কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে ইকবাল হোসেনের কোরআন শরিফ রাখার ঘটনা বিশ্বাস করেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, ইকবাল মানসিক ভারসাম্যহীন।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ইকবালের কোরআন রাখার ঘটনা সাজানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, সে নাকি কোরআন শরিফ নিয়ে মণ্ডপে রেখেছে। যেগুলো কোনোমতে বিশ্বাসযোগ্য নয়।’
বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন তিনি।
কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীতে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, মণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কয়েকজন নিহতও হয়েছেন।
সে ঘটনায় পরে সিসিটিভি ফুটেজে এক ব্যক্তিকে পাশের এক মাজারের মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে মণ্ডপে রাখার দৃশ্য ধরা পড়ে। এমনকি সেখান থেকে হনুমানের গদা হাতে একজনকে হেঁটে যেতেও দেখা যায়। ফুটেজ দেখে ওই ব্যক্তি ইকবাল বলে শনাক্ত করার কথা জানায় পুলিশ। সেই মণ্ডপে কোরআন রাখার জন্য দায়ী বলে দাবি করে পুলিশ।
ওই ঘটনায় ২১ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে ইকবালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে নেয়া হয় কুমিল্লায়। সেখানে আদালতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডেও নেয় পুলিশ। পরে ইকবাল মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার কথা স্বীকার করে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, ‘সারা দেশে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে, অনেকগুলো পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ গুলি করেছে, কয়েকজন মারা গেছে। ঘটনাগুলোর পর সরকার বেআইনি ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এখন বিএনপিকে নির্মূল করতে চায়।
‘যেকোনো ঘটনা ঘটলেই সত্য-মিথ্যা সাজিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এবারও দেখলাম গ্রেপ্তারবাণিজ্য করতে প্রকৃত অপরাধীরা যেন ধরা না পড়ে সে জন্য অসংখ্য নেতা-কর্মীর নামে মামলা দেয়া হলো।’
প্রত্যেকটি ঘটনায় সরকারি দলেন ইন্ধন রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘রংপুরে দেখা গেল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। পরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। চার মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকে বলছি, সরকারের এজেন্সিগুলো দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে। মূল উদ্দেশ্য হলো, জনগণের ভাতের সংকট, ভোটের সংকট, বাকস্বাধীনতার সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির সংকট, এসব থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে।’
এ সময় ফখরুল জানান, চৌমুহনীতে ২৩ মামলায় ৭ হাজার ৯৬১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর একটা বড় অংশ বিএনপির নেতা-কর্মী। এসব মামলা কবে শেষ হবে তার কোনো সময় না থাকলেও মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারবাণিজ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মণ্ডপ ও বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ৬০টি মামলায় ১৫ হাজার ৯৬ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে বিএনপির ১৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাগুলোর পেছনে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ আছে। তারাই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বরকত উল্লাহ বুলুসহ বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে, তাদের এ ঘটনার সঙ্গে কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই। মামলাগুলো দিয়েছে শুধু তাদেরকে হয়রানি করতে, রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করতে, আসন্ন নির্বাচনের পূর্বেই যেন বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঠ থেকে একদম সরিয়ে দেয়া যায়, মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে, এ জন্যই এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল ও পাটুরিয়ায় ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নজরদারির অভাবে এসব ঘটনা ঘটছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মনজুসহ অন্যরা।