চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে সিলেট নগরের রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দুপুরে ফুলজান বেগম মারা যান। এরপর ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে হাসপাতালটিতে ভাঙচুর চালান রোগীর স্বজনরা। পরে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে স্বজনদের সংঘর্ষ বাধে। এতে দুই পক্ষের প্রায় ১০ জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এ সংঘর্ষ থামায়।বিকেলে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা নগরের পাঠানটুলায় অবস্থান নিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন।মারা যাওয়া ফুলজান বেগম সিলেট জেলা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ শ্রমিক সমিতির সহসম্পাদক মাহবুব আলমের মা। সড়ক অবরোধকালে শ্রমিক সমিতির সদস্যরা যোগ দেন। প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা।হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার ফুলজান বেগম দিন পাঁচেক আগে পেটে টিউমার নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। গত সোমবার তার অস্ত্রোপচার হয়। এরপর তিনি হার্ট অ্যাটাক করলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দুপুরে তিনি মারা যান।মৃতের ছেলে মাহবুব আলমের অভিযোগ, তার মাকে ভুল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ ছাড়া তিন দিন আগে মারা গেলেও তাকে তিন দিন আইসিইউতে রেখে বিল নেয়া হয়েছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।বুধবার দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফুলজান বেগমের মৃত্যুর ঘোষণা দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বজনরা। তারা হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় স্বজনরা হাসপাতালটির আইসিইউ কক্ষ ও গাড়ি ভাঙচুর করেন। হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।হাসপাতাল এলাকা পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর রোগীর স্বজনরা পাঠানটুলা এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে অবস্থান নেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় সিলেট জেলা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ শ্রমিক সমিতি। তারা সড়কে এলোপাতাড়ি ট্রাক ফেলে সড়ক অবরোধ করে।
সড়ক অবরোধকালে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে তাদের মারধর করার অভিযোগ তোলেন।বিকেল ৪টা থেকে এই অবরোধ প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। এ সময় সড়কের দুই দিকে তীব্র যানজট লেগে যায়। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নগরের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, এক নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার স্বজন ও হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং কিছু ভাঙচুর হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এরপর সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়।লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. আবেদ হোসেন বলেন, ‘ওই নারী পেটে টিউমার নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এটা গাইনি সমস্যা। তবে সোমবার অস্ত্রোপচার শুরুর পর দেখা যায়, টিউমারটি তার নাড়িভুঁড়ির মধ্যে। পরে জেনারেল সার্জনরা এই অস্ত্রোপচার করেন।অধ্যক্ষ বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর পর্যবেক্ষণ কক্ষে থাকা অবস্থায় ওই নারী হার্ট অ্যাটাক করেন। পরে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিলেন। যা প্রতি মুহূর্তে আমরা রোগীর স্বজনদের জানিয়েছি।’তিন দিন আগেই নারী মারা গেছেন, স্বজনদের এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, এভাবে রোগীর মৃত্যুর পর যদি অভিযোগ তোলা হয় এবং ভাঙচুর চালানো হয়, তবে তো চিকিৎসকরা আর জটিল কোনো রোগীর চিকিৎসায় উৎসাহ পাবেন না। বরং রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে এড়িয়ে যাবেন।