বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মণ্ডপে কোরআন রাখা ইকবাল কুমিল্লায়

  •    
  • ২২ অক্টোবর, ২০২১ ১২:১৪

কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কক্সবাজারের এসপি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার ভোরে তাকে নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেয় কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল। দুপুর ১২টায় বহরটি পৌঁছে জেলা পুলিশ লাইনে। সেখানেই রাখা হয়েছে ইকবালকে।

কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় গ্রেপ্তার ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা নেয়া হয়েছে।

ইকবালকে বহনকারী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) মাইক্রোবাসটি শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনে প্রবেশ করে। ইকবালকে এখন সেখানেই রাখা হয়েছে।

জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, ইকবালকে পুলিশ লাইনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।

কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ইকবালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কক্সবাজারের এসপি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার ভোরে তাকে নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেয় কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল। সহকারী পুলিশ সুপার সোহান ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন।

ইকবালকে নিয়ে এই গাড়িবহর কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় পৌঁছায় শুক্রবার দুপুর ১২টায়

ইকবালকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই অভিযানটি কক্সবাজার জেলা পুলিশের নয়, কুমিল্লা জেলা পুলিশের। আমরা তাদের সাহায্য করেছি।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল কী জানিয়েছেন তা বলেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি জানান, ইকবালের বিষয়ে বিস্তারিত সব তথ্যই কুমিল্লা জেলা পুলিশ জানাবে।

ইকবালকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কক্সবাজারে গ্রেপ্তার ইকবালই কুমিল্লার ইকবাল।’

কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা ইকবালের ছবি সংগ্রহ করে কুমিল্লায় তার মা আমেনা বেগমকে দেখিয়েছেন নিউজবাংলার কুমিল্লা প্রতিবেদক।

আমেনা বেগমও নিশ্চিত করেন, ছবিটি তার ছেলে ইকবাল হোসেনের।

কুমিল্লা জোলা পুলিশের ডিআইও মনির আহমেদ জানান, বিকালে সংবাদ সম্মেলনে ইকবালের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।

কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর চলে ভাঙচুর

ওই মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

যেখান থেকে সাম্প্রদায়িক এই সহিংসতার শুরু, সেই নানুয়ার দিঘির পাড়ের মণ্ডপে কীভাবে উত্তেজনার শুরু এবং মূল মণ্ডপের বাইরে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এলো, সে বিষয়ে মঙ্গলবার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।

পূজার আয়োজক, এলাকাবাসী, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার আগের রাত আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজাসংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছিল। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারী ভক্ত মণ্ডপে এসে হনুমানের মূর্তিতে প্রথম কোরআন শরিফটি দেখতে পান।

পরে বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৩টার দিকে এক ব্যক্তি কোরআন শরিফটি রেখে যান মণ্ডপে। এ সময় হনুমানের হাতের গদাটি সরিয়ে নেন তিনি। গদা হাতে তার চলে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে ওই এলাকারই কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়।

মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার পর হনুমানের গদা হাতে হেঁটে যাওয়া ইকবাল

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসে মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখা যুবকের নাম ইকবাল হোসেন। ৩০ বছর বয়সী ইকবাল কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। নূর আলম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, মণ্ডপে কোরআন রাখায় যে চক্রটি জড়িত, ইকবাল তাদের একজন। তিনি কোরআন রাখার পর ভোরে আরেক অভিযুক্ত ইকরাম হোসেন (৩০) ঘটনাস্থল থেকে ৯৯৯-এ কল করেন।

ইকবালের সহযোগী সন্দেহে ইকরামসহ অন্তত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে কুমিল্লা নগরীর শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারের সহকারী খাদেম হিসেবে পরিচিত হুমায়ুন আহমেদ ও ফয়সাল আহমেদও রয়েছেন। এই মাজারের মসজিদ থেকেই কোরআন নিয়ে মণ্ডপে রাখেন ইকবাল।

প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন মাজারের মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে রওনা হন মণ্ডপের দিকে

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের যে অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়া যায়, সেখানে শুরুতে প্রবেশে ব্যর্থ হয়েছিলেন প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন। এরপর তিনি গিয়েছিলেন ওই মণ্ডপ থেকে কিছুটা দূরে দিগম্বরীতলার গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরে।

এই মন্দিরের তালা ভাঙতে ব্যর্থ হন ইকবাল

আরও পড়ুন: কোরআন রাখতে আরেকটি মন্দিরেও গিয়েছিলেন ইকবাল

মন্দিরটির গেটের তালা লাঠি দিয়ে ভাঙতে ব্যর্থ হন ইকবাল। এরপর আবার ফিরে আসেন নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে। এ সময় পূজাসংশ্লিষ্টদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তিনি কোরআন শরিফটি হনুমানের ওপর রাখেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর কোরআন রেখে হনুমানের গদা হাতে ফিরে আসেন ইকবাল।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইকবাল গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত এবং আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

এ বিভাগের আরো খবর