দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লার মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা ইকবাল হোসেন মানসিক ভারসাম্যহীন নন বলে দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা বলছে, ইকবাল সম্পূর্ণ সুস্থ ও সুচতুর।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) খান মুহাম্মদ রেজোয়ান মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘ইকবাল মানসিক ভারসাম্যহীন নন। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও সুচতুর। কোনো কিছুর প্রতি তার প্রবল বিশ্বাস আছে। ১১ দিনের রিমান্ডে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, স্বাভাবিক আচরণ করেছেন।
‘এ ঘটনা স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কি না সে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি একাধিক ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।
কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর চলে ভাঙচুরনানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে চলে ব্যাপক ভাঙচুর, আক্রান্ত হয় নগরীর আরও কয়েকটি পূজামণ্ডপ। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।
যেখান থেকে সাম্প্রদায়িক এই সহিংসতার শুরু সেই নানুয়ার দিঘির পাড়ের মণ্ডপে কীভাবে উত্তেজনার শুরু এবং মূল মণ্ডপের বাইরে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এলো, সে বিষয়ে টানা অনুসন্ধান চালায় নিউজবাংলা।
- আরও পড়ুন: কুমিল্লায় মণ্ডপে কোরআন রাখল কারা
নিউজবাংলার হাতে আসা বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সহিংসতার আগের রাতে শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারের মসজিদ থেকে একটি কোরআন শরিফ নিয়ে পাশের নানুয়ার দিঘির পাড়ের মণ্ডপের উদ্দেশে রওনা হন ইকবাল।
মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার পর হনুমানের গদা হাতে হেঁটে যাওয়া ইকবালএর প্রায় এক ঘণ্টা পরের আরেকটি ফুটেজে মণ্ডপে কোরআন রেখে হনুমানের গদা হাতে ইকবালকে ফিরতে দেখা যায়।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেন, কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের যে অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়া যায়, সেখানে শুরুতে প্রবেশে ব্যর্থ হয়েছিলেন ইকবাল। এরপর তিনি গিয়েছিলেন ওই মণ্ডপ থেকে কিছুটা দূরে দিগম্বরীতলার গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরে।
এই মন্দিরের তালা ভাঙতে ব্যর্থ হন ইকবালমন্দিরটির গেটের তালা লাঠি দিয়ে ভাঙতে ব্যর্থ হন ইকবাল। এরপর আবার ফিরে আসেন নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে। এ সময় পূজাসংশ্লিষ্টদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তিনি কোরআন শরিফটি হনুমানের ওপর রাখেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর কোরআন রেখে হনুমানের গদা হাতে ফিরে আসেন ইকবাল।
৩০ বছর বয়সী ইকবাল হোসেনের বাড়ি কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকায়। ঘটনার পর থেকেই তাকে খুঁজছিল পুলিশ। এরপর ইকবালকে গত ২১ অক্টোবর রাতে কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে কক্সবাজারের সুগন্ধা এলাকায় ইকবালের তোলা ছবিগ্রেপ্তারের পর থেকে পরিবারসহ অনেকেই দাবি করেন, ইকবাল মানসিক ভারসাম্যহীন।
কুমিল্লায় কোরআন অবমাননা, পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও খুনের ঘটনায় ১২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি, আইসিটি আইনের দুটি ও মন্দিরে ভাঙচুরের দুটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
২৩ অক্টোবর ইকবালকে সাত দিনের রিমান্ডে পায় সিআইডি। এরপর আরও পাঁচ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। মঙ্গলবার তার ১২ দিনের রিমান্ড শেষ হবে।
বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) খান মুহাম্মদ রেজোয়ান জানান, ১১ দিনের রিমান্ডে ইকবালকে তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেখান থেকেই তারা তার সুস্থতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।