যশোরের কেশবপুর উপজেলার বিল খুকশিয়া এলাকায় মাছের ঘেরের ভেড়িতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। এ আবাদে ভালো ফলন পেয়ে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে গ্রীষ্মকালীন এ তরমুজ। তরমুজ চাষে লাভবান হওয়ায় অনেক কৃষক নতুন করে এ আবাদে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা তরমুজ আবাদ পরিদর্শন করে চাষিদের এ আবাদে উদ্বুদ্ধ করছেন।
কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে ১৮ প্রায় কিলোমিটার দূরে শ্রীহরি নদীর তীরে অবস্থিত বিল খুকশিয়া। এ বিলের ৬ হাজার ৩৭৫ বিঘা ফসলি জমি দীর্ঘ ২০ থেকে ২২ বছর যাবৎ জলাবদ্ধতা থাকায় কৃষকেরা ফসল ফলাতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন। বিলের জলাবদ্ধতা নিরসন করে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রীহরি নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এবং বিল খুকশিয়ার তলদেশ উঁচু করার জন্য জোয়ার আঁধার (টিআরএম) প্রকল্প গ্রহণ করলেও সফলতা মেলেনি। প্রকল্প শেষে জমির মালিক কৃষকরা বিলটিতে মাছের ঘের তৈরি করেন এবং মাছের ঘেরের ভেড়িতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেন। তরমুজ চাষ করে কৃষকরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।
সরেজমিন বিল খুকশিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘেরের বেড়িতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। কৃষক ইকবাল হোসেন দৈনিক বাংলা পত্রিকার প্রতিনিধি হারুনার রশীদ বুলবুল কে বলেন, তিনি ১৩ বিঘা মাছের ঘেরের ভেড়িতে ১ হাজার ৪০০টি তরমুজের মাদা তৈরি করে ফলন পেয়েছেন ২৭৫ মণ। প্রতি মণ তরমুজ ১ হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। তিনি সর্বোচ্চ ১৪ কেজি ওজনের তরমুজ পেয়েছেন। একইভাবে আবদুল হালিম খান মাছের ঘেরের ভেড়িতে ১২০টি মাদা তৈরি করে ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। কৃষক আবদুল কুদ্দুস ৭ বিঘা মাছের ঘেরের ভেড়িতে তরমুজ চাষ করেছেন। তার উৎপাদিত তরমুজ আকারেও বেশ বড়। সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি কে বলেন , দীর্ঘ ২০ থেকে ২২ বছর বিল খুকশিয়া জলাবদ্ধতা হয়ে থাকায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। ২০০৫ সালে ওই বিলে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প শেষে বিলটিতে কৃষকরা মাছের ঘের তৈরি করেন। ওইসব ঘেরের ভেড়িতে এ বছর কৃষকরা তরমুজ চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। ধান, মাছ চাষের পাশাপাশি তরমুজ চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফিরেছে। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় অনেক শিক্ষিত যুবক গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করায় ব্যাপক সাড়া দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিল খুকশিয়ায় মাছের ঘেরের ভেড়িতে তরমুজ চাষ ওই এলাকার কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করছে। এশিয়ান-১, পাকিজা সুপার, ব্লাক কিং, ব্লাক কুইন জাতের তরমুজ এখানে বেশি আবাদ করা হয়েছে। এ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ব করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন দৈনিক বাংলা কে বলেন, মাছের ঘেরের ভেড়িতে তরমুজ চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি চাষ করে এলাকার কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের তরমুজ চাষে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমার পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করবো।