ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে বিএনপি সারা দেশে না থাকলেও বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়নে আছে। শুধু তা-ই নয়, সেখানে দলের একটি অংশ আছে রাজনীতির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের পাশে।
বিএনপির কেউ সেখানে নির্বাচন করছেন না, নৌকা মার্কার পক্ষে যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে, তাতে বিএনপির স্থানীয় কমিটির আহ্বায়ককে করা হয়েছে সমন্বয়ক। বিষয়টি নিয়ে গোটা জেলাতেই ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে।
১৯৯০ সালে সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর দুই দলের মধ্যে প্রায় সব বিষয় নিয়েই মতভেদ দেখা গেলেও চরমোনাইয়ে এই বিরল বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে ঠেকাতে।
বিএনপির আহ্বায়ক সালাম রাঢ়ীর এই ভূমিকা অবশ্য বিএনপিতে বিভেদ ডেকে এনেছে। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে দলটি। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেছেন নেতা-কর্মীদের একটি অংশ।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি এবং নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলামের সমন্বয়ক সৈয়দ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, ওই ইউপিতে প্রায় দুই দশক ধরে চেয়ারম্যান হচ্ছেন চরমোনাই পিরের পরিবারের সদস্যরা। তাদের ঠেকাতেই আওয়ামী লীগ বিএনপি এককাট্টা হয়েছে।
গত ১৮ অক্টোবর চরমোনাইর রাজারচর ক্লাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সভা করে নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী হয়েছেন বিএনপি নেতা। ২১ অক্টোবর বুখাইনগর মাদ্রাসা মাঠে আরেকটি সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে সমম্বয়কারী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এর ভিডিও ও স্থিরচিত্র রয়েছে।
বরিশাল কোতোয়ালি বিএনপির সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন বাচ্চু জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনের নির্দেশে আব্দুস সালামকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
চরমোনাই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম মাসুম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে সব নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। সালাম রাঢ়ী তার নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য করে নৌকার সমন্বয়ক হয়েছেন।’
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি থেকে কোনো দলের নেতা-কর্মীরাই পির পরিবারের নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। তারা প্রায় দুই দশক চেয়ারম্যান পদে থেকেও চরমোনাইতে কোনো উন্নয়ন করেনি। তাই আসন্ন নির্বাচনে পিরের পরিবারকে হঠাতে চরমোনাই ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মী একযোগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যমত হয়েছেন।’
এ বিষয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপি নেতা সালাম রাঢ়ী। তবে দলের কাছ থেকে কোনো ধরনের নোটিশ পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
চরমোনাই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কাকে সমন্বয়ক করা হয়েছে আমার নির্বাচনে, সেটা আমি জানি না। দলের সিনিয়র নেতারা আছেন, তারা বলতে পারবেন।’
চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হবে আগামী ১১ নভেম্বর। এ ইউনিয়নে এবার হাতপাখা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন চরমোনাই পিরের ছোট ভাই সৈয়দ জিয়াউল করিম। ২০০২ সাল থেকে চেয়ারম্যান পদে এখানে জয়ী হয়ে আসছেন পিরের পরিবারের সদস্যরা।