বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অর্ধেক তার সেতু, অর্ধেক তার সাঁকো

  •    
  • ৬ নভেম্বর, ২০২১ ১১:৫৭

মদনপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৭ লাখ টাকায় নির্মিত সেতুর এক পাশের কিছু অংশ পানির ওপরে রয়েছে। অধিকাংশ অংশের কোনো অস্তিত্বই নেই। আর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরপদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের খালে প্রায় ২৮ লাখ টাকায় নির্মিত সেতুটি মাঝ বরাবর দেবে গেছে।

ভোলার দৌলতখান উপজেলায় মেঘনার তীরবর্তী মদনপুরে অর্ধকোটির বেশি টাকায় নির্মাণ করা হয়েছিল দুটি সেতু। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নির্মিত সেতুগুলো গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় পানির স্রোতে ভেঙে পড়ে।

এরপর এক বছর পার হলেও সেতু সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। স্থানীয়রা ভাঙা সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে পারাপার হচ্ছেন।

সেতু ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ইউনিয়নের ২ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২ হাজার মানুষ।

মদনপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৭ লাখ টাকায় নির্মিত সেতুর এক পাশের কিছুটা অংশ পানির ওপরে রয়েছে। অধিকাংশ অংশের কোনো অস্তিত্বই নেই। আর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরপদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন খালে প্রায় ২৮ লাখ টাকায় নির্মিত সেতুটি মাঝ বরাবর দেবে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, নির্মাণের তিন মাস পার না হতেই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় ভেঙে যায় সেতু দুটি। তবে এত দিনেও সেতু দুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

মদনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, গুরুত্বপূর্ণ সেতু দুটি ভেঙে যাওয়ায় নিজ উদ্যোগে তারা সেতুর ওপর সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছেন। কষ্টকর হলেও এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।

আরেক বাসিন্দা আকবর হোসেন জানান, তাদের চরে অনেক ফসল হয়। ফসল বিক্রির জন্য তাদের নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়। নৌকা দিয়ে অন্য পাশে নেয়া লাগে। আর গবাদি পশু পার করা হয় খালে নামিয়ে।

তিনি বলেন, ‘ঠিকমতো না করায় আইজ ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করতে পারছি না। যারা এটি করছে তারা সরকারি টাকা নষ্ট করেছে।’

৬ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সবার দাবির কারণে খালের ওপর হাক্কা (সাঁকো) থেকে ব্রিজ করছে সরকার। কিন্তু কইরা কী লাভ হইছে? পানির চাপে ব্রিজ ভাইঙ্গা গেছে।

‘এহন ব্রিজের ওপর হাক্কা দিয়া চলাফেরা করতে হয়। এই হাক্কা দিয়া চলাফেরার সময় প্রতিনিয়ত অনেক পোলাপান পইড়া হাত-পা ভাইঙ্গা যায়; মাথা ফাইটা যায়।’

ফুলবানু নামের একজন বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা ব্রিজ চাইছি; হেরা দিছেও। তয় কন্টোকটারের (ঠিকাদার) চুরির লাইগা আমাগো এই কষ্ট। এই হাক্কা দিয়া ভালো মানুষই যাইতে পারে না। আমাগো গ্রামের কেউর অসুখ হইলে হেরে লইয়া হাসপাতাল যাইতে বেমালা (চরম) কষ্ট হয়।’

২ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ মাল বলেন, ‘গেছে বার বইন্নায় রাস্তাঘাটের লগে বড় খালের ওপর এই ব্রিজটাও ভাইঙ্গা গেছে। এলাকার মাইনসে সুপারিগাছ ও বাঁশ দিয়া হাক্কা বানাইছে, হেইডাও গাঙ্গের হোতে (স্রোতে) লইয়া গেছে। আমরা অনেক কষ্টে আছি।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু জানান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের বড় খালের ওপর নির্মিত সেতুটি দৌলতখান উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে করা হয়েছে। আর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সেতুটি করা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অর্থায়নে। সেতু দুটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন।এ বিষয়ে দৌলতখান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

দৌলতখান উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) এইচ এম আনসার আলী জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অর্থায়নে ২৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকায় মদনপুর ইউনিয়নের চরপদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন খালের ওপর ৩৪ ফুটের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি সংস্কারের জন্য গত সপ্তাহে ইউএনওকে জানানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ পেলে সেতুটি ফের নির্মাণ করা হবে।তিনি বলেন, ‘যখন এই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল তখন নদী অনেক দূরে ছিল। গত ২-৩ বছরে মেঘনার ভাঙনে নদী কাছে চলে এসেছে। অনেকের ঘরবাড়ি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তাই নতুন করে ব্রিজের স্থান নির্ধারণ করে নির্মাণ করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর