ভোটের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে দরদ দেখালেও বিপদের সময় তাদের পাশে নেই কেন সেটি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ‘ভোট আসলে হিন্দুদের কাছে গিয়ে আমরা যারা মায়াকান্না করি, হিন্দু দরদ দেখাই; হিন্দুদের বিপদের সময় আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি কেন? এ প্রশ্ন আপনাদের প্রত্যেকের বিবেকের কাছে আমি রেখে গেলাম।’
নোয়াখালীর চৌমুহনীতে হিন্দুদের ওপর হামলার সময় সেখানকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল কি না এমন প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। এ ঘটনায় নোয়াখালীর সন্তান হিসেবে নিজে দুঃখ ও লজ্জা পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ভার্চুয়ালি হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা চৌমুহনীতে ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি।
নোয়াখালীর দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘চৌমুহনীতে গত ১২ বছর এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। নোয়াখালীতে পূজামণ্ডপে কোনো হামলা হয়নি। এবারের তাণ্ডবটা কেন হলো, কীভাবে হলো, আমি সেখানকার নেতৃবৃন্দকেই সেটা প্রশ্ন রাখতে চাই। কুমিল্লায় যখন এ ঘটনা ঘটেছে, এতগুলো পূজামণ্ডপে, চৌমুহনীতে আপনারা কেন সতর্ক হলেন না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের এত বড় সংগঠন এত কর্মিবাহিনী। কুমিল্লার ঘটনার পরদিন চৌমুহনীর ঘটনা ঘটেছে। যদি কঠোরভাবে সতর্কতা আপনারা অবলম্বন করতেন, আওয়ামী লীগ সতর্ক থাকলে এদের এত দুঃসাহস হতো, এ রকম তাণ্ডব চৌমুহনীতে তারা করে গেল।’
সবকিছুতে প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকা ঠিক না বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা।
দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের একটি মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নে ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় এবং পরদিন দুপুরে একই উপজেলার চৌমুহনী পৌর এলাকায় ১১টি পূজামণ্ডপে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। লুটপাট করা হয় মন্দিরের আসবাব, স্বর্ণালংকার, ভাঙচুর করা হয় প্রতিমা।
হামলায় প্রাণ হারান প্রান্ত চন্দ্র দাশ নামে এক যুবক, আতঙ্কে হৃদরোগে যতন সাহা নামে আরেকজনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে যতনের পরিবারের অভিযোগ, তিনিও হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
নোয়াখালীতে সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে সাতটি। এসব মামলায় এ পর্যন্ত মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সেখানকার দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সেখানে দুটি প্রাণহানি ঘটল। আমাদের বিবেক কি আলোড়িত হচ্ছে না। আমি বলব, আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা আছে। সেটা নিজেরা খুঁজে বের করুন। এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে আপনাদের সতর্কতার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
‘এতগুলো মণ্ডপ চৌমুহনীতে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিল, আপনারা কি নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। একটা প্রতিরোধও তো হলো না, এটা নোয়াখালীর সন্তান হিসেবে আমাকে দুঃখ দিয়েছে। আমি নিজে লজ্জা পেয়েছি। কী জবাব দেব আজকে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ।’
ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস
বেগমগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ আপনাদের সঙ্গে আছে। আপনাদের যে ক্ষতিগ্রস্ত পূজামণ্ডপ, মন্দির ও ঘরবাড়ি যেগুলো পুড়ে গেছে, সেগুলো সরকারিভাবে করে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের আশ্বস্ত করছি। মন্দিরগুলোর কোনো কোনোটি পুনর্নির্মাণ, যেগুলোর সংস্কার করা দরকার, সংস্কার এবং যারা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষতিপূরণের জন্য সবকিছু করা হবে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার মুখে নয়, অন্তরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে। শেখ হাসিনা আপনাদের আপনজন। এ ঘটনায় সরকার আপনাদের সঙ্গে আছেন, এ কথা আপনাদের আশ্বস্ত করছি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্দোলনে, নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। দুটো কাজ তারা করতে চেয়েছে। এ অপকর্মের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যে সমর্থন, এই সমর্থনের দুর্গে আঘাত হানতে চেয়েছে। আর একটি প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বিরাজমান সুসম্পর্কে ফাটল ধরানোর জন্য সুগভীর চক্রান্ত বলে আমি মনে করি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন আসছে, তারা ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছে, ১/১১ সৃষ্টির দুঃস্বপ্ন দেখছে। দেশকে অশান্ত করার জন্য এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির নির্ভরযোগ্য অপশক্তি হচ্ছে বিএনপি। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্ত হয়।