কোথাও মধুর চাকের খবর পেলেই সাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুয়েল মামুন। সঙ্গে রাখেন আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া তৈরির সরঞ্জাম এবং মধু রাখার বালতি। সংগ্রহ করেন মধু। আর এভাবে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন তিনি।
এক মৌচাক ভাঙলে পাওয়া যায় ১৫-২০ কেজি মধু। শতভাগ খাঁটি ও বিশুদ্ধ মধু ক্রেতাকে পৌঁছে দেয়ার নিশ্চয়তা দেন মামুন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী মামুনের বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের রতন বরিষ গ্রামে।
২০১৯ থেকে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন মধু সংগ্রহের কাজ। তবে গত বছর করোনা মহামারির শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টাঙ্গাইলে নিজের বাড়ি চলে আসেন তিনি। পরে নিজের এলাকার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়েই আবার শুরু করেন মধু সংগ্রহ।
মধু সংগ্রহের পাশাপাশি সরিষার তেল, খেজুরের গুড়, রাজশাহীর আম, আমসত্ব বিক্রি করেন মামুন। অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে এসব পণ্য বছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকার বেশি মূল্যে বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
তবে মধুর ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন মামুন। তিনি বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাকের মধু সংগ্রহ করা গেলে এই মধু বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। অনলাইনে মধু বিক্রি করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।’
মামুন জানান, মূলত মৌমাছিরা নিজেদের খাদ্য হিসেবেই মধু ফুল থেকে আহরণ করে। ফুলের মধ্যে নেক্টার নামের এক প্রকার মিষ্টি তরল পদার্থ থাকে। প্রথমে ফুল থেকে এই নেক্টার কর্মী মৌমাছিরা পান করে তাদের দেহের মধু থলিতে সংরক্ষণ করে মৌচাকে নিয়ে যায়। পরে মৌচাকে থাকা মৌমাছির মুখে দিয়ে দেয় কর্মী মৌমাছিরা। এরপর মৌচাকের মৌমাছিগুলো ফুলের রসের সঙ্গে তাদের শরীর থেকে নিঃসৃত বেশ কয়েক ধরনের এনজাইম যোগ করে মৌচাকে সেগুলো জমা করে।
মধু শক্তি প্রদানকারী খাদ্যগুলোর মধ্যে একটি। দেহে তাপ ও শক্তি সঞ্চার করে শরীরকে সুস্থ রাখে। মধুতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। প্রাকৃতিক মধুর অনেক চাহিদা রয়েছে।
মামুন বলেন, ‘মধু সংগ্রহের কাজে সহযোগী হিসেবে আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন কাজ করেন। আমরা সারা বছর গ্রামগঞ্জে সাইকেল চালিয়ে প্রাকৃতিক চাকের মধুর সন্ধান করি। কোথাও মধুর সন্ধান পেলে ছুটে যাই সেখানে। মধু সংগ্রহ করার সরঞ্জাম সব সময় আমাদের সঙ্গেই থাকে। এরপর চোখ খোলা রেখে পুরো শরীর ঢেকে আমাদের একজন মৌচাক কাটি। সঙ্গে রাখা সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই আমরা মধু সংগ্রহ করি।’
এই উদ্যোক্তা জানান, শীতকালে প্রকৃতিতে ফুল বেশি ফোটে। অন্যান্য ঋতুর তুলনায় এই সময়েই মৌচাকগুলোতে মধুও বেশি পাওয়া যায়।
মধু চেনার সঠিক উপায়ও জানালেন মামুন। বলেন, ‘মানুষ মধু কিনতে গিয়ে ব্যাপক সংশয়ে পড়েন। মধু চেনার বেশ কিছু প্রচলিত উপায় রয়েছে। সেগুলো নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কও আছে। চুন দিয়ে পরীক্ষা, ফ্রিজে রেখে পরীক্ষা, পিঁপড়া দিয়ে পরীক্ষা-এগুলো আসলে সঠিক উপায় না।
‘আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা ক্রেতাদের ঠকানোর জন্য মধুতে আগুনে জ্বেলে ও পানি ঢেলে পরীক্ষা করে দেখান। এগুলো মধু চেনার সঠিক উপায় নয়। একমাত্র ল্যাবটেস্টই আসল মধু চেনা যায়। তবে আসল মধুর নিজস্ব স্বাদ ও ঘ্রাণ থাকে যেটি অনুধাবন করা যায়।’