বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশ অচল, সাপ্তাহিক ছুটি কাটাচ্ছে বিআরটিএ

  •    
  • ৫ নভেম্বর, ২০২১ ২০:১৪

বাস চলবে না, যাত্রী ভোগান্তি হতে যাচ্ছে- বিষয়টি জানার পরেও কেন তিন দিন পর রোববার বৈঠক ডাকলেন, এমন প্রশ্নে পরিবহন খাতে তদারক সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার তো ছুটি। আর তারা যে বাস বন্ধ করে দেবে, এ তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। যে কারণে আমরা বৈঠক রোববার ফিক্সড করেছি।’

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় পরিবহনমালিকরা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিলেও ভাড়া পুনর্নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি কাটাচ্ছে।

দুই দিনের ছুটির কারণে রোববার বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে নিউজবাংলার কাছে স্বীকার করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।

শুক্রবার সকাল থেকে ট্রাক ও বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলাচলে ভোগান্তির পাশাপাশি পণ্য সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থাতেও বিআরটিএ বৈঠকের সময় এগিয়ে আনতে রাজি নয়।

গত বুধবার রাতে ডিজেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বা ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকালেই পণ্যবাহী গাড়ির মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন ধর্মঘটে যাওয়ার ডাক দেয়। জেলায় জেলায় বাস না চালানোর ঘোষণাও দেয়া হয়।

কেন্দ্রীয়ভাবে বাসমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি বিআরটিএর কাছে ভাড়া যৌক্তিক হারে বাড়াতে আবেদন করে। সে আবেদনে লেখা ছিল, জেলায় জেলায় বাসমালিকরা বলছেন, বিদ্যমান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করলে তাদের লোকসান হবে। তাই তারা বাস চালাবেন না।

এরপরও বিআরটিএর পক্ষ থেকে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির সভা রোববার ডাকার কথা জানানো হয়।

বাস বন্ধ থাকায় পণ্যবাহী গাড়িতে এভাবে যাত্রীদের চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব গাড়ি চলাচলে বিভিন্ন এলাকায় বাধা দিয়েছেন শ্রমিকরা

শুক্রবার দিনভর সারা দেশে ভোগান্তির পরেও বিআরটিএ সেই বৈঠক এগিয়ে আনেনি। চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘বৈঠকের নোটিশ করা হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করা সম্ভব নয়।’

বাস চলবে না, যাত্রী ভোগান্তি হতে যাচ্ছে- বিষয়টি জানার পরেও কেন তিন দিন পর রোববার বৈঠক ডাকলেন, এমন প্রশ্নে পরিবহন খাতে তদারক সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সময় আবেদন পেয়েছি। এরপর আমাদের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে করতে রাত হয়েছে। সবার সম্মতিক্রমেই মিটিংটি রোববার ঠিক করা হয়েছে।’

রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর কার্যালয়

জরুরি পরিস্থিতিতেও কেন আপনারা শুক্র বা শনিবার বৈঠকের কথা চিন্তা করলেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার তো ছুটি। আর তারা যে বাস বন্ধ করে দেবে, এ তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। যে কারণে আমরা বৈঠক রোববার ফিক্সড করেছি।’

অথচ বৃহস্পতিবার বিকেলেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বাসমালিকরা ঘোষণা দেন শুক্রবার সকাল থেকে তারা ধর্মঘটে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি রাতে ঘোষণা হলেও জেলায় জেলায় দুপুর ও বিকেলের আগেই তা ঘোষণা হয়ে যায়। অর্থাৎ বিআরটিএর স্থানীয় অফিস থেকে সেসব তথ্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়নি।

পরিবহন ধর্মঘট এখন হচ্ছে, মানুষ চরম ভোগান্তিতে। এ অবস্থায় বৈঠকটা কেন এগিয়ে আনা যাচ্ছে না- এমন প্রশ্নে বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাসমালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মিটিংয়ের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।’

তিনি আবার বলেন, ‘রোববারের আগে মিটিং হবে না। কারণ, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে নোটিশ হয়ে গেছে।’

বাস ধর্মঘটের মধ্যে রাজধানীতে বিআরটিসির অল্প কিছু বাস চলছে। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় একটি বাস আসার পর এমন ভিড় দেখা যায়

এমন জরুরি পরিস্থিতিতে বিআরটিএর এভাবে ছুটি কাটানোকে দুঃখজনক বলেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল হক।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন যদি তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়, তাহলে আগে হলো না কেন? তার মানে আমরা এ ধরনের সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিই জানি না।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তির দায় বিআরটিএ এড়াতে পারে না। যারা দায়িত্বে আছেন, তারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে এর ফল জনগণকেই ভোগ করতে হয়। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বাস না নামানোর পেছনে মালিকদের যুক্তি হচ্ছে, প্রতি লিটার ডিজেলে ১৫ টাকা করে বাড়তি টাকা দিলেও আগের হারে ভাড়া নিলে তাদের কোনো লাভ থাকবে না, উল্টো লোকসান। এ অবস্থায় তারা কেন এটি মেনে নেবেন।

তবে পরিবহনমালিকদের এই ধর্মঘটকে ‘দ্বৈতনীতি’ বলছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, ‘একদিকে তারা আলোচনায় বসতে চাচ্ছে। অন্যদিকে তার ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। তাদের সম্মতি নিয়ে মিটিং ডাকার পরও কেন তারা ধর্মঘটের ডাক দিল? এমনটি করা তাদের ঠিক হচ্ছে না।’

তিন দিন কেন বাসমালিকরা লোকসান মেনে নেবেন- সেই প্রশ্নের জবাব অবশ্য বিআরটিএর পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।

চলমান পরিস্থিতি ‘অসহনীয়’ আখ্যা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও। তিনি ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সেই আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না পরিবহনমালিকরা।

এ বিভাগের আরো খবর