বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শক্তি বাড়িয়ে ছন্দে ফিরছে বাপেক্স

  •    
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ১০:৪৪

বর্তমানে আবিষ্কৃত ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি থেকে দৈনিক কমবেশি ২ হাজার ৬০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। অনেক গ্যাসক্ষেত্রের উপরিভাগের মজুত কমে আসায় সরকার ভূগর্ভের আরও গভীরে কূপ খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য সাড়ে ৭ হাজার মিটার সক্ষমতার রিগ সংগ্রহ করছে বাপেক্স।

২০৪১ সাল সামনে রেখে চলতি বছর রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স হাতে নিয়েছে ২০ বছরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

চলমান গ্যাসসংকট এবং বিশ্ববাজারে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজিসহ জ্বালানি পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বাড়ায় বাপেক্সের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি ফিরেছে।

বিশ্ববাজারে অব্যাহতভাবে জ্বালানি পণ্যের দর বাড়ায় এ খাতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রহের সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশি কোম্পানি বাপেক্সের সেই সুযোগ লুফে নিয়ে নিজেদের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ এসেছে।

বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে অনশোরে ৪১টি (প্রসপেক্ট ম্যাচিউরড সাপেক্ষে) অনুসন্ধান কূপ, ৪৫টি উন্নয়ন কূপ খনন এবং ২৯টি কূপের ওয়ার্কওভার করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

মডেল পিএসসি-২০১২ পরিমার্জন করে আলাদাভাবে অনশোর মডেল পিএসসি-২০১৯ এবং অফশোর মডেল পিএসসি-২০১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে নতুন বিডিং রাউন্ড ঘোষণা করা হবে।

বর্তমানে আবিষ্কৃত ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি থেকে দৈনিক কমবেশি ২ হাজার ৬০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।

অনেক গ্যাসক্ষেত্রের উপরিভাগের মজুত কমে আসায় সরকার ভূগর্ভের আরও গভীরে কূপ খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য সাড়ে ৭ হাজার মিটার সক্ষমতার রিগ সংগ্রহ করছে বাপেক্স।

উচ্চচাপের কারণে দুর্ঘটনার ভয়ে যেসব কূপ বা ক্ষেত্র অব্যবহৃত রয়েছে, উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার হওয়ায় এখন সেসব ক্ষেত্রেও কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আবার যেসব স্থানে জরিপ ও কূপ খননে বাপেক্সের সক্ষমতা নেই, সেসব স্থানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্বের সিদ্ধান্ত এসেছে।

শ্রীকাইল নর্থ, মোবারকপুর সাউথ ইস্ট-১, সুনেত্র-২, শৈলকূপা-১ ও সাভার-সিঙ্গাইর-১-এ ৫ হাজার মিটারেরও বেশি গভীরে কূপ খননের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবার পটিয়া, সীতাকুণ্ড, আটগ্রাম, মুলাদি, কসবা-১ ও ৩, সুন্দলপুর-১ কূপে অনুসন্ধান ও উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এগুলো শুষ্ক, পরিত্যক্ত ও স্থগিত কূপ হিসেবে পড়ে ছিল।

অন্যদিকে জলদী, সীতাপাহাড়, ওলাতাং, লাম্বাঘোনা, মাতামুহুরী, বান্দরবান ওয়েস্ট, বিলাইছড়ি, বরকল ও গোবামুড়া এলাকায় অনুসন্ধান ও কূপ খননের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কাজে অংশীদার নেবে বাপেক্স।

৮ ও ১১ নম্বর ব্লকে (জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা) অনুসন্ধানে জাপানি প্রতিষ্ঠান মিতসুই ওয়েল এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি (এমওইসিও) এবং বাপেক্সের মধ্যে সমঝোতা সই হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিগত সরকারগুলোর সময়ে কাজ না হওয়ার কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি। কূপ খনন করার জন্য যে টুডি-থ্রিডি সিসমিক সার্ভের প্রয়োজন হয়, সেগুলোও তারা করেনি। এগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

‘কেবল স্থল নয়, সাগরেও মাল্ট্রিক্লেইন সার্ভে হবে। ফলে বহুজাতিক কম্পানিগুলো আগ্রহী হবে। তাদের সঙ্গে বাপেক্সকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এতে বাপেক্সের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা বাড়বে। সেই সঙ্গে বাপেক্সকে আর্থিক, যান্ত্রিক ও লোকবলে শক্তিশালী করা হচ্ছে।’

স্বাধীনতার পর তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশে ৬৮টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের পর সরকারের আমলে ১৭ বছরেই খনন হয়েছে ৩৩টি।

তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর একই সময়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেই কেবল খনন করা হয়েছে ১৬০টি অনুসন্ধান কূপ।

পেট্রোবাংলার দেয়া তথ্য মতে, জ্বালানি খাত সবচেয়ে অবহেলিত ছিল বিএনপি শাসনামলে। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তিনটি সরকারের সময় আটটি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের মধ্যে ১২ বছরে ২০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়। এর মধ্যে চারটি নতুন গ্যাসক্ষেত্র এবং ১৬টি নতুন স্তর আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত খনন করা হয় ১৩টি অনুসন্ধান কূপ।

বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রথম কূপ খনন করা হয় ব্রিটিশ আমলে ১৯১০ সালে। এরপর ১১০ বছরে মাত্র ৯৫টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে। এতে করে ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা হয়েছে।

সিলেটের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্র। ফাইল ছবি

এর বাইরে মোবারকপুর, কসবা ও কুতুবদিয়ার মতো কয়েকটি ফিল্ড রয়েছে, যেগুলোতে গ্যাস পেলেও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয় বলে ঘোষণা করা হয়নি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ নেওয়াজ খালিস আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূ-কাঠামো অনুযায়ী রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ এলাকায় তেল-গ্যাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় হাইড্রোকার্বন স্তর দেখা যাচ্ছে। এই সীমানাটি আরও বড় হতে পারে। বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যে ধরনের স্তরে তেলের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশেও এ ধরনের ৪৯টি ভূ-কাঠামো রয়েছে।’

বাপেক্সের সাবেক এমডি মুর্তজা আহমেদ ফারুক চিশতী বলেন, ‘কুচমায়, সিংড়া, মোবারকপুরে গ্যাস শো ছিল, বগুড়ায় তেলের সম্ভাবনা ছিল। অশোকনগরে তেল আবিষ্কার নর্থ পার্টে নিশ্চয়ই গুরুত্ব বাড়বে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ অনশোরে আরও বেশি বেশি কূপ খনন করা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সাকসেস রেট খুবই ভালো। তারপরও যেভাবে এক্সপ্লোরেশন হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হয়নি।’

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কভিড-১৯ শুরুর এক বছর চার মাসের মধ্যে আমরা একটি নতুন গ্যাসক্ষেত্রসহ তিনটি গ্যাসকূপ খনন করেছি এবং ওয়ার্কওভার করেছি আরও চারটি। এই সাতটিতে আমরা দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে পারছি। এটি আমাদের জন্য খুবই একটি পজিটিভ দিক। এত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও আমরা এ কাজগুলো করতে পেরেছি। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যে আরও চারটি নতুন কূপ খননের কাজ শুরু করতে পারব। একটি শরীয়তপুরে আর তিনটি হবে ভোলায়।’

সম্ভাবনা দেশজুড়েই

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে তেল ও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেশজুড়েই। এখনও অনাবিষ্কৃত অনেক সম্ভাবনার অনেক অঞ্চল জরিপের বাইরে রয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে বিশাল সমুদ্র অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং দেশের পশ্চিমাঞ্চল।

সাগরে বাংলাদেশের সীমানার ওপার থেকে গ্যাস তুলছে মিয়ানমার। পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমানার ওপার থেকে ১১৬টি কূপ দিয়ে গ্যাস তুলছে ত্রিপুরা। পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা অশোকনগরে তেল আবিষ্কার করেছে ভারত।

জ্বালানি বিভাগ বলছে, নাটোরের সিংড়ার পর কুচমায় একটি, বগুড়ায় দুটি এবং দিনাজপুরে একটি কূপ খনন করা হয়। বগুড়া ও সিংড়ার তেলের উপস্থিতি পায় খননসংশ্লিষ্টরা। বর্তমান সরকার পাবনার মোবারকপুরে কূপ খনন করেছে।

কূপটিতে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, গ্যাসের চাপও ভালো ছিল। নিচে হাইপ্রেসার জোন থাকায় পরে আর বেশি কাজ করা হয়নি। কারণ দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে চায় রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি। এই অঞ্চলটিতে দুই থেকে তিন টিসিএফ গ্যাস মজুতের সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রস্তুত বাপেক্স

অনেক সময় প্রতিষ্ঠানটি বেশির ভাগ ক্ষেত্র আবিষ্কার করেও উত্তোলন ও ব্যবস্থাপনার সুযোগ পায় না। বাপেক্সের আবিষ্কৃত ক্ষেত্রগুলোয় কূপ খনন, উত্তোলন ও ব্যবস্থাপনার কাজ দেয়া হয় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। প্রশ্ন আছে বাপেক্সের সক্ষমতারও।

তবে সংস্থাটির এমডি মোহাম্মদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাপেক্স এখন ৫ হাজার মিটারের বেশি ৭ হাজার মিটার সক্ষমতার রিগ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া সব ধরনের বিশেষজ্ঞ নিয়োগের কাজ শেষ করেছে।

‘বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা অভিজ্ঞ কর্মীদের নিয়োগ দিয়েছে বাপেক্স। একই সঙ্গে অবসরে চলে যাওয়া অভিজ্ঞ বাপেক্স কর্মীদেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার চায় বাপেক্সকে শক্তিশালী করে দেশের গ্যাসসংকট মোকাবিলা করতে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।’

দক্ষিণে নজর

ভোলায় গ্যাস পাওয়ার পরই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর দিকে নজর দিয়েছে বাপেক্স। বিশেষ করে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও বরিশালের বিস্তীর্ণ এলাকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাত্রার জরিপ চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মনে করছি, ওই এলাকায় আরও গ্যাস পাওয়া যেতে পারে।’

তৃতীয়মাত্রার একটি জরিপ পরিচালনার জন্য ২৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর ছাড়াও ভোলার চরফ্যাশন, লালমোহন, তজুমোদ্দিন, বোরহানউদ্দিন উপজেলাজুড়ে অনুসন্ধান চালানো হবে।

তৃতীয় মাত্রার জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে সেখানে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হবে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে।

একই সময়ে একটি দ্বিতীয় মাত্রার ভূতাত্ত্বিক জরিপও চালানো হবে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা। অনুসন্ধান এলাকার মধ্যে আছে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও বরিশালের কিছু এলাকা।

শরীয়তপুরেও কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে বাপেক্স। এ জন্য ৯৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ২৬ জুলাই এই প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় কোম্পানিটি।

এর আগে এই এলাকায় দ্বিমাত্রিক জরিপ চালিয়ে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায় বাপেক্স। যদিও কূপ খননের আগে কোথাও গ্যাস রয়েছে এমনটা ঘোষণা করা যায় না।

দেশে শুধু সিলেট এলাকায় গ্যাসের বড় মজুত রয়েছে বলে ধারণা করা হতো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণের জেলাগুলোর প্রতিও বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর