× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Iqbal also went to a temple to keep the Quran
google_news print-icon

কোরআন রাখতে আরেকটি মন্দিরেও গিয়েছিলেন ইকবাল

কোরআন-রাখতে-আরেকটি-মন্দিরেও-গিয়েছিলেন-ইকবাল
নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে কোরআন রাখায় অভিযুক্ত ইকবাল ওই রাতে কিছুটা দূরের এই গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরেও গিয়েছিলেন। ছবি: নিউজবাংলা
তদন্তসংশ্লিষ্টরা নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র মণ্ডপে কোরআন রাখতে ইকবালকে কাজে লাগিয়েছে। নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপটিতে শুরুতে ইকবাল গেলেও লোকজন দেখে ফিরে আসেন। এরপর তিনি যান কিছুটা দূরের গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরে। সেখানে গেটের তালা ভাঙতে ব্যর্থ হন ইকবাল।

কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের যে অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়া যায়, সেখানে শুরুতে প্রবেশে ব্যর্থ হয়েছিলেন প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন। এরপর তিনি গিয়েছিলেন ওই মণ্ডপ থেকে কিছুটা দূরে দিগম্বরীতলার গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরে।

মন্দিরটির গেটের তালা লাঠি দিয়ে ভাঙতে ব্যর্থ হন ইকবাল। এরপর আবার ফিরে আসেন নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে। এ সময় পূজাসংশ্লিষ্টদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তিনি কোরআন শরিফটি হনুমানের ওপর রাখেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর কোরআন রেখে হনুমানের গদা হাতে ফিরে আসেন ইকবাল।

ওই এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ এবং ইকবালের সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কোরআন রাখতে আরেকটি মন্দিরেও গিয়েছিলেন ইকবাল
প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন মাজারের মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে রওনা হন মণ্ডপের দিকে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেয়া ছবি।

নিউজবাংলার হাতে আসা সিসিটিভির নতুন ফুটেজেও বিষয়টি দেখা গেছে। এসব ফুটেজে পরিষ্কার ওই মণ্ডপের পাশের শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারের মসজিদে নিয়মিত যেতেন ইকবাল। সেখানকার অনেকে তার পরিচিত।

শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারটি থেকে আলোচিত মণ্ডপে হেঁটে যেতে সময় লাগে ২ থেকে ৩ মিনিট। দারোগাবাড়ী মাজার নামে কুমিল্লাবাসীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিতি রয়েছে মাজারটির। আর এই মাজারটি থেকে দিগম্বরীতলার গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরে হেঁটে যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ মিনিট।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র মণ্ডপে কোরআন রাখতে ইকবালকে কাজে লাগিয়েছে। নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপটিই ছিল তাদের লক্ষ্য। তবে ইকবাল যখন মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে সেখানে যান, তখন মণ্ডপ পুরোপুরি জনশূন্য হয়নি। এ জন্য তিনি চলে যান মণ্ডপ থেকে কিছুটা দূরের গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরে। ওই মন্দিরটির গেটের তালা ভাঙতে তিনি একটি লাঠিও জোগাড় করেন। তবে সেটি তালা ভাঙার মতো মজবুত না হওয়ায় ব্যর্থ হন ইকবাল। এরপর আবার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে যান।

নানুয়ার দিঘির পাড়ের মণ্ডপে কীভাবে উত্তেজনার শুরু এবং মূল মণ্ডপের বাইরে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এলো, সে বিষয়ে মঙ্গলবার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।

কোরআন রাখতে আরেকটি মন্দিরেও গিয়েছিলেন ইকবাল
এই মন্দিরের তালা ভাঙতে ব্যর্থ হন ইকবাল

পূজার আয়োজক, এলাকাবাসী, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার আগের রাত আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজাসংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছিল। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারী ভক্ত মণ্ডপে এসে হনুমানের মূর্তিতে প্রথম কোরআন শরিফটি দেখতে পান।

পূজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন দিঘির পাড়ের বাসিন্দা তরুণ কান্তি মোদক। স্থানীয়রা তাকে মিথুন নামে চেনেন। মিথুন নিউজবাংলাকে জানান, রাত আড়াইটা পর্যন্ত তিনি মণ্ডপে ছিলেন। তখন পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। এরপর তিনি নৈশপ্রহরী শাহিনের কাছে মণ্ডপের নিরাপত্তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় ফেরেন। সহিংসতার পর নৈশপ্রহরী শাহিনকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিউজবাংলার হাতে আসা নতুন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, কোরআন নেয়ার আগের রাতেও মাজারের মসজিদে গিয়েছিলেন ইকবাল। তখন মধ্যরাত পেরিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় ১২ অক্টোবর। রাত ৩টা ৪২ মিনিটে মসজিদে যান ইকবাল।

এই ফুটেজে মসজিদের বারান্দায় হাঁটতে দেখা যায় ইকবালকে।

কোরআন রাখতে আরেকটি মন্দিরেও গিয়েছিলেন ইকবাল
মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে মণ্ডপে রাখায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল

পরের ফুটেজটি মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটের। মসজিদের বারান্দায় দুজনকে বসে থাকতে দেখা যায়। রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে ইকবাল এসে ওই দুজনের সঙ্গে বসে কথা বলেন। এই দুজন হলেন মাজারের সহকারী খাদেম হিসেবে পরিচিত হুমায়ুন আহমেদ ও ফয়সাল আহমেদ।

ঠিক ১১টায় তিনজনই সেখান থেকে উঠে পড়েন। ইকবাল পলাতক থাকলেও মসজিদে তার সঙ্গে কথা বলা হুমায়ুন ও ফয়সালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ওই রাত ২টা ১২ মিনিটের একটি ফুটেজে ইকবালকে মসজিদের বারান্দায় কোরআন শরিফ রাখার শেলফের সামনে দেখা যায়। সে সময় বারান্দায় একজন নামাজ পড়ছিলেন এবং একজন শুয়ে ছিলেন। ইকবাল একটি কোরআন শরিফ নিয়ে বারান্দায় বসেন। রাত ২টা ১৪ মিনিটে কোরআনটি বারান্দায় রেখে খালি হাতে তিনি উঠে পড়েন।

এর ৩ মিনিট পর ইকবাল আবার ফিরে এসে কোরআন তুলে নিয়ে বারান্দায় ঘোরাঘুরি করেন। এ সময় নামাজরত সেই ব্যক্তি সেখানে ছিলেন না।

এর পরের ফুটেজটি মাজারের পুকুরের পূর্ব পাড়ের একটি বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার। উন্নত প্রযুক্তির এই সিসিটিভি ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের। ক্যামেরাটি প্রতি ৪ মিনিট অন্তর মুভ করে।

কোরআন রাখতে আরেকটি মন্দিরেও গিয়েছিলেন ইকবাল
এই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে মসজিদ থেকে ইকবালের কোরআন নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য

এতে দেখা যায়, ডান হাতে কোরআন নিয়ে মসজিদের পুকুরের পাড় দিয়ে ইকবাল হেঁটে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

এর পরের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ইকবালের বাম হাতে রয়েছে কোরআনটি। এলাকার একটি রাস্তা দিয়ে তিনি হেঁটে যাচ্ছেন।

পরের ক্যামেরার ফুটেজে ইকবালকে জগন্নাথপুর মন্দির রোড ধরে হেঁটে যেতে দেখা যায়। একপর্যায়ে তিনি গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরের সামনে প্রায় ২৭ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার ডান হাতে দেখা যায় ছোট একটি লাঠি এবং বাম হাতে কোরআন। তদন্তকারীরা বলছেন, এই লাঠিটি দিয়ে মন্দিরের গেটের তালা ভাঙতে ব্যর্থ হন ইকবাল।

এর পরের ফুটেজে তাকে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের চকবাজার শাখার দিকে যেতে এবং পরেরটিতে পূবালী ব্যাংক মোড়ের পাশের গলিতে ঢোকার মুখে দাঁড়াতে দেখা যায়। এই ফুটেজে সময় দেখা যাচ্ছিল রাত ২টা ৪২ মিনিট।

পরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ইকবালকে একজন নৈশপ্রহরী ও আরেক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সে সময়ও তার হাতে কোরআন শরিফ দেখা যায়।

তারপর ইকবালকে দেখা যায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সামনে দিয়ে যেতে। এর পরের ক্যামেরার ফুটেজে আবারও তাকে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চকবাজার শাখার দিকে যেতে দেখা যায়। অন্য ক্যামেরায় গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরের সামনে দিয়ে যেতে দেখা যায় এই যুবককে।

ইকবালকে পরের ফুটেজে এলাকার আরেকটি রাস্তায় কোরআন হাতে হাঁটতে দেখা যায়। পরেরটি ছিল জগন্নাথ মন্দিরের সামনের রাস্তার।

এরপর কোরআন হাতে ইকবালের আর কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

তবে মাজার কানেক্টিং রোডে ৩টা ১২ মিনিটের ফুটেজে দেখা যায়, মণ্ডপে কোরআন রেখে গদা হাতে ফিরে আসছেন ইকবাল। এই ফুটেজটি সব মিলিয়ে ২ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের।

কোরআন রাখতে আরেকটি মন্দিরেও গিয়েছিলেন ইকবাল

মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার পর হনুমানের গদা হাতে হেঁটে যাওয়া ইকবাল

এরপর রাত ৩টা ১৩ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে ওই রাস্তায় একজনকে দেখা গেছে, যাকে ইকরাম হোসেন বলে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, মণ্ডপে কোরআন রাখায় যে চক্রটি জড়িত, ইকবাল তাদের একজন। তিনি কোরআন রাখার পর ভোরে আরেক অভিযুক্ত ইকরাম হোসেন ঘটনাস্থল থেকে ৯৯৯-এ কল করেন। তারপর ওসি আনওয়ারুল আজিম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি কোরআন শরিফটি উদ্ধারের পাশাপাশি ইকরামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যান।

কোরআন রাখতে আরেকটি মন্দিরেও গিয়েছিলেন ইকবাল
কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর চলে ভাঙচুর

নিউজবাংলার হাতে আসা শেষ ফুটেজটি মসজিদের বারান্দার। ইকবাল রাত ৩টা ২২ মিনিটে আবার মসজিদে ফিরে যান। তবে তখন তার হাতে গদাটি ছিল না।

এসব ফুটেজ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ নিউজবাংলাকে এর আগে আরেকটি ফুটেজের প্রসঙ্গে বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনাটির পেছনে কারা দায়ী, তা জানতে আমরা সবকিছু নিখুঁতভাবে মনিটর করছি। ঘটনার আগের রাতে কুমিল্লা শহরে যতগুলো সিসিটিভি ক্যামেরায় ইকবালকে দেখা গেছে, সব আমরা সংগ্রহ করেছি। আমরা সব ক্যামেরার পুরো হার্ডড্রাইভ নিয়ে এসেছি, যাতে কেউ কোনো ফুটেজ ডিলিট করে দিলেও আমরা উদ্ধার করতে পারি। আমাদের এক্সপার্ট ফরেনসিক টিম সিসিটিভি ফুটেজগুলো নিয়ে কাজ করেছে।’

আরও পড়ুন:
চৌমুহনীতে সাম্প্রদায়িক হামলা: গ্রেপ্তার আরও ৯
উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ধর্মীয় বক্তা গ্রেপ্তার
ইকবালের ভিডিওতে সিসিক্যাম ঘুরল কেন?
হোতা চিহ্নিত, গ্রেপ্তারে খুলবে জট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পীরগঞ্জে সহিংসতা: ৩৭ আসামি রিমান্ডে

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Al Amin has cheated various businesses by killing customers money
সিরাজগঞ্জে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় অর্থ জালিয়াতি

ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা মেরে ম্যানেজার আল-আমিনের নানা ব্যবসা

ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা মেরে ম্যানেজার আল-আমিনের নানা ব্যবসা জনতা ব্যাংক তামাই শাখার সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপক আল-আমিন। ছবি: নিউজবাংলা
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজার আল-আমিনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর সেসব টাকায় আল-আমিন ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ম্যানেজার আল-আমিনের জালিয়াতির নতুন নতুন খবর বেরিয়ে আসছে। ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা নয়-ছয় করে এই কর্মকর্তা ব্যক্তি জীবনে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন। চাকরির আড়ালে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উদ্যোগে তদন্ত চলছে। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর এভাবে ব্যাংকের বিপুল টাকা সরিয়ে নিয়ে চাকরির আড়ালে নিজের ব্যবসা ফেঁদেছেন ম্যানেজার আল-আমিন। ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।

সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

এদিকে জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল বুধবার সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে সোমবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই সদস্যের তদন্ত দলও তাদের মতো করে তদন্ত করছে।

ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের বিপুল পরিমাণ টাকার হদিস মিলছে না- এমন খবরে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার হিসাবধারী গ্রাহকরাও উৎকণ্ঠিত। তারা নিজ নিজ হিসাবের টাকার খবর জানতে ভিড় করছেন ব্যাংক কার্যালয়ে।

ইতোমধ্যে গ্রাহকদের সিসি একাউন্টসহ বিভিন্ন হিসাব থেকে বড় অংকের টাকা নয়-ছয় হওয়ার শঙ্কা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তবে এখনই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাচ্ছেন না তদন্তকারী দলের সদস্যরা।

জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে জনতা ব্যাংক তামাই শাখা থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে রোববার রাতে গ্রেপ্তার হন ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তা। এর আগে অভিযুক্তরা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে ২০ লাখ টাকা ভল্টে ফেরত দিয়েছেন- এমন তথ্য অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনুসন্ধানে গিয়ে ব্যবস্থাপক আল-আমিনের পার্টনারশিপে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। আল-আমিনের বসবাস সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি মতি সাহেবের ঘাট মহল্লায়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ছয়-মাস ধরে ব্যবস্থাপক আল-আমিন তার বসতবাড়ির পাশে আবুল পাটোয়ারীর পাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনের কারখানা। ‘এম আর ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের কারখানাটিতে পিভিসি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল তৈরি হয়।

এই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের বড়বাজার পাতিলাপট্টিতে পুরাতন হিরাঝিল মার্কেটে ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’ নামে ইলেক্ট্রিক দোকানের প্রোপ্রাইটার হিসেবে ব্যবসায় করছেন আল-আমিনের ভাতিজা মঈন উদ্দিন পলাশ। ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’-এর আবরার নামটি আল-আমিনের ছোট ছেলের।

আল-আমিনের ব্যবসার গণ্ডি ছড়িয়েছে রাজধানীতেও। ঢাকার নবাবপুর ও মিরপুরে এম আর এন্টারপ্রাইজ নামে ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর দুটি দোকান রয়েছে তার। গাইবান্ধায় যমুনা নদী তীর রক্ষাবাঁধের কাজে সিসি ব্লক তৈরি প্রকল্পেও আল-আমিন টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের হোসেনপুর মোল্লাবাড়ি মহল্লার মিজানুর রহমানের সঙ্গে পার্টনারশিপে এসব ব্যবসা কারখানা ও দোকানপাট পরিচালনা করেন ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তাদের ব্যবসায়িক অফিস রয়েছে।

মঈন উদ্দিন পলাশ অবশ্য ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিকানা নিজের বলে দাবি বলেন, ইলেক্ট্রিক তার উৎপাদন কারখানাটি তার চাচার নয়, মিজানুর রহমানের।

অপরদিকে আল-আমিনের বন্ধু মিজান বলেন, ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিক আমি। আল-আমিন বা তার ভাতিজা পলাশ নয়।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক যৌথভাবে ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন ও মিজানুর রহমান।

বুধবার দুপুরে আল-আমিনের ধানবান্ধি মহল্লার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী রুনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিজানের সাথে আমার স্বামী আল-আমিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আছে। কিন্তু তার সাথে কোনো প্রকার অংশীদারত্বমূলক ব্যবসার কথা আমি জানেন না।’

একইসঙ্গে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, তার স্বামী আল-আমিন কারও খপ্পরে পড়ে এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন।

একই দিন সকালে বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে গিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী শামীম সেখের ছেলে সাদি সেখ বলেন, “এই ব্যাংকে ‘শামীম ব্রাদার্স’ ও ‘সাদি এগ্রো ফার্ম’ নামে আমাদের দুটি একাউন্ট আছে। এর মধ্যে শামীম ব্রাদার্স-এর হিসাবের ২৩ লাখ আর সাদি এগ্রো’র হিসাব থেকে ৩২ লাখ টাকা ডামি চেকে স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেয়া হয়েছে।”

মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরি নামীয় হিসাবধারী মোতালেব জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার হিসাবে ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন পাস করা আছে। আমি ২০২২ সালের পর ব্যাংকের এই শাখা থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করি নাই। ব্যাংকের এই অবস্থা জেনে হিসাবের প্রতিবেদন তুলে দেখা যায় যে, ৪৮ লাখ টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে।’

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার অনেক গ্রাহকেরই এমন অভিযোগ। শাহিন কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের সিসি হিসাব থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। তাঁত ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের ১৫ লাখ, চান টেক্সটাইলের চান মিয়া আকন্দের ১০ লাখ, হাজী আব্দুল্লাহ আকন্দের পাঁচ লাখসহ অনেক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা তাদের একাউন্ট থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ হাওলাতি টাকা নিয়েছেন শাখা ব্যবস্থাপক আল-আমিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, ‘২৪ মার্চ বিপদের কথা বলে স্বল্প সময়ে পরিশোধের আশ্বাসে ২০ লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন আল-আমিন। দুই লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি না জানিয়ে আমার ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। আর একই দিন সন্ধ্যায় ব্যবস্থাপক তার নামে আমার কাছ থেকে পিয়ন শহিদুল মারফত ১০ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নিয়েছেন।’

মোহাম্মদ আলী উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক হাজী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ব্যাংককে বিশ্বাস করে টাকা রাখি। সেই ব্যাংক যদি এরকম কাজ করে তাহলে আমরা যাব কোথায়?’

বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামছুল হক জানান, ম্যানেজার আল-আমিন বিভিন্ন সময় লুজ চেক ব্যবহার করে সিসি একাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছেন। তাতে স্বাক্ষরের মিল নেই, চেকের সিরিয়ালের পরম্পরা নেই।

ব্যাংকের ক্যাজ্যুয়াল পিয়ন শহিদুল বলেন, ‘ম্যানেজার স্যার বিভিন্ন সময়ে আমার নাম ব্যবহার করে আমার মাধ্যমে বিভিন্ন একাউন্টে টাকা জমা দিয়েছেন। টাকা উত্তোলনে তিনি আমার নাম লিখে দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি জানি না।’

জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ভল্টের ক্যাশ লিমিট ৭৫ লাখ টাকা। তাহলে সেই ভল্টে আত্মসাৎ করা পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকলো কীভাবে- এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত চলছে, তদন্তে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসবে। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করাই ভাল। তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’

প্রসঙ্গত, রোববার রাতে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া কার্যালয়ের ডিজিএম নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল-আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। পরদিন সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। পরে অভিযোগটি বিধি মোতাবেক সাধারণ ডায়েরি আকারে গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবনা অফিসে পাঠানো হয়।

দুদক সমন্বিত পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক বলেন, ‘অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও পড়ুন:
জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Customers of Janata Bank Tamai branch also have money
ক্যাশভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হিসাবে গরমিল

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’

জনতা ব্যাংক তামাই শাখার গ্রাহকদের টাকাও ‘হাওয়া’ আটকের পর সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় ব্যাংক ম্যানেজার আল আমিনসহ তিনজন। ছবি: নিউজবাংলা
ব্যাংকিং নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের মর্জিমাফিক কার্যক্রম চালিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আল আমিন। একে একে বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য। অনেক গ্রাহকের হিসাবের টাকাও তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে- তাহলে কি হিসাবে গরমিলের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকাই শেষ কথা নয়?

ব্যাংকিং নিয়মে নয়, নিজের বানানো নিয়মে ব্যাংকের কার্যক্রম চালাতেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন। নিজের ইচ্ছেমতো গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা দিতেন।

এদিকে ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হদিস এখনও মেলিনি।

বুধবার সকালে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকদের হিসাবে থাকা টাকা তাদের অজান্তে তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ক্যাশ ভল্টের ওই পরিমাণ টাকাই শেষ কথা নয়? গ্রাহকদের অজান্তে তাদের হিসাবে জমা বিপুল পরিমাণ টাকাও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে?

শাখাটিতে অবস্থানকালে সাংবাদিকদের কথা হয় তামাই বাজারের মেসার্স মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আব্দুল মোতালেব জোয়ারদারের সঙ্গে।

তিনি জানান, তার একটি ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন করা ছিল। তবে তিনি এখনও লোনটি উত্তোলন করেননি। অথচ তার ব্যাংক হিসাব ঘেটে দেখা যায় যে তিনি পুরো টাকাই উত্তোলন করেছেন। তার এই টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে তার সিরিয়ালের চেক ব্যবহার করা হয়নি। অন্য একটি চেকে ওই পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এমন ঘটনায় মোতালেব জোয়ারদার হতবাক! এ অবস্থায় তার করণীয় কী হতে পারে বুঝতে পারছেন না।

শুধু আব্দুল মোতালেব নন, আরও অনেক গ্রাহকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। একই এলাকার ব্যবসায়ী চান টেক্সটাইলের আকন্দের হিসাব থেকে তার অজান্তেই ১০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আল ফারুক স্টোরের শহিদুল ইসলামের ২৪ লাখ টাকার সিসি লোনের মধ্যে তার অজান্তেই চেক জালিয়াতে করে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসাবেও এমন জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসছে। ঝিন্না মোল্লার ব্যক্তিগত হিসাবে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১০ টাকা থাকার কথা। কিন্তু ওই হিসাবে আছে মাত্র এক লাখ ৫ হাজার ১১২ টাকা।

তাৎপর্যের বিষয় হল, এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাওয়ার কথা থাকলেও কোন এসএমএস আসেনি। গ্রাহকরা এ বিষয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে তিনি তাদেরকে জানান- সার্ভারে ত্রুটি থাকার কারণে গ্রাহক এসএমএস পাচ্ছেন না।

বুধবার সকালে দেখা যায়, তামাই শাখার নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পাঁচজন সদস্য বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।

জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন- ব্যাংকের এসপিও মোস্তফা কামাল, সিনিয়র অফিসার মাসুদুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার শরীফ মোহাম্মদ ইশতিয়াক ও এরিয়া ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার।

এর আগে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তামাই শাখার ক্যাজুয়াল পিয়ন শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৭ /৮ মাস ধরে শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিনের কথা অনুসারে তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের চেকে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। ব্যবস্থাপকের কথায় অনেক জমা ভাউচারেও তিনি স্বাক্ষর করেছেন।

কেন স্বাক্ষর করেছেন- এমন প্রশ্নে শহিদুল বলেন, ‘আমরা তাদের চাকরি করি। তিনি যা অর্ডার করতেন আমাদের তাই করতে হতো। আমি তো শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি, ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার আইডির মাধ্যমে টাকাগুলো দেয়া হতো। অনেক সময় গ্রাহকের হিসাবে টাকা না থাকলেও ম্যানেজার নিজে এসে তাদের টাকা দিতেন।’

এসব বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে স্যাররাই ব্যবস্থা নেবেন।’

তদন্ত কমিটির প্রধান এজিএম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ঠিক কত টাকা গরমিল হয়েছে তার তদন্ত চলছে। গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব গ্রাহকের হিসাবে ঝামেলা হয়েছে তাদেরকে দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

ব্যাংকের বিপুল টাকার হদিস না পাওয়ার এই ঘটনায় রোববার রাতে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম।

আল আমিন সিরাজগঞ্জের ধানবান্দি পৌর এলাকার মো. হারান শেখের ছেলে, রেজাউল করিম বগুড়ার ধুনট থানার বেলকুচি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং রাশেদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের বনবাড়িয়া কাদাই গ্রামের জিয়াউল হকের ছেলে। তারা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ রোববার জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ক্যাশ ভল্টে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পড়ে।

পরে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ম্যানেজারসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। হিসাব অনুসারে ভল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লাখ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা। বাকি ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো খোঁজ মেলেনি।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Matikhekora chose the darkness of the night by changing tactics

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা দিনের আলোতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের ঝক্কি এড়াতে রানীনগরে রাতের আধাঁরে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। ছবি: নিউজবাংলা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জানান, রাতে মাটি কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়। তা না হলে রাতে খবর পেয়ে পুলিশের লোকেরা দফায় দফায় ভেকু মেশিনের চাবি কেড়ে নিয়ে যায়।

নওগাঁর রাণীনগরে কোনোভাবেই থামছে না কৃষি জমির মাটি লোপাট। দিনের আলোতে প্রশাসনের হানা দেয়ার ভয় থাকার কারণে কৌশল পাল্টেছে মাটিখেকোরা। দিনের আলো ফুরাতেই শুরু হচ্ছে মাটি কাটার মহোৎসব।

একটি মেশিনের জায়গায় বর্তমানে একই স্থানে একাধিক মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে সরকারি খাস জমির মাটি। এতে কৃষিজমি হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পাকা সড়ক।

পরিবেশ ও মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে দ্রুত প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দিন ও রাতের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গিয়ে দেখা যায়, মিরাট ইউনিয়নের ২ নম্বর স্লুইস গেট সংলগ্ন স্থানে আতাইকুলা মৌজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ সংলগ্ন স্থানে সরকারি খাস জমির সঙ্গে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বছরে ১৬ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে বন্ধক নিয়ে সেখানে পুকুর খনন করা হচ্ছে।

মাসখানেক আগে ‘অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহনে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা’- এমন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই ট্রাক্টরচালককে কারাদণ্ড দেন। পরে সেখানে গিয়ে সরকারি খাস জমির একটি সাইনবোর্ড এবং সরকারি জমি পরিমাপ করে লাল ফিতা দিয়ে চিহ্নিত করে আসেন উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন।

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা
সরকারি জমি-সংক্রান্ত সাইনবোর্ড থাকলেও তার পাশ থেকেই চলছে মাটি কাটার উৎসব। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ঘটনার কয়েকদিন পর উপজেলার কুজাইল এলাকার সর্বরামপুর গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জনৈক রাজনৈতিক নেতাকে ‘ম্যানেজ করে’, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে কৌশল পাল্টে রাতে মাটি কাটা শুরু করেছে। তার পর থেকে বিষয়টি প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। ফলে রাতের আঁধারে দেদারছে সরকারি খাস জমিসহ কৃষি জমি গর্ত করে মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।

বড় বড় ড্রাম ট্রাকের চাকায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক ও প্রধান পাকা সড়কগুলো। শুধু তা-ই নয়, ট্রাক থেকে সড়কে মাটি পড়ার কারণে তা যানবাহন ও পথচারী চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। তাছাড়া গাড়ির নিয়ন্ত্রণে বেগ পাওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জানান, রাতে মাটি কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়। তা না হলে রাতে খবর পেয়ে পুলিশের লোকেরা দফায় দফায় ভেকু মেশিনের চাবি কেড়ে নিয়ে যায়। পরে সন্ধির মাধ্যমে চাবি ফিরিয়ে দেয়।

তাদের দাবি, এতো ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতেই স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে এ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা

এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘ওই স্থানে কিছু খাস জমি হয়ত আছে। তবে জমির মালিকরা আমার সঙ্গে চুক্তি করে মাটি কেটে নিচ্ছে। আমি মাটির বিনিময়ে তাদের জমি খনন করে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি খনন করা হচ্ছে কি না, এই বিষয়ে জমির মালিকরা জানেন। অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না, তা তারা বলতে পারবেন।’

তবে রাতে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দিনের বেলায় প্রশাসন হানা দেয়, তাই রাতে মাটি কাটা হচ্ছে।’

মিরাট ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওই জমি থেকে মাটি কাটা নিয়ে একটি মামলা চলছিল। পরে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’

তবে মাটিখেকোরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই হয়ত রাতে মাটি কাটছে বলে ধারণা তার।

কৌশল পাল্টে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে মাটিখেকোরা

রানীনগর থানার ওসি আবু ওবায়েদ বলেন, ‘পুলিশ শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করে। কে কোথায় মাটি কাটছে, সেই বিষয়টি দেখবে উপজেলা প্রশাসন কিংবা ভূমি অফিস।

‘পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি এমন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

ইউএনও উম্মে তাবাসসুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে মাটি কাটার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে মাটিকাটা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও যদি তিনি মাটি কাটা বন্ধ না করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
46 bridges in one kilometer canal

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু ব্যক্তিগত উদ্যোগে একের পর এক সেতু নির্মিত হয়ে চলেছে খালটির ওপর। ছবি: নিউজবাংলা
সোনাইমুড়ি পৌরসভা মেয়র নুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এলাকার জনগণ খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করছে এটা সত্য। তবে এতে আমার কিছুই করার নেই।’

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় চলছে খাল দখলের মহোৎসব। খাল দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেট ও বসতবাড়ি। এছাড়া সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া খালের ১ কিলোমিটারের মধ্যেই অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে ৪৪টি সেতু। বর্তমানে খালে বাঁধ দিয়ে নতুন করে কংক্রিটের পিলার নির্মাণ করে আরও ২টি সেতু বাড়ানোর তৎপরতা চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, সোনাইমুড়ী জোড় পোল থেকে ছাতার পাইয়া সড়কের পাশে ঘেঁষে বয়ে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া খাল। খালটির দৈর্ঘ্য ৪.৩৫০ কিলোমিটার।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে গত শীত মৌসুমে প্রথমবারের মতো খালটি খননের কথা থাকলেও অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ খাল।

একইসঙ্গে খালের মুখে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন সেতু তৈরি করে কার্যত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পানির প্রবাহ। ফলে বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টি হলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে ৪৩ হাজার ৯০০টি কৃষক পরিবার রয়েছে। সেচ-নির্ভর বোরো ধান চাষের আবাদি জমি রয়েছে ১০ হাজার ১০ হেক্টর। কিন্তু চলতি বছরে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে। সেগুলোতে পানি দেয়ার জন্য শক্তিশালী সেচ যন্ত্র রয়েছে ২ হাজার ২৬২টি।

দীর্ঘ সময় ধরে এ খালটি খনন না করায় শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যায় খালটি। ফলে পানির অভাবে খালের দুপাশের কৃষিজমিতে বোরো ধানচাষ ব্যাহত হচ্ছে। যেটুকু পানি প্রবাহিত হতো সেটাও দখলের কারণে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু
সেতুর প্রকোপে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাইমুড়ী জোড়া পোল থেকে শুরু হওয়া খালের ওপরে প্রায় ১০০টি দোকান তুলে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। মার্কেটের পর থেকে বাকি ১ কিলোমিটার খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৪৪টি সেতু। এর মধ্যে ইট-পাথর দিয়ে নির্মিত হয়েছে ২৫টি সেতু, যেগুলোর কারণে খালের পানি চলাচল স্থবির হয়ে গেছে। অথচ এই ২৫ সেতুর মধ্যে জনসাধারণের চলাচলে ব্যবহার হয় মাত্র ৫টি, বাকি ২০টি সেতু ব্যবহার হয় ব্যক্তিগত প্রয়োজনে।

এগুলো ছাড়াও খালটির ওপর কাঠ, বাঁশ ও পিলার দিয়ে ১৮টি এবং ইস্পাত দিয়ে নির্মিত হয়েছে ৩টি সেতু।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের ওপর সেতু নির্মাণ করছেন পেয়ারা বেগম নামের এক নারী। তিনি নিজেকে সোনাইমুড়ী পৌর সভার ওয়ার্ড কাউন্সিল হাফেজ দুলালের বোন হিসেবে পরিচয় দেন। খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের প্রতিবাদ করলে তিনি ‘মেয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন’ বলে থাকেন।

এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তারা হাফেজ দুলালের সঙ্গে এসে নাকি এ জায়গাটিও পরিদর্শন করে অনুমতি দিয়ে গেছেন। এমনকি ওইসব কর্মকর্তাকে চা-পানের খরচও দিয়েছেন ওই নারী।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়রের অনুমোদনের লিখিত কোনো কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হন পেয়ারা বেগম।

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু
খালটির ওপর নতুন করে দুটি ব্রিজের কাজ চলমান। ছবি: নিউজবাংলা

পেয়ারা বেগমের নির্মাণাধীন সেতুর অদূরেই একই এলাকার ওমর ফারুক তার বাড়ির সামনের খালের ওপরে সেতু ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সরকারি অনুমোদন রয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পৌর মেয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। মেয়রের নাতি শামীম সেতু নির্মাণের কাজ তত্ত্বাবধায়ন করছেন।

তিনিও অনুমোদনের লিখিত কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি।

এছাড়া ওই এলাকার বাসিন্দা তারেক, তোফাজ্জল মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুর রহমানসহ ২৫ জন ব্যক্তি খালের ওপর ব্যক্তি উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করেছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই খাল স্বাধীনতার পরে কখনও খনন হয়নি। আর দখলের কারণে দিনে-দিনে সেটি আরও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এতে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে কৃষি জমিতে সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। খালটির পানি প্রবাহের পথরোধ হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে কৃষি জমিতে পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সে সময় আশপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে থাকে।

খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু

সোনাইমুড়ী পৌর তহসিলদার আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, খালের ওপর অনুমতি না নিয়েই সেতু নির্মাণের বিষয়টি তিনি জানতেন না। পরে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

নোয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানান, সোনাইমুড়ী বাজার হয়ে ৫০০ মিটার খাল খননের আওতায় আসেনি। অবৈধ স্থাপনার কারণে সেখানে খননকাজ চালানো সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

সোনাইমুড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন মিয়া বলেন, ‘মৌখিক অভিযোগ পেয়ে খালের ওপর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তবে বর্তমানে দুটি সেতুর কাজ নির্মাণাধীন আর বাকিগুলো আগেই নির্মিত হয়েছিল।’

সোনাইমুড়ি পৌরসভা মেয়র নুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এলাকার জনগণ খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করছে এটা সত্য। তবে এতে আমার কিছুই করার নেই।’

আরও পড়ুন:
সরকারি খালে পারিবারিক সেতু

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Petrol diesel price in India has been reduced by Rs

নির্বাচনের আগে পেট্রল ডিজেলের দাম কমাল ভারত

নির্বাচনের আগে পেট্রল ডিজেলের দাম কমাল ভারত ভারতের একটি পেট্রল পাম্পে গাড়িতে ভরা হচ্ছে জ্বালানি তেল। ছবি: এনডিটিভি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হারদিপ সিং জানান, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজেলের দাম দুই রুপি করে কমিয়েছে।

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার পেট্রল ও ডিজেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হারদিপ সিং জানান, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজেলের দাম দুই রুপি করে কমিয়েছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, জ্বালানি তেলের সমন্বয়কৃত এ মূল্য কার্যকর হয় শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে।

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে মন্ত্রী হারদিপ সিং বলেন, ‘পেট্রল ও ডিজেলের দাম দুই রুপি কমিয়ে দেশের শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী মোদি আবার প্রমাণ করলেন, কোটি কোটি ভারতীয়র পরিবারের কল্যাণ ও সুবিধা দেখাই সবসময় তার লক্ষ্য।’

মন্ত্রী বলেন, ১৪ মার্চ ভারতে পেট্রলের লিটারপ্রতি গড় দাম ছিল ৯৪ রুপি, যেখানে ইতালিতে ১৬৮ দশমিক ০১ রুপি, ফ্রান্সে ১৬৬ দশমিক ৮৭ রুপি এবং জার্মানিতে ছিল ১৬৬ দশমিক ৮৭ রুপি।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হারদিপ সিং বলেছিলেন, অশোধিত তেলের বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা থাকায় জ্বালানির দাম কমছে না নিকট ভবিষ্যতে।

ভারতে জ্বালানি তেলের হ্রাসকৃত মূল্যে নগরভেদে তারতম্য থাকবে। দেশটির পেট্রলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, সমন্বয়কৃত মূল্য অনুযায়ী, দিল্লিতে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম পড়বে ৮৭ দশমিক ৬২ রুপি, যা আগে ছিল ৮৯ দশমিক ৬২ রুপি।

অন্যদিকে ভারতের রাজধানী শহরে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম পড়বে ৯৪ দশমিক ৭২ রুপি, যা আগে ছিল ৯৬ দশমিক ৭২ রুপি।

আরও পড়ুন:
মালদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা প্রত্যাহার শুরু
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করল মোদি সরকার
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ৫৫ কোম্পানিকে আমন্ত্রণ
ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে দুই-এক দিনের মধ্যে
সয়াবিনের লিটার ১৬৩ টাকার বেশি হলে কঠোর ব্যবস্থা: প্রতিমন্ত্রী

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Police cars tested for fitness on highways are unfit

মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষা করা পুলিশের গাড়িই ফিটনেসহীন

মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষা করা পুলিশের গাড়িই ফিটনেসহীন ফিটনেসবিহীন এই গাড়িতে চড়েই মহাসড়কে চলাচল করা গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষায় নামে ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের হাইওয়ে থানাগুলোতে পুরনো গাড়ি রয়েছে। তবে সেই গাড়িগুলো পরির্বতনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্য সব হাইওয়ে থানায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নতুন গাড়ি যুক্ত হবে।’

ফিটনেসবিহীন গাড়িতে চড়ে হাইওয়ে পুলিশ চেক করছে গাড়ির ফিটনেস। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে নিয়মিত টহলে যাচ্ছে ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশ ফিটনেসবিহীন গাড়িতে চড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভৈরবের শেষ প্রান্তে নরসিংদী জেলার মাহমুদাবাদ এলাকায় একটি লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িতে টহল দিচ্ছেন ভৈরব হাইওয়ে থানার চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য।

গাড়িটির রং নষ্ট হয়ে গেছে। সামনের দুটি হেডলাইট থাকলেও ডান-বাঁমে মোড় নির্দেশক বাতি নেই। ইঞ্জিনের সামনের অংশ ভাঙা। কয়েক জায়গায় তার দিয়ে বাঁধা। কিছু অংশে ঝালাই দেয়া। সামনের দুই দরজা নড়বড়ে, লক ভাঙা। চলছেও খুব ধীরগতিতে।

মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষা করা পুলিশের গাড়িই ফিটনেসহীন

পুলিশের ওই গাড়ির চালক তাজুল ইসলাম জানান, গাড়িটি অনেক পুরনো। মাঝেমধ্যেই পথে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তখন সবাই মিলে ধাক্কা দিয়ে চালু করতে হয়। এভাবেই প্রতিদিন মহাসড়কে টহল দিতে ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি নিয়ে বের হতে হয় তাদের।

টহলে থাকা ভৈরব হাইওয়ে থানার এসআই আবু জাফর শামসুদ্দিন বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়েই ফিটনেসবিহীন গাড়িতে চড়ে প্রতিদিন ডিউটিতে যেতে হয়। থানায় আরও দুটি গাড়ি আছে। তবে সে দুটিরও একই অবস্থা।’

ভৈরব হাইওয়ে থানার ওসি মো. সাজু মিঞা বলেন, ‘শুধু আমাদের থানার গাড়ির অবস্থা খারাপ তা নয়। দেশের অধিকাংশ হাইওয়ে থানার গাড়িরই বেহাল অবস্থা। ফিটনেসবিহীন গাড়িতেই চলতে হচ্ছে।

‘তবে দুটি গাড়ির বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি আমাদের থানায় খুব দ্রুতই নতুন গাড়ি যুক্ত হবে।’

এ বিষয়ে গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের হাইওয়ে থানাগুলোতে পুরনো গাড়ি রয়েছে। তবে সেই গাড়িগুলো পরির্বতনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্য সব হাইওয়ে থানায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নতুন গাড়ি যুক্ত হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Organized rape of schoolgirl OC took the side of the guilty?

স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন ওসি?

স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন ওসি? সংঘবদ্ধ ধর্ষণের হোতা হিসেবে অভিযুক্ত পারভেজ হোসেন (বাঁয়ে) ও বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান। কোলাজ: নিউজবাংলা
ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা না নিয়ে ওসি তাদের পাঠিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশও দেন তিনি। পরে চেয়ারম্যান মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে আদালতের দারস্ত হন ভুক্তভোগীর স্বজনরা।

নাটোরের বড়াইগ্রামে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ছয়জন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ঘটনার ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় মাস পেরুলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অভিযুক্তরা। ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গেলেও তা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খানের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা না নিয়ে ওসি তাদের পাঠিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশও দেন তিনি।

পরে চেয়ারম্যান মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে আদালতের দারস্ত হন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও ওসি শফিউল আজম খানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে পূর্ব পরিচয় থাকা বাগাতিপাড়ার দশম শ্রেণীর স্কুলশিক্ষার্থীকে কৌশলে ডেকে নেয় পাশ্বকর্তী বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া গ্রামের পারভেজ হোসেন নামের এক যুবক। পথিমধ্যে নির্জন রাস্তায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই অপেক্ষমান পারভেজ ও তার পাঁচ বন্ধু সাগর, মোহন, প্রসনজিৎ, রতন ও কৃষ্ণ মিলে ভুক্তভোগীকে মুখ চেপে ধরে পাশের পেয়ারা বাগানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়াসহ ঘটনাটি জানাজানি হলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাও দেয়া হয়।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এ ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করতে গেলে ওসি শফিউল আজম খান মামলা না নিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেন জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবরের কাছে। ওসির কথামতো সেখানে কয়েক দফায় আপস-মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। এরমধ্যে বারবার মিমাংসার আশ্বাস, ওসি ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা হয়ে পড়ে ভুক্তভোগীর পরিবার। এভাবে কেটে যায় আরও কিছুদিন।

মামলা না নিয়ে আপস-মিমাংসায় ওসির অপতৎপরতার কথা উঠে আসে ভুক্তভোগীর স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কথায়। তবে নিজের প্রতি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি শফিউল।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘থানায় গিয়ে আমার মেয়ের ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা বলতেই ওসি বলেন- এটা কোনো বিষয়ই না। মামলা নেয়া যাবে না। আপনারা চলে যান।

‘ওসির এমন কথায় চিন্তায় পড়ে যাই। শেষে ওসির কথামতো চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম। চেয়ারম্যানও কোনো সমাধান দিতে পারল না। শেষমেষ কোর্টে গিয়ে মামলা করি।’

ভুক্তভোগীর দুলাভাই বলেন, ‘মামলা করতে থানায় গেলে মামলা না নিয়ে বরং ধমক দিয়ে বের করে দেন ওসি।’

জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ‘ফোন করে ওসি আমাকে দুইপক্ষকে নিয়ে বসে ধর্ষণের বিষয়টি মিমাংসা করে দিতে বলেন। ওসির কথামতো বাদী-বিবাদী দুপক্ষকে নিয়ে কয়েক দফা বসেও বিষয়টি সামাধান করতে পারিনি। পরে ভুক্তভোগীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি।’

বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। বারবার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মামলা করাতে পারেনি পুলিশ।’

এ সময় চেয়ারম্যানকে দিয়ে আপস-মিমাংসার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গিয়ে অভিযুক্তদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে গা ঢাকা দেন তাদের স্বজনরাও।

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা না নেয়াসহ পুলিশের কারও কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগীর পরিবার আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন জানান, বুধবার আদালতের নির্দেশনার কপি হাতে পেয়েছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন:
স্বামীকে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বাকে ‘ধর্ষণ’: ৫ দিনেও গ্রেপ্তার নেই
খুবির ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন 
যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত জাবি শিক্ষক জনি বরখাস্ত
চোখে ঠোটে সুপার গ্লু লাগিয়ে গৃহবধূকে ‘ধর্ষণের মূল আসামি’ গ্রেপ্তার

মন্তব্য

p
উপরে