বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ড্যাপ বাড়াবে ফ্ল্যাটের দাম: রিহ্যাব

  •    
  • ৩১ অক্টোবর, ২০২১ ২১:৪৯

রিহ্যাব সভাপতি কাজল বলেন, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব কমানোর পরিকল্পনায় ২০১৬-৩৫ সালের জন্য ড্যাপ প্রণয়ন করছে। এর আলোকে ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২১ হচ্ছে। খসড়া এ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আমাদের মাঝে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে।’

প্রস্তাবিত নতুন ড্যাপ (ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান) বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর ভবনের আয়তন বর্তমানের চেয়ে ন্যূনতম ৩৩-৫৩ শতাংশ কমে যাবে। এতে ফ্ল্যাটের দাম কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বাড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব।

রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) এ উদ্বেগের কথা জানান। এ সময় সংগঠনের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ, নজরুল ইসলাম, শরীফ আলী খান, মোহাম্মদ সোহেল রানা উপস্থিত ছিলেন।

রিহ্যাব সভাপতি কাজল বলেন, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব কমানোর পরিকল্পনায় ২০১৬-৩৫ সালের জন্য ড্যাপ প্রণয়ন করছে। এর আলোকে ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২১ হচ্ছে। খসড়া এ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আমাদের মাঝে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে। এতে চলমান বিধিমালা-২০০৮ মোতাবেক নির্মাণযোগ্য ভবনের যে আয়তন রয়েছে তা থেকে নূন্যতম ৩৩-৫৩ শতাংশ আয়তন কমে যাবে। যা একটি অস্থিতিশীল ও অকার্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

তিনি জানান, বর্তমান বিধিমালায় ২০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন ৫ কাঠা জমিতে গ্রাউন্ডফ্লোরসহ ৮ তলা ভবনে মোট ১৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যায়। কিন্তু প্রস্তাবিত বিধিমালায় ৫ তলা ফ্লোর বিশিষ্ট মোট ৯ হাজার বর্গফুট ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে। ২০ ফুটের চেয়ে ছোট রাস্তার ক্ষেত্রে নির্মিতব্য ভবনের উচ্চতা ৩/৪ তলার বেশি হবে না এবং আয়তন উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পাবে। কিন্তু আবাসন কোম্পানির নির্মিতব্য ভবনের জন্য কমন ফ্যাসিলিটি, দাপ্তরিক ও অন্যান্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যয় একই থাকবে। এতে ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বাড়বে। এতে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা যৌক্তিকভাবে কমে যাবে। ‘আবাসন’ সমস্যা আরও বাড়বে।

কাজলের মতে, ভবনের আয়তন কমে গেলে সিরামিক, স্যানিটারি, টাইলস, ইলেকট্রিক কেবল, রড ও সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, পাথর, বালি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ ২৬৯টি সংশ্লিষ্ট শিল্প গভীর সংকটে পড়বে। সর্বোপরি আবাসন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।

তিনি বলেন, ‘কারিগরি জনগোষ্ঠী তথা স্ট্রাকচারাল প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্র কমে আসবে, স্থপতিদেরও কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হবে এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপরিধিও সংকুচিত হতে থাকবে। এতে স্নাতক প্রকৌশলী, আর্কিটেক্ট, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, হিসাব রক্ষণ, বিপণনকর্মী সহ বহু সংখ্যক স্কিল্ড লেবার কর্মহীন হয়ে পড়বেন। দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে যা একটি মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জমির মালিকেরা ফ্ল্যাট কম পাবে, বাসা ভাড়া বাড়বে, নষ্ট হবে ফসলী জমি।’

রিহ্যাব সভাপতি আশঙ্কা করেন, ভবনের আয়তন বা উচ্চতা কমলে নির্মিতব্য ফ্ল্যাটের সংখ্যা ও আয়তন কমে যাবে। এর ফলে জমির মালিকরা চাহিদা অনুযায়ী ফ্ল্যাট কখনোই পাবেন না। জমির মালিকদের মাঝে একটি গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। ফ্ল্যাট সংখ্যা কমে আসার কারণে বাসা ভাড়া সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পাবে। এতে সাবলেট সংখ্যা বাড়বে, যা নগরীতে একটি অ-স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করবে। অন্যদিকে, আবাসনের চাহিদা মেটাতে ফসলী জমিতে ভবন তথা বাসাবাড়ী নির্মাণের একটি প্রবনতাও বাড়বে।

ড্যাবে অবাসন ব্যবসায়ীদের মতামত রাখা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত ৭ মার্চ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে ড্যাপ সম্পর্কীত একটি সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং ড্যাপ রিভিউ কমিটির আহবায়ক তাজুল ইসলাম রিহ্যাব ও বিএলডিএ’র মতামত ও সুপারিশ গ্রহণের লক্ষ্যে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু এই ওয়ার্কিং কমিটির কোন সভা ডাকা হয়নি, এমনকি স্টেক হোল্ডারদের কোন সুপারিশও নেয়া হয়নি। কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যে ড্যাপ চূড়ান্ত অনুমোদনের কথা বলা হচ্ছে।’

কাজল বলেন, ‘জীবিকা, উর্পাজন, চিকিৎসা, উন্নত শিক্ষা ও বিচার সালিশের জন্য এ দেশের জনগনের কাছে এখনও ঢাকাই কেন্দ্রস্থল। কিন্তু সু-ব্যবস্থাগুলো অন্যত্র তৈরি না করা পর্যন্ত ঢাকা শহরের জন্যসংখ্যা কমানো বা ঢাকা শহরে অভিবাসনে বাধা প্রদান অলিক স্বপ্ন।’

তিনি জানান, রাজউক এলাকায় ২১ লাখের কিছু বেশি স্থাপনা রয়েছে। কিন্তু মোট স্থাপনার ৮৪ শতাশংই একতলা ভবন। তিনতলার বেশি উচ্চতার ভবন ১৩ শতাংশ, ৬ তলার বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট ভবন মাত্র ০.৬৭ শতাংশ এবং ৮ তলার বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট ভবন মাত্র ০.১৬ শতাংশ। তাই মাত্র ০.১৬ শতাশের ভবনের আয়তন বা উচ্চতা কমানোকে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কমানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ।

তিনি বলেন, ‘এই প্রচেষ্টার ফলে জনঅসন্তোষ ও জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হবে, আবাসন সমস্যা আরও জটিল হবে এবং এই প্রচেষ্টা অকার্যকরই হবে। এর চেয়ে ঢাকা শহরের সংলগ্ন অনান্য শহরের সঙ্গে দ্রুতগতিসম্পন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং অন্যান্য নগরীতে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা উন্নয়ন ফলপ্রসু হবে বলে মনে করে রিহ্যাব।’

এ বিভাগের আরো খবর