বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ই-কমার্স আইন থেকে সরে আসছে সরকার?

  •    
  • ২৭ অক্টোবর, ২০২১ ২১:১১

বিভিন্ন গ্রুপের বিরূপ মনোভাবের কারণে আগের দৃঢ় অবস্থান থেকে পিছু হটেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর পরিবর্তে ডিজিটাল ই-কমার্স পরিচালনায় দেশে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালায় কিছু সংযোজন-বিয়োজনের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।

ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা আনতে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগ থেকে সরে আসছে সরকার। সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত আইন প্রণয়নের বিষয়ে খোদ সরকারের নীতিনির্ধারণী স্তরেই সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়া খাতসংশ্লিষ্টদেরও আছে ঘোর বিরোধিতা। আইন করার পক্ষে নন ব্যবসাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরাও। বিভিন্ন গ্রুপের বিরূপ মনোভাবের কারণে আগের দৃঢ় অবস্থান থেকে পিছু হটেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এর পরিবর্তে ডিজিটাল ই-কমার্স পরিচালনায় দেশে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালায় কিছু সংযোজন-বিয়োজনের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।

দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট ২০১৩, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ এবং কোম্পানি নিবন্ধন আইন (সংশোধন) ২০২০-সহ খাত সম্পৃক্ত আরও কিছু আইন।

একইভাবে ডিজিটাল ই-কমার্স পরিচালনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের বিষয়েও টানাপোড়েন চলছে। কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও এখন বিষয়টি খুব একটা এগোচ্ছে না। এর পরিবর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান ডিজিটাল কমার্স সেল, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ই-কমার্স খাতে প্রতারণা রোধ ও খাতটিকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র, আইন, তথ্য ও বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠকে ডিজিটাল ই-কমার্স আইন তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে ই-কমার্স খাতের সুষ্ঠু পরিচালনায় একটি আলাদা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বা রেগুলেটরি বডি গঠন করা হবে। ভবিষ্যৎ প্রতারণা বন্ধে এবং প্রতারণা সংঘটিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিজিটাল ই-কমার্স অ্যাক্ট নামে একটি স্বতন্ত্র আইন করা হবে।

পরে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ১৬ সদস্যের একটি আইন প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। একই দিনে গঠন করা হয় কারিগরি কমিটি। এ ছাড়া পৃথকভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানেও আরেকটি কমিটি গঠিত হয়।

ইতিমধ্যে সব কটি কমিটির একটি করে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইন প্রণয়ন কমিটি আবার তাদের প্রথম বৈঠকে আইনি দিক পর্যালোচনার জন্য ৯ সদস্যের সাবকমিটিও গঠন করে। তাদের এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে পৃথক কোনো আইন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দরকার আছে কি না, এসব কমিটি এখন যার যার অবস্থান থেকে খতিয়ে দেখছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছিল আইন করা হবে যদি আইনের প্রয়োজন হয়। পুরোনো আইন দিয়ে যদি চলে, তাহলে তো আর নতুন আইনের দরকার নেই। আমরা চেক করে দেখছি, যদি পুরোনো আইনের সঙ্গে কোনো কিছু যোগ করতে হয়, সেটি করা যাবে। এই হলো কথা।’

টিপু মুনশি আরও বলেন, ‘আইন করার জন্য তো আইন নয়। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আইন করব। এখন পুরোনো আইনের ভেরিফিকেশন চলছে। সব রকম কাজ চলছে। যদি মনে হয় এ আইনের সঙ্গে আরও কিছু বিধিনিষেধ দিয়ে যোগ দিলে হবে, তাহলে তো সেটি করাই ভালো।’

ডিজিটাল কমার্স প্রধান ও আইন প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি অনুবিভাগ) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইনি দিকটি দেখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি হয়েছে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আরও একটি বড় কমিটি গঠন করেছে। কমিটিগুলো এখন কাজ করছে। যাদের জন্য আইন হবে, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখনও তো ফাইনাল হয়নি। এসব আলোচনা ও মতামতের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আমরা আগামী ১২ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দেব। সেখান থেকেই করণীয়-সংক্রান্ত মূল নির্দেশনা আমাদের কাছে আসবে।’

সফিকুজ্জামান বলেন, ‘এখন যদি আমাদের বিভিন্ন অংশীজন বলেন, পুরোনো আইন দিয়েই ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা যাবে, তাহলে তো নতুন আইনের দরকার নেই। তবে কোনো কিছুই এখনও ফাইনাল নয়। ১২ নভেম্বরের পর সব জানা যাবে।’

নতুন আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ‌‘না’

গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তিন মন্ত্রী (বাণিজ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি) এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের উপস্থিতিতে ই-কমার্সের সাম্প্রতিক সমস্যা নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়।

ওই বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, ‘ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে আইনের পক্ষপাতী নন তিনি। বিদ্যমান আইন, নীতিমালা ও বিধিমালাতেই খাতটিতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘দেশে ই-কমার্স একটি সম্ভাবনাময় খাত। একে কোনো আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ দিয়ে বাধা যাবে না। দেশে কোনো ইনোভেটিভ বা ক্রিয়েটিভ অথবা ডিজিটাল ইকোনমি গড়ে তুলতে গেলে প্রথমেই আইন নয়। প্রথমেই রেগুলেশন নয়, প্রথমেই বাধা নয়।’

পলক আরও দাবি করেন, ‘প্রথমে হবে কৌশলপত্র। তারপর একটি নীতিমালা, তারপর আইন। তবেই দেশটা একটি ডিজিটাল বেইজড ইকোনমির দিকে আগাবে।’

এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা এবং এ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞরাও নতুন আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তারা দাবি করেন, দেশে প্রচলিত বিভিন্ন আইনেই ই-কমার্স খাতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করা যায়। তাই ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে আলাদা কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্বতন্ত্র আইন প্রণয়নের প্রয়োজন নেই। এখন সরকারের উচিত প্রচলিত আইন বাস্তবায়নে নজর দেয়ার পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত দায়িত্বশীল বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মপরিকল্পনা এগিয়ে নেয়া।

এ বিষয়ে দেশে ব্যবসাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেন, ‘যখন সংকট হয়, তখন কাউকে না কাউকে দোষ দেয়া হয়। সঙ্গে বলা হয় আইন নেই, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। তখন সরকার সেদিকেই নজর দেয়। আমার বক্তব্য হচ্ছে, আইন করে যদি প্রয়োগ করা না যায়, তাহলে সে আইন দিয়ে কী হবে?’

বলেন বলেন, ‘আমার বক্তব্য স্পষ্ট। প্রচলিত আইনেই ই-কমার্স খাতে সৃষ্ট ঘটনার সমাধান রয়েছে। নতুন আইনের দরকার নেই।’

এ বিষয়ে চালডাল ডটকমের সিইও ওয়াসিম আলিম বলেন, ‘আলাদা আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলে ই-কমার্স খাতের ভবিষ্যৎ আরও কঠিন হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও এ খাত পরিচালনায় আলাদা কোনো সংস্থা নেই।’

বিডি জবসের সিইও ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘ই-কমার্সে শৃঙ্খলা আনতে হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আরও কার্যকর করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে জবাবদিহি করা এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনে তাদের শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু দেশে নতুন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাই না।’

শপআপের চিফ অফ স্টাফ জিয়াউল হক বলেন, ‘ই-কমার্সকে যদি নজরদারি করা হয়, তাহলে নতুন আইনের প্রয়োজন হবে না।’

ইলেকট্রনিক কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘ই-কমার্স খাতে সৃষ্ট ঘটনায় দায়িত্বশীল বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা প্রতিযোগিতা কমিশন- এদের সবারই কিছু না কিছু দায় আছে। কারণ এদের প্রত্যেকের মধ্যেই সমন্বয়হীনতা রয়েছে। দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো সৃষ্ট ঘটনার ক্ষেত্রে যার যার কার্যকর রেসপন্স দেখালে নতুন কিছুরই আর প্রয়োজন হয় না।’

এ বিভাগের আরো খবর