে আবার হেঁটে স্টেশনে।
সেখান থেকে একটি ট্রেনে বেলা সাড়ে ১১টায় এসে পৌঁছলেন কমলাপুরে। অপেক্ষা করছিলেন টিকিটের। কাউন্টার থেকে জানানো হয়, টিকিট শেষ। তাই দীর্ঘ যাত্রায় দাঁড়িয়েই যেতে হবে তাকে।
এই পথ আসতে ভোগান্তি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে শাহ আলম একবাক্যে বললেন, ‘জনগণের কথা কেউ ভাবে না।’
টাঙ্গাইল থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিতে ঢাকায় এসেছেন সাইদুল ইসলাম। আসা আর যাওয়ার ভরসা রেল। লোকাল ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়ানো সাইদুলের বক্তব্য একই- ‘এভাবে জনগণকে জিম্মি করে সব সময় বাসমালিকরা ফায়দা নিচ্ছে।’
‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহনের জ্বালানি খরচ বাড়বে। এটা সরকারও জানে। তার পরও কেন বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণ না করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো, সেটিই প্রশ্ন।’
কমলাপুর হয়ে রেলে যারা যাতায়াত করেন, তাদের অন্তত দুইবার টিকিট চেকিংয়ের সম্মুখীন হতে হয়। একবার কমলাপুরে প্রবেশের সময়, আরেকবার স্টেশন থেকে বের হতে। কিন্তু শুক্রবার থেকে এমন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি যাত্রীদের।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির বিপরীতে বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণ না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে বাস।
শুক্রবার ২৬টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা ছিল ঢাকায়। ফলে সারা দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসা ও যাওয়ার অন্যতম বাহন ছিল রেল।
সেই চাপ সামলাতে সেদিন টিকিট চেকিং বন্ধ রাখা হয়। এই চাপ শনিবার ছিল না। তবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে এখন ভরসা রেল।
কমলাপুরে কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীদের ছিল ছোট ছোট জটলা। অনেকে সে জটলা এড়াতে স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটতে সহযোগিতা নিচ্ছিলেন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষকের।
ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষকদের বক্তব্য, শুক্রবার চাপ সামলাতে যাত্রীরা যাতে সহজে টিকিট পেতে পারেন তার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে তাদের। রোববারও বেশ ভিড় ছিল সকাল থেকে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আফছার উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিপরীতে আমাদের এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। রেলের ভাড়া আগেরটাই আছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। সরকার যদি মনে করে টিকিটের দাম বাড়াবে, তাহলে করতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
আফছার উদ্দিন বলেন, ‘বাস না চলায় রেলে বিনা টিকিটে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। যারা বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর আসছেন, তাদের বেশির ভাগেরই টিকিট নেই। আমাদের পক্ষ থেকেও বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।’