বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অনলাইন থেকে ঘৃণার বক্তব্য সরান

  •    
  • ১৯ অক্টোবর, ২০২১ ২০:৫৯

‘একটি সম্প্রদায়ের উপর আঘাত মানে আপনার-আমার উপর আঘাত, বাংলাদেশের সংবিধানের উপর আঘাত। কারণ, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা, ভিন্নমতের মানুষ ও ভিন্ন ধর্মের মানুষের অধিকার যখন ক্ষুণ্ণ করা হয়, তখন লেখক হিসেবে আমার অধিকারও ক্ষুণ্ণ হয়। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারকে আন্তধর্মীয় সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিকদের সমাবেশ থেকে। সেই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে উসকানি ও ঘৃণার বক্তব্য সরানোর দাবি জানানো হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপে ভাঙচুর, তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক’ এর ব্যানারে সমাবেশের সামনে রঙতুলি দিয়ে প্রতিবাদী স্লোগান লিখে প্রতিবাদ জানান চিত্রশিল্পীরা।

সমাবেশে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী-সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লেখক স্বকৃত নোমান সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলসহ ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

দাবিগুলো হলো,

সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা;

রামু, নাসিরনগরসহ দেশে সংগঠিত প্রতিটি হামলার প্রকৃত কারণ জনসম্মুখে প্রকাশ এবং এতে রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িত তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিচার করা;

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওয়াজ মাহফিল থেকে সাম্প্রদায়িক এবং নারীবিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধের উদ্যোগ নেয়া;

স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক পাঠ বিলুপ্ত করে৷ অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা;

সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করা।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সরকারি উদ্যোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আন্তধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা;

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে সংস্কৃতিচর্চার প্রসার ঘটানো এবং স্বাধীন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনুপ্রাণিত করা;

এবং

দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পাঠাগার এবং সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করা।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা আজ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং লজ্জিত। লজ্জায় আমরা মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছি। তবে এ মাটি থেকেই আমাদের ওঠে দাঁড়াতে হবে।

‘কারণ, পরাজিত হওয়ার জন্য ৩০ লক্ষ শহিদ বাংলাদেশ স্বাধীন করেনি। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের পূজামণ্ডপ এবং বাড়ি ঘরে যে হামলা হয়েছে এটা একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে ঘটতে পারে আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আমরা চাই, দেশের সমস্ত মানুষ এক হয়ে এ দাঙ্গাবাজ, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত হয়েছে। একে ইথনিক ক্লিঞ্জিং বলে। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

‘একটি সম্প্রদায়ের উপর আঘাত মানে আপনার-আমার উপর আঘাত, বাংলাদেশের সংবিধানের উপর আঘাত। কারণ, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা, ভিন্নমতের মানুষ ও ভিন্ন ধর্মের মানুষের অধিকার যখন ক্ষুণ্ণ করা হয়, তখন লেখক হিসেবে আমার অধিকারও ক্ষুণ্ণ হয়। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’

কথা সাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে যে সংখ্যালঘু শব্দের প্রচলন রয়েছে। আমরা চাই সেটি বন্ধ হোক। এ দেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়। যদি কোনো ধর্মের একজনও থেকে থাকে তাহলেও তিনি সংখ্যালঘু না। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকেও আমরা সংখ্যালঘু বলতে চাই না। এই দেশে প্রত্যেকের সমান অধিকার আছে।’

পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘কোনো মুসলমান মন্দিরে আজান দেবে না, কোনো হিন্দুও মন্দিরে কোরআন রাখতে পারে না। যারা এই কাজ করেছে, তারা মানুষরূপী অসুর। চলুন, আজ এই সমাবেশ থেকে ঘোষণা দিই—এসব মানুষরূপী অসুরদের বদ করতে হবে।’

কথাসাহিত্যিক রেজা ঘটক বলেন, ‘সরকার আজ পর্যন্ত একটি ঘটনারও সুষ্ঠু বিচার করেনি। এই বিচারহীনতায় বারবার এ ঘটনাগুলোকে উসকে দিচ্ছে। যারা এসব হামলা করছে তারা ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী। কিন্তু সেই গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার কেনো বারবার ব্যর্থ হচ্ছে! এটি কি কোনো চক্রান্ত?’

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে কেন আজ আমার মূর্তির উপর আঘাত আসে? কেন আজ আমি আমার মাকে শান্তিতে বিসর্জন দিতে পারি না? এই দুঃখ কোথায় রাখব?’

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সমাবেশে সংহতি জানিয়ে সংগঠনটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সংগীতা ইমাম বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনায় আমরা এখানে এসে দাঁড়াই। কিন্তু এই যে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো হচ্ছে, এগুলোর কোনো বিচার হচ্ছে না? রামু থেকে নাসিরনগরের ঘটনাগুলোর বিচার যদি হতো, তবে আজকে চাঁদপুর-নোয়াখালী-কুমিল্লায় এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটতো না।’

একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক জুলহাস নুর বলেন, ‘আমি একজন সংবাদকর্মী। আমরা নিউজরুমে কাজ করি। যখন এই ধরনের হামলার ঘটনাগুলো আমাদের কাছে আসে এবং এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, তখন আমরা ভীষণভানে মুষড়ে পড়ি।

‘আমরা যখন এখানে দাঁড়িয়ে আছি, এর আগেই ঘটে গেছে হাজীগঞ্জ, চৌমুহনী, পীরগঞ্জের ঘটনা। এসব ঘটনা যারা ঘটাচ্ছেন, তারা বারবার ঘটিয়ে চলেছে। এই ঘটনাগুলো প্রতিরোধে যে গণপ্রতিরোধ হওয়া দরকার, সরকার-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনীতিবিদদের যা করা দরকার, আমরা কি তা ঠিকঠাক করছি?’

চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনও পরাজিত হতে পারে না। এই দেশে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা আছে মানুষ আর পিশাচে। যারা এসব ঘটাচ্ছে, তারা পিশাচ আর আমরা মানুষ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ, গৌরব একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুস্তাফিজ বিপ্লব, কথাসাহিত্যিক আহমদ মোস্তফা কামাল, লেখক ও গবেষক চঞ্চল আশরাফ, অভিনয়শিল্পী মৌটুসী বিশ্বাস, চিত্রনির্মাতা মাসুদ প্রতীক, কবি লেখক শিক্ষক ঝর্ণা রহমান, কবি টোকন ঠাকুর, কথা সাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, আবৃত্তিশিল্পী মাসুম আজিজুল বাশার, রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী মকবুল হোসেনও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

এ বিভাগের আরো খবর