লক্ষ্মীপুরে চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ মাসেও চালু হয়নি নতুন কেনা এক্সরে মেশিন। এর আগে এসব হাসপাতালে থাকা এক্সরে মেশিন এক যুগের বেশি সময় পড়ে থাকায় অকজো হয়ে যায়।
চলতি বছর নতুন করে এসব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারটি মেশিন দেয়া হলেও এক দিনের জন্যও ব্যবহার হয়নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এক্সরে মেশিন চালানোর জন্য টেকনিশিয়ান পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এতে এক্সরে মেশিন চালু করা সম্ভব না হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানা যায়, হাসপাতালটি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরের বছরের জুনে একটি নতুন এক্সরে মেশিন দেয়া হয়। তবে টেকনিশিয়ান না থাকায় সেটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি।
এক যুগের বেশি সময় ধরে পড়ে থাকার পর মেশিনটি অকেজো হয়ে যায়। এরপর টেকনিশিয়ান পদে নিয়োগ না দিয়েই গত বছরের ডিসেম্বরে আরও একটি মেশিন পাঠানো হয়। কার্টনের ভেতরেই এটি পড়ে ছিল প্রায় চার মাস। ছয় মাস আগে মেশিনটি রুমে স্থাপন করা হলেও চালু করা হয়নি।
হাসপাতালটিতে সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, এক্সরে রুমের সামনে অপেক্ষা করছেন রায়পুর পৌরসভার কাঞ্চনপুর এলাকার হতদরিদ্র নূরনবী।
তিনি জানান, মাসখানেক আগে দুর্ঘটনায় তার এক হাত ভেঙে যায়। এরপর রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন এক্সরে করাতে। তবে এসে দেখেন এক্সরে রুমে তালা।
নূরনবীর অভিযোগ, এখানে যে এক্সরে করা যায় না, তা বলেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলেন, পরে আসেন। এ জন্য কয়েকবার এসেও তিনি এক্সরে করাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বাইরে থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এক্সরে করান।
তিনি বলেন, ‘সব সময় এক্সরে রুমে তালা মারা থাকে। এতে করে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। সরকারের দেয়া এক্সরে মেশিন কোনো কাজেই আসছে না।’
এক্সরে করতে সেখানে আসা রোগী ইছমাইল হোসেন, আবুল কালাম, মরিয়ম বেগম, নাজমা আক্তার, ছলিম উল্যাহসহ একাধিক রোগীর অভিযোগ, চরাঞ্চল থেকে হাসপাতালে এসেছেন তারা। দিনের পর দিন ভাঙা পা ও হাত নিয়ে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। অথচ হাসপাতালে এক্সরে করাতে পারছেন না।
একই চিত্র রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এই তিন উপজেলা হাসপাতালেও একই সময়ে দেয়া হয়েছে নতুন এক্সরে মেশিন। তবে টেকনিশিয়ান না থাকায় তা চালু করা যায়নি। এতে কোনো কাজেই আসছে না সরকারের লাখ লাখ টাকায় কেনা এসব মেশিন।
জেলা বেসরকারি প্যাথলজি মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম বাসার জানান, প্রতিদিন এসব হাসপাতালের বহির্বিভাগে দূরদূরান্ত থেকে দেড় থেকে দুই হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে কয়েক শ রোগীর এক্সরে প্রয়োজন হয়।
তবে টেকনিশিয়ান না থাকায় দীর্ঘদিনেও এক্সরে মেশিন চালু করা যায়নি। মাসের পর মাস নতুন মেশিন বাক্সবন্দি থাকার পর কক্ষে স্থাপন করা হলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় সেগুলো কোনো কাজে আসছে না। রুমেও থাকে তালা। এতে বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে এক্সরে করাতে কয়েক গুণ খরচ গুনতে হয় রোগীদের।
জেলার সিভিল সার্জন আবদুল গফফার বলেন, ‘টেকনিশিয়ান পদে জনবল না থাকায় এসব এক্সরে মেশিন চালু করা যাচ্ছে না। প্রতি মাসেই জনবল চেয়ে তালিকা পাঠানো হয়।
‘টেকনিশিয়ান না থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি মাস্টার রোলে (চুক্তিভিত্তিক) কিছু লোক নিয়োগ দেয়া যেত তাহলে কিছুটা হলেও সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হতো। চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন জানান, এরই মধ্যে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সসহ অনেক সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে টেকনিশিয়ান নিয়োগসহ অন্য সমস্যা সমাধান করা হবে।