সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় ওই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা দ্বিতীয় দিনের অনশন চলছে।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে অনশন করছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বৃহস্পতিবার বিকেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে শাহজাদপুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই বিভাগের শিক্ষার্থী শাকির আহম্মেদ নিলয় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমীন বাতেনের বহিষ্কারের দাবিতে অনশন চলছে। তার শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিচার করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন দরজায় কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের সামনের অংশের বেশ খানিকটা কেটে দেন তিনি। এভাবে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন ওই শিক্ষক।
ওই ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি ভাইরাল হয়। এ নিয়ে সোমবার দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। মীমাংসা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সোমবার দুপুরে পরীক্ষা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ফারহানা ইয়াসমিন শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন। এর প্রতিবাদ করলে নাজমুল হাসান তুহিন নামের ১ম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে গালিগালাজ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের হুমকি দেন।
ওই ঘটনার পর ‘অপমানে’ তুহিন রাতে দ্বারিয়াপুরের শাহমুখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা আটকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনার পর বাতেন মঙ্গলবার রাতে তার বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর পদ ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। ছবি: সংগৃহীত
ফারহানা ইয়াসমিন তিনটি দায়িত্ব ছাড়লেও তাতে সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা। তাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার তদন্তে রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেলকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের কাছে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বাতেন পরীক্ষা কক্ষের বাইরে বারান্দায় অপেক্ষা করছেন। তিনি বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন। একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী বালতিতে করে কেটে ফেলা চুলগুলো নিয়ে যান।
বাতেনের দাবি, এই ফুটেজ ঘটনার দিনের নয়।
তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। ওই কাঁচি খাতা কাটার জন্য নেয়া হয়েছিল। এই ফুটেজ ঘটনার দিনের না। তবে আমি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ব না। ছাত্রদের আন্দোলনে ফাঁসিয়ে দিয়ে কোনো এক মহল ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।’
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর সজিব সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরাই শিক্ষকের নির্দেশে কাঁচি সরবরাহ করেছি। ফারহানা ম্যাডাম নিজ হাতে ছাত্রদের চুল কেটে দিয়েছেন। আমরা ছোট পদে চাকরি করি। তাই সব কথা বলতে পারিনা।’