বাংলাদেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে জানিয়ে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
‘বাংলাদেশ ফরওয়ার্ড: দ্য নিউ ফ্রন্টিয়ার ফর গ্রোথ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ আহ্বান জানান তারা।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের সাইড লাইনে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে এই বৈঠকের আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল।
এতে মূল বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সম্ভাবনাময় বিভিন্ন খাতের পাশাপাশি-আইসিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, অ্যাগ্রো-প্রোসেসিং (কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ), সমুদ্র অর্থনীতি, পর্যটন, জ্ঞান-ভিত্তিক হাই-টেক শিল্পের মতো লাভজনক খাতে বিনিয়োগের জন্য মার্কিন বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেরই সবচেয়ে মুক্ত বিনিয়োগ নীতি রয়েছে, যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগকারীরা যেন প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতেই দক্ষ জনসম্পদ পেতে পারেন, সেজন্য আমরা জনশক্তিকে দক্ষ করার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। সম্ভাবনাময় খাতে এফডিআই সুবিধা দিতে বাংলাদেশ অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ সরবারাহে উন্নয়ন ঘটাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আমাদের এই পারস্পারিক সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে।
‘বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি শুধুমাত্র আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ ২৮টি হাই-টেক পার্কে মার্কিন বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।’
বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একজন পরিক্ষীত বন্ধু ও অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
তিনি জানান, বর্তমানে গ্যাস, খনিজ, ব্যাংকিং ও বিমা, বিদ্যুৎ, বস্ত্র, বাণিজ্য খাতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া, উৎপাদনমুখী শিল্প, তথ্য প্রযুক্তি পণ্য ও সেবাখাতে দেশটির উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র অর্থনীতি খাতে বিনিয়োগও মার্কিন ব্যবসায়ীদের জন্য একটি লাভজনক ক্ষেত্র হতে পারে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়ীক উদ্যোগকে সহজ ও লাভজনক করতে, অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রাপ্যতা সহজলভ্য করাসহ সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক পরিবেশের সব উপাদান উন্নত করতে সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে।
কারখানা স্থাপনে জমির সহজলভ্যতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে বলেও জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সূচকগুলোর কথা উল্লেখ করে সভাপতি জানান, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পদ্যোক্তারা টেকসই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সবুজ তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে ৭টিই বাংলাদেশের।
জ্বালানি, এসএমইএ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বা টিভিইটি প্রোগ্রাম ও কারিগরি জ্ঞানের স্থানান্তরের মাধ্যমে যৌথ সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানান মো. জসিম উদ্দিন।
দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংঠন হিসেবে এফবিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম চালু, উভয় দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে বৈঠক এবং বাণিজ্য মেলা আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি সালাহউদ্দিন আলমগীর, এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) এমপি, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল ডেভেলপমেন্ট চেয়ারম্যান জে আর প্রায়র, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়াল, বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরসহ আরও অনেকে।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছে।