চট্টগ্রামে মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া আলফাই আল হোসাইন নামের এক ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
তিনি সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় আলফাই আল হোসাইন ও তার বাবা তাইজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে গত ২৮ সেপ্টেম্বর আলফাই আল হোসাইন ও তার বাবা তাইজুল ইসলামকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা শুক্রবার আদালত থেকে থানায় আসে। এরপর সীতাকুণ্ড থানার এসআই আরিফের নেতৃত্বে একটি দল আসামিদের গ্রেপ্তার করে।
শনিবার দুপুর ১টার দিকে আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী কে জানতে চাইলে পরিদর্শক সুমন বণিক বলেন, ওয়ারেন্টে বাদীর নাম লেখা থাকে না। শুধু কোন আইনে মামলা হয়েছে সেটি উল্লেখ থাকে। মামলার বাদীর নাম আদালত থেকে জানা যাবে।
আলফাইর পরিবার জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে ক্রোয়েশিয়ায় পাচারের শিকার হন সীতাকুণ্ড এলাকার আলফাই আল হোসাইন। তিন মাস মানবেতর জীবনযাপন শেষে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর সহযোগিতায় দেশে ফেরত আসেন তিনি। দেশে ফিরেই পাচারকারীদের নামে মামলা করেন তিনি।
পরিবার আরও জানায়, ২৭ বছর বয়সী আলফাই ১২ লাখ টাকা খরচ করে ক্রোয়েশিয়ায় যান। ডিউটি ৮ ঘণ্টা, থাকা ফ্রি, খাওয়া নিজের, বেতন ৫৫ হাজার টাকা এবং এক বছর পর ছুটির জন্য বিমান ভাড়া কোম্পানি দেবে শর্তে রেস্টুরেন্টে ভালো কাজের ভিসায় ক্রোয়েশিয়া পাড়ি দেন তিনি। সেই দেশে পাচারকারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে হিজরত নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাধ্যমে দেশে ফেরেন আলফাই।
আলফাইর চাচা আব্দুল করিম ইলিয়াস বলেন, ‘আলফাই ও তার বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের পরিবারে নারী ও শিশু নির্যাতনকেন্দ্রিক কোনো ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ আমাদের মামলার নম্বর ছাড়া আর কোনো তথ্য দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর থেকেই আলফাই ও তাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গত সপ্তাহে সব পাচারকারী জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর আলফাই ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে তারা।’
আলফাইর ভগ্নিপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ক্রোয়েশিয়ায় মানব পাচারকারী চক্রের হোতা সাইফুল ইসলাম। দেশে ফেরার পর আলফাই বাদী হয়ে মানব পাচার আইনে সাইফুলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেছেন। এরপর র্যাব আসামিদের গ্রেপ্তার করে। শুনেছি আসামিরা এরই মধ্যে জামিনে বেরিয়েছেন।’
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আলফাই অবিবাহিত। সম্প্রতি তার সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতনবিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা ধারণা করছি, মানব পাচারকারীরা জামিনে বেরিয়ে আলফাইর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। তবে এখনও আমরা মামলার বাদীর নাম জানতে পারিনি।
‘রোববার আমরা মামলার বাদী এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে পারব। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’