ইন্ডিয়ান লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি) বা ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড়সহ যাবতীয় বিষয় আরও সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
রেল ভবনে সোমবার বঙ্গবন্ধু সেতু-বগুড়া রেললাইন প্রকল্পে পরামর্শক সেবাবিষয়ক চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে প্রজেক্টগুলো এলওসির অর্থায়নে হচ্ছে, সেগুলো যাতে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে আরও দ্রুত করা যায়, সে বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। কিছু বিষয়ে দেরি হয়। উভয় সরকারের আপত্তি থাকে। সেগুলো যাতে দ্রুত করা, আরেকটু সহজীকরণ করা যায়।
‘এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এবং অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে আর একটু সচেতন করা যায় কি না, সেগুলো তারা ভেবে দেখবেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পগুলো যাতে ঠিক সময়ে শেষ হয় এবং মানসম্মত হয়, সে বিষয়েও সহযোগিতা চাচ্ছি। আজকে যে প্রকল্পে চুক্তি হয়েছে, কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান যেন সময়মতো কাজ শেষ করে, সচেতন হয়, সে আহ্বান জানাচ্ছি।’
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে বগুড়া পর্যন্ত সরাসরি রেললাইন নির্মাণ করছে সরকার। এতে এ রুটের দূরত্ব ১৮৭ কিলোমিটার থেকে কমে ৭৫ কিলোমিটারে নেমে আসবে।
‘কনস্ট্রাকশন অফ ডুয়েলগেজ রেলওয়ে লাইন ফ্রম বগুড়া টু শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ অফ বাংলাদেশ রেলওয়ে’ নামের ভারতীয় ঋণের এ প্রকল্পে পরামর্শক সেবাবিষয়ক চুক্তি সই হয়েছে।
চুক্তির আওতায় ভারতের রাইট লিমিটেড ও আরভি অ্যাসোসিয়েটস আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালট্যান্ট লিমিটেড যৌথভাবে এ প্রকল্পে পরামর্শ সেবা দেবে।
সংস্থা দুটির সঙ্গে ৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার পরামর্শক চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা বলেন, ‘ইন্ডিয়া আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। এই প্রকল্পের মতো অন্যান্য প্রকল্পেও তারা বাংলাদেশকে সাহায্য করবে বলে আমি আশা করছি।
‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে বগুড়া থেকে ঢাকার দূরত্ব এবং সময় অনেক কমে যাবে।’
ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘বাংলাদেশের পুরুলিয়া নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশনের সুযোগ রয়েছে। ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ, প্যাসেঞ্জার সার্ভিস, ক্যাটারিং সার্ভিস, কার্গো সার্ভিস সবকিছু আধুনিক হতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের রেল নেটওয়ার্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমরা পরস্পর এই খাতের উন্নয়নে অনেক দূর কাজ করতে পারি।
‘প্রকল্প বাস্তবায়ন ক্যাপাসিটি বিল্ডিং থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের যেকোনো প্রকল্পের কাজ করতে ভারত আগ্রহী এবং যথাসময়ে শেষ করার বিষয়ে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চায় ভারত।’
প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ভারতের তৃতীয় এলওসির আওতায় এতে ভারত সরকার ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের নভেম্বরে বগুড়া সফরে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের নির্দেশ দেন।
বর্তমানে বগুড়া এবং রংপুরের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ আছে। কিন্তু বগুড়া থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত বিদ্যমান ডুয়েল গেজ লাইনটি কাহালু সান্তাহার-আব্দুলপুর-ঈশ্বরদী বাইপাস-জামতৈল-শহীদ এম মনসুর আলী রুটে প্রায় ১৮৭ কিমি দীর্ঘ। তাই সরকার শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন থেকে বগুড়া রায়পুর-রায়গঞ্জ-শেরপুর-রানিরহাট রুটে সরাসরি রেল সংযোগ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
এতে বগুড়া স্টেশন থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশনের মধ্যকার রুটের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। এ ছাড়াও রানিরহাট স্টেশন থেকে কাহালু স্টেশনের মধ্যে রুটে ১১.৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হবে।
বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মধ্যে সরাসরি এ রেল যোগাযোগের ফলে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পথ এবং প্রায় তিন ঘণ্টা ভ্রমণের সময় কমবে। এ রুটের মাধ্যমে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ নিশ্চিত হবে।