দেশে বিদেশি ফসল ও ফল চাষ নিয়ে একধরনের উচ্ছ্বাস থাকলেও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে চান। তার বিবেচনায়, সব ফসল দেশের আবহাওয়া উপযোগী নয়, আবার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
যার যেমন ইচ্ছা, তার বদলে মন্ত্রী গবেষণার ওপর ভিত্তি করে নতুন ফসলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী।
রাজধানীর ফার্মগেটে বিএআরসি মিলনায়নে বুধবার ‘ফার্ম সেক্টর অব বাংলাদেশ: প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ, আরব, এমনকি আফ্রিকান বিভিন্ন ফল ও সবজি চাষের প্রবণতা দেখা গেছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাষিরা লাভবান হলেও আরবের জনপ্রিয় ফল ত্বীন চাষ করে চাষিদের লোকসানে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে। ফসল ভালো হলেও বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা।
বিষয়টি নিয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘যে যে ভাবে পারছে দেশের বাইরে থেকে নতুন ধরনের ফসলের জাত নিয়ে আসছে ও চাষ করছে। এটিকে আমরা উৎসাহ দিই, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে দেখতে হবে, দেশে এসব ফসল চাষে কোনো ঝুঁকি বা স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে কি না। এসব ফসল চাষ আদৌ আমাদের প্রয়োজন আছে কি না।’
রেকর্ড উৎপাদনের পরও চাল আমদানির কারণ
রেকর্ড উৎপাদনের পরও কেন চাল আমদানি, তার কারণও ব্যাখ্যা করলেন মন্ত্রী। তার মতে, চালের ‘নন-হিউম্যান কনজামশন’ বেড়ে যাওয়াই এর কারণ।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, মাছ, পোলট্রি , প্রাণী খাদ্য ও স্টার্চ হিসেবে চালের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মিলে দেশে চালের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে দেশে চালের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। গড় উৎপাদনশীলতাও বেড়েছে। এখন দেশে প্রতি শতাংশ জমিতে এক মণ করে ধান উৎপাদন হয়। তারপরও চাল আমদানি করতে হচ্ছে নানা কারণে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে জনসংখ্যা ও চালের চাহিদার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অন্যদিকে বছর বছর জনসংখ্যা বাড়ছে, চাষের জমি কমছে। অন্যান্য ফসলের চাষেও জমি ব্যবহার হচ্ছে। দেশে বছরে এখন ৬০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে।
‘আগে যে ক্ষেতে ধানের চাষ হতো, সেখানেই ভুট্টা চাষ হচ্ছে। একই সঙ্গে চালের নন-হিউম্যান কনজামশন অনেক বেড়েছে।’
২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। ২০৫০ সাল নাগাদ উৎপাদন ৬ কোটি ৮ লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
ফোরাম ফর ইনফরমেশন ডিসেমিনেশন অন অ্যাগ্রিকালচার (ফিডা) ও সিনজেন্টা বাংলাদেশ লি. এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।