সরকার বিএসইসির পক্ষে- অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এমন মন্তব্যের পর দিন উৎকণ্ঠা কাটিয়ে উত্থান হলো পুঁজিবাজারে।
তিন কর্মদিবসের মধ্যে মাঝে এক দিন ছাড়া বাকি দুই দিন বড় পতন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে ব্যাংকের অবণ্টিত লভ্যাংশ জমা দিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতপার্থক্যের খবরে এই উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছিল।
সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার লেনদেনের শুরুতে সূচক বেড়ে গেলেও সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে আগের দিনের চেয়ে সূচক ৩৮ পয়েন্ট কমে যাওয়ায় আরও উৎকণ্ঠা শুরু হয়। তবে এরপর থেকে শেয়ার মূল্য বাড়তে থাকে। সময় যত গড়িয়েছে, শেয়ার দরের পাশাপাশি সূচক তত বেড়েছে।
আগের দিন ৭৭ পয়েন্ট সূচক হারানোর পরদিন বাড়ল ৫৬ পয়েন্ট। বেড়েছে লেনদেনও। ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
দিন শেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৯৬ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১০৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ২ হাজার ৯৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানি আর পতন হওয়া কোম্পানির মধ্যে সংখ্যার ব্যবধান খুব একটা বেশি না হলেও সূচকের উত্থানের কারণ অন্য। যেসব কোম্পানি দর হারিয়েছে, তার শেয়ারমূল্য কমার শতকরা হার খুব একটা বেশি না। তবে যেগুলোর দর বেড়েছে, সেগুলো শতকরা হারে বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
৫ থেকে ৯ শতাংশ বেড়েছে ২৩টি কোম্পানির শেয়ার দর। এর মধ্যে চারটির দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। ৮ থেকে ৯ শতাংশ বেড়েছে ৪টির দর। তিনটির বেড়েছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ। তিনটি বেড়েছে ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে।
৫ শতাংশের বেশি ও ৬ শতাংশের কম বেড়েছে ৯টির দর। ৪ শতাংশের বেশি কিন্তু ৫ শতাংশের কম বেড়েছে ৮টির দর। ৩১টির দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি কিন্তু ৪ শতাংশের কম। ১৪টির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি, কিন্তু ৩ শতাংশের কম। ৪৯টির দর বেড়েছে ১ শতাংশের বেশি, তবে ২ শতাংশের কম। আর ৫৯টির দর বেড়েছে ১ শতাংশের কম।
অন্যদিকে একটিমাত্র কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে ৯টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ৩ শতাংশের বেশি। আরও ১৫টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ২ শতাংশের বেশি কিন্তু ৩ শতাংশের কম। ৪৮টির শেয়ার দর কমেছে ১ শতাংশের বেশি, ২ শতাংশের কম। ৮২টির শেয়ার দর কমেছে ১ শতাংশের কম।
মুনাফায় থাকা স্বল্প মূলধনি কোম্পানির পাশাপাশি বড় মূলধনি বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, আর্থিক খাতের বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার দর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বৃদ্ধি পাওয়া সূচক বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
খাতওয়ারি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আগের দিনের মতোই সবচেয়ে ভালো দিন গেছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতে। খাদ্য, বস্ত্র এবং ওষুধ ও রসায়নের মতো খাতগুলোর বেশির ভাগ কোম্পানি ভালো করেছে। জ্বালানি এবং প্রকৌশল খাতেও দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা।
তবে পুঁজিবাজার নিজেকে ফিরে পাওয়ার দিনও ব্যাংকিং খাত এখনও নিজেকে হাতড়ে বেড়াচ্ছে। বিমা খাতে আরও দরপতন হয়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতেও উচ্ছ্বাস নেই।
তিন দিনের উৎকণ্ঠা
উড়তে থাকা পুঁজিবাজারে রোববার সূচক ৭৮ পয়েন্ট বাড়ার পর সেখান থেকে ৫৬ পয়েন্ট পতনে লেনদেন শেষ হয়। সেদিন অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকা স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর পতন হয় ঢালাও। ৫৪টি কোম্পানির শেয়ার দর সেদিন কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে।
পরদিন ঘুরে দাঁড়ালেও মঙ্গলবার আবার পতন হয়। এক দিনে কমে যায় ৩০০ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে পতনের হার রোববারের মতো এত বেশি ছিল না।
মঙ্গলবারের এই পতনের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির একটি বৈঠকে মতভিন্নতার বিষয়টি।
পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ নিয়ে যে তহবিল গঠন করা হয়েছে, তাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবণ্টিত লভ্যাংশ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সেই বৈঠকের কারণে।
যেসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার কারণে সূচক বেড়েছে সবচেয়ে বেশি
বিএসইসি তিন বছরের অবণ্টিত সব লভ্যাংশ তহবিলে জমা দিতে বলছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী এটা সম্ভব হবে না। এই আইন অনুযায়ী টাকার দাবিদার না থাকলে ১০ বছর পর তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হবে। পরে সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
তবে বিএসইসি বলছে, এই বিধানটি আমানতের ওপর প্রযোজ্য। অবণ্টিত লভ্যাংশ এই আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যাওয়ার কথা না।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতভিন্নতা নিয়ে কথা বলেন মঙ্গলবার। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ মেটানোর কথা বলেন। পাশাপাশি এও বলে দেন যে, বিএসইসির অবস্থানই সরকারের অবস্থান।
আগ্রহের কেন্দ্রে আর্থিক খাত
টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সবচেয়ে বেশি লেনদেন হলো ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতে। শেয়ারদরও বেড়েছে সিংহভাগ কোম্পানির। আগের তিন তিনশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া লেনদেন হয়েছে চারশ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই।
এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত দীর্ঘদিন ধরে। বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯টির, একটির দর ১০ পয়সা কমেছে। বাকি দুটির দর পাল্টায়নি।
আইপিডিসি, ন্যাশনাল হাইজিং ফাইন্যান্স, আইডিএলসি, ইসলামিক ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, বে লিজিংয়ের শেয়ার দর বেড়েছে ১ টাকার বেশি। শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আইপিডিসির দর। দ্বিতীয় অবস্থানে ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স।
আগের দিন ৩০০ কোম্পানির দর পতনের ভিড়েও এই খাতের কোম্পানিগুলো বেশ ভালো করেছিল। সেদিন লেনদেন হয়েছিল ৩০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেটি আরও বেড়ে হয়েছে ৩৮৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
ভালো দিন খাদ্য খাতেও
আর্থিক খাতের পর সবচেয়ে ভালো দিন গেছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতেও। এই খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩টির, কমেছে ৬টির, আর অপরিবর্তিত ছিল একটির দর।
লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৮২ কোটি ১২ লাখ টাকা।
এই খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮.৩৮ শতাংশ বেড়েছে এএসসিএল প্রাণের দর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.০৮ শতাংশ বেড়েছে ৫ বছর পর উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় থাকা এমারেল্ড অয়েলের দর।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪.৯৮ শতাংশ বেড়েছে রহিমা ফুডের দর।
গত সপ্তাহে ১০০ টাকার মতো শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়া ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানির শেয়ারদর এক পর্যায়ে ১৭ টাকা ৮০ পয়সা কমে গেলেও শেষ পর্যন্ত বেড়েছে ৪ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রকৌশল, ওষুধ, জ্বালানি, বস্ত্র ও বিবিধ খাতেও ভালো দিন
আগের দিন ব্যাপকভাবে দরপতন হয়েছিল এসব খাতে। তবে নিজেদের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছে তারা।
প্রকৌশল খাতের ৪১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২১টির, কমেছে ১৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৪টির। আগের দিন এই খাতের ৪টি কোম্পানির দর বেড়েছিল, কমেছিল বাকি ৩৮টির।
তবে শেয়ারদর বাড়লেও লেনদেন কমে গেছে। আগের দিন এই খাতে ২৯৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা লেনদেন হলেও তা কমে হয়েছে ১৯৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এই খাতের কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯.৪৭ শতাংশ বেড়েছে ডমিনেজ স্টিলের দর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮.১৭ শতাংশ বেড়েছে বিডি ল্যাপসের দর। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪.৪৩ শতাংশ বেড়েছে রংপুর ফাউন্ড্রির দর।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ৪.০৫ শতাংশ দর কমেছে ওয়ালটনের দর। কোম্পানিটি ০.৯৩ শতাংশ শেয়ার ছেড়েছিল পুঁজিবাজারে। তাদেরকে মোট ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার নির্দেশ দেয়ার পর থেকেই দর হারাচ্ছে।
শুরুতে এক বছরের মধ্যে এই শেয়ার ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা শেষে মঙ্গলবার তারা জানিয়েছে, যত শেয়ার ছাড়তে হবে, তার অর্ধেক ছাড়া হবে তিন বছরে। বাকি অর্ধেকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এর পরে জানানো হবে। তবে এই ঘোষণার পরেও দরপতন ঠেকানো যায়নি।
ওয়ালটনের দরপতনেই সূচক থেকে কমে ৮০ পয়েন্ট
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩.৩৭ শতাংশ বেড়েছে লোকসানি রেনউইক যগেশ্বরের দর। লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ারদর সম্প্রতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল। ফ্লোর প্রাইস ৯০০ টাকায় যে শেয়ার লেনদেন হতো না বললেই চলে, সেই শেয়ারদর এক হাজার ৪০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে চলতি সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনেই দরপতন হচ্ছে।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। বাকিগুলোর মধ্যে ১৫টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১২টির। লেনদেন হয়েছে ২২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন খানিকটা বেশি ছিল। সেদিন হাতবদল হয় ২২৩ কোটি ৪ লাখ টাকার।
এই খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭.৪৯ শতাংশ বেড়েছে স্বল্প মূলধনি ফার্মা এইডের শেয়ারদর।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.১৩ শতাংশ বেড়েছে বড় মূলধনি বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারদর। কোম্পানিটি বহুজাতিক সানোফি এভেনটিসের ৫৪.৬০ শতাংশ শেয়ার কিনেছে। ভারত থেকে করোনার টিকা আনার সময় লোকাল এজেন্ট হওয়া এই কোম্পানিটির শেয়ারদরে হাওয়া লেগেছিল। এবার বাড়ছে এই খবরে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত ছিল রেকর্ড ডেটের কারণে। বাকিগুলোর মধ্যে বেড়েছে ১১টির দর, কমেছে ৯টির। অপরিবর্তিত ছিল বাকি দুটির দর। লেনদেন হয়েছে ১৩৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এই খাতে লেনদেন ব্যাপকভাবে কমে গেছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
সবচেয়ে বেশি শেয়ার প্রতি ১২১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৫ শতাংশ বেড়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের দর। শেয়ার দর বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৪৭ টাকা ৩০ পয়সা। অথচ দিনের শুরুতে এক পর্যায়ে দাম কমে দাঁড়িয়েছিল ২ হাজার ৩৭০ টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪.০৯ শতাংশ দর বাড়ে সাইফ পাওয়ারটেকের দর। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪.০৩ শতাংশ বাড়ে শাহজিপাওয়ার কোম্পানির।
অন্য কোম্পানিগুলোর দর বৃদ্ধি ও কমার হার খুব একটা বেশি ছিল না। এই খাতের আলোচিত আরেক কোম্পানি কেপিসিএল দর হারিয়েছে ২০ পয়সা।
আগের দিন ব্যাপকভাবে দর হারানো বস্ত্র খাতের অর্ধেক কোম্পানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৪টির, কমেছে ২৩টির। বাকিগুলার দর ছিল অপরিবর্তিত।
তবে লেনদেন কমে গেছে ব্যাপকভাবে। আগের দিন ২৩১ কোটি ৬ লাখ টাকা লেনদেন হওয়া খাতটিতে হাতবদল হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। সাম্প্রতিককালে এত কম লেনদেন এর আগে হয়নি।
ব্যাংক-বিমা হতাশার বৃ্ত্তে
পুঁজিবাজার নিজেকে খুঁজে পাওয়ার দিনও ব্যাংক ও বিমা খাতের বিনিয়োগকারীরা অতীত হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। দুই একটি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লেও সিংহভাগ কোম্পানিই হতাশ করেছে।
আগের দিনের তুলনায় ব্যাংক খাতে দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির সংখ্যা কিছুটা বেশি হলেও লেনদেন কমে গেছে।
এই খাতের ৩২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯টির, কমেছে ১৩টির, অপরিবর্তিত ছিল বাকি ১০টির দর। লেনদেন হয়েছে ১৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ১৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ার প্রতি ১ টাকা বেড়েছে এনআরবিসির। লেনদেনের শুরুতে ১ টাকা হারিয়ে ফেললেও দিন শেষে ২০ পয়সা বেড়েছে ইবিএলের।
বাকিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধি বা কমার হার একেবারেই উল্লেখযোগ্য নয়।
অন্যদিকে গত বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি আর এপ্রিল থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর একদিন বাড়লে চারদিন কমে-এই বৃত্তেই চলছে।
এই খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে ৯টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৪২টির দর। লেনদেন হয়েছে ২০৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ২০০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
বিবিধ খাতের লেনদেন বরাবরের মতোই চাঙা থাকে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণে। এই খাতের ১৩৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা লেনদেনের মধ্যে এই একটি খাতের অবদানই ১১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।
২০১০ সালের মহাধসের পর ব্যাপকভাবে দর হারানো কোম্পানিটি এক দশক পর নিজেকে ফিরে পাচ্ছে। ২০২০ সালে এক পর্যায়ে ১৩ টাকায় নেমে আসা শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ১২৭ টাকা ২০ পয়সা। আগের দিন দাম ছিল ১১৯ টাকা ৪০ পয়সা। এক দিনে বেড়েছে ৭ টাকা ৮০ পয়সা।
দুর্দান্ত লভ্যাংশ ঘোষণার পর থেকে ঘুমিয়ে যাওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের জেগে উঠার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
৩৬টি ফান্ডের মধ্যে ১৩টির দর বৃদ্ধি ও ৯টির দর হারানো বলতে গেলে কোনো প্রভাবই রাখতে পারেনি বাজারে। দর বৃদ্ধি ও হারানোর মধ্যে ব্যবধান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১০ থেকে ২০ পয়সা।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৪৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।
প্রধান অন্য খাতগুলোর মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি খাতের ১১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪টির, কমেছে ৭টির। লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৩৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।