বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সতর্ক করেছে সবাই, গায়ে মাখেনি তারা

  •    
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৮:২৫

পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক ফেসবুক পেজগুলোতে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছিল গত এক মাস ধরে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে সাবধান থাকতে নানা জন এমনকি বিএসইসি থেকে পরামর্শ এসেছে। তবে যারা সাবধান করেছে, তাদের আক্রমণ করে নানা কটূ কথা লেখা হচ্ছিল। বলা হয়, যত চেষ্টাই করা হোক না কেন, সেই সঙ্গে দাম আরও বাড়বে, এমন কথা বলে প্রলুব্ধ করা হতে থাকে। তবে রোববার লেনদেনের চিত্র ভয় ধরিয়েছে এসব কোম্পানির শেয়ারধারীদের মনে।

স্বল্প মূলধনি ও দুর্বল কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর যখন কেবল বেড়েই চলছিল, তখন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক থেকে শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও বিনিয়োগকারীদের নানাভাবে বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা গা করেননি।

প্রতিবছর ভালো লভ্যাংশ দেয়, মৌলভিত্তি ভালো, এমন কোম্পানির শেয়ারদর তলানিতে পড়ে থাকা অবস্থায় লোকসানি, লভ্যাংশ পাওয়ার আশাও নেই- এমন কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়তে থাকে তরতর করে।

পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক ফেসবুক পেজগুলোতে এসব দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে নানা কথাবার্তা লেখা হতে থাকে। যারা সাবধান করেছে, তাদের আক্রমণ করে নানা কটূ কথা লেখা হয়। বলা হয়, যত চেষ্টাই করা হোক না কেন, সেই সঙ্গে দাম আরও বাড়বে, এমন কথা বলে প্রলুব্ধ করা হতে থাকে।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার এক দিনের লেনদেনের চিত্রেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। লোকসানি প্রায় সব কোম্পানির দর হারানোটা প্রধান খবর নয়, প্রধান খবর হচ্ছে দরপতনের হার।

শতকরা ৫ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে ৫৪টি কোম্পানি। এর মধ্যে ১০ শতাংশের আশপাশে দর কমেছে ১০টির মতো।

এসব কোম্পানির দর যখন ক্রমেই বাড়ছিল, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তিনটি উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রথমে ৯টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গঠন করা হয় আরও একটি কমিটি।

তবে এই কমিটি গঠনের পর গুজব ছড়ানো হয় যে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে। ফলে বোনাস ও রাইট শেয়ার দিতে হবে। আর বাংলাদেশে বোনাস ও রাইট শেয়ার দেয়া মানেই শেয়ারের উল্লম্ফন। এসব গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর আরও তেতে ওঠে এসব কোম্পানির শেয়ার দর।

কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। কারণ বিএসইসি এও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কোনো কোম্পানি চাইলেই আর বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে কমিশনের পূর্বানুমতি নিতে হবে।

রোববার সবচেয়ে বেশি দর হারানো কোম্পানির তালিকা। এর সবগুলো লোকসানি যেগুলোর দাম বেড়েছিল অস্বাভাবিক হারে।

এরপর পিই রেশিও ৪০-এর বেশি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি এসব শেয়ারে মার্জিন ঋণ দেয়া হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ আসে।

এর মধ্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বিনিয়োগকারীদের মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ার দর হঠাৎ বেড়ে গেলেও এতে ঝুঁকি থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, যাদের ঝুঁকি মোকাবিলার সামর্থ্য নেই, তারা যেন সেসব শেয়ারে বিনিয়োগ না করেন।

কিন্তু এতেও থামার নাম ছিল না দুর্বল কোম্পানির উত্থান।

কখনও লভ্যাংশ না দেয়া, লোকসানে জর্জরিত, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য তো নেই-ই, সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ দায়ে ভোগা শ্যামপুর সুগারের মূল্য গত তিন মাসে তিন গুণ হয়েছে।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ মিথুন নিটিংয়ের শেয়ারদর এই সময়ে ১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকা ৪০ পয়সা।

শেয়ারপ্রতি চার টাকার মতো লোকসান থাকা অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ আর প্রায় সমপরিমাণ লোকসানে থাকা সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ারদরও এই সময়ে বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।

শেয়ারপ্রতি ১০০ টাকার বেশি লোকসান থাকা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, চার বছর ধরে হিসাব না দেয়া ও বিপুল পরিমাণ লোকসান থাকা বিআইএফসি, তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ১০ টাকার বেশি লোকসান দেয়া ফাস ফাইন্যান্স, চার বছর ধরে বন্ধ থাকা সিএনএ টেক্সটাইল, কোম্পানি বন্ধ করে মালিকপক্ষ উধাও হয়ে যাওয়া ফ্যামিলিটেক্সের শেয়ারদরও গত তিন মাসে কোনোটি হয়েছে দ্বিগুণ, কোনোটি তিন গুণ, কোনোটি চার গুণ।

এমন কোম্পানি আছে ৪০টির বেশি, যেগুলোর শেয়ারদর কেবল বেড়ে চলা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। কিন্তু থামার নাম ছিল না।

অবশেষে একটি দিন এলো, যেদিন ঢালাও পতন হলো এমন শেয়ারের, যা অবশ্যম্ভাবী বলেই এত দিন বাজার বিশ্লেষকরা বলে আসছিলেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, তাই ফলল রোববার। আর লেনদেন চলাকালেই পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক ফেসবুক পেজগুলোতে উঠতে থাকে হতাশার নানা পোস্ট। একজন লেখেন, যখন শেয়ারদর বাড়ছিল, তখন অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু আজ তারা কোথায়।

গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছিল। রোববার সব কোম্পানির ব্যাপক দরপতন হয়। এতে হতাশা ছড়িয়েছে শেয়ারধারীদের মধ্যে। ফাইল ছবি

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘এসব কোম্পানির শেয়ার কেনা নিয়ে আগেই বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করা হয়েছিল। এখন দর কমে যে পর্যায়ে নেমে এসেছে, সে দামে যদি আবার ফেরত যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। কিন্তু দর যদি সেখানে আর না যায়, তাহলে বিনিয়োগ আটকে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘মুনাফা পাওয়া গেলেও এসব স্বল্প মূলধনি ও দুর্বল ক্যাটাগরির কোম্পানিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে বিনিয়োগ করার আগে কোম্পানির অবস্থা আগে থেকে দেখে নিতে হবে।’

বিএসইসি চলতি বছরের শুরু থেকেই দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর বোর্ড ভেঙে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া শুরু করে। এমন উদ্যোগে প্রায় ১২টি কোম্পানির মধ্যে রিংশাইন ও আলহাজ টেক্সটাইল ছাড়া বাকিগুলো এখনও আলোর মুখ দেখেনি। আর একটি কোম্পানি কেবল উৎপাদন শুরু করার মতো পর্যায়ে এসেছে। সেটি হলো এমারেল্ড অয়েল।

কিন্তু বাকি ৯টি কোম্পানির শেয়ারদরও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।

আবার সম্প্রতি ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফেরা চার কোম্পানির দুটির দর বাড়ছে রকেট গতিতে। গত ১৩ জুন লেনদেন শুরু করা দুটি কোম্পানির শেয়ারদর তিন মাসে বেড়েছে দেড় হাজার শতাংশের বেশি। একটি হচ্ছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, অন্যটি পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড।

তমিজউদ্দিনের দর ১৩ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে ২০২ টাকা হয়ে যায়। আর পেপার প্রসেসিংয়ের দর ১৬ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে হয়ে যায় ২৪৭ টাকা।

মনোস্পুল পেপার ও মুন্নু ফেব্রিক্সের শেয়ারদরও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।

৫০ টাকায় মূল মার্কেটে ফেরা মনোস্পুলের সর্বোচ্চ দর ওঠে ২৪৯ টাকা ৮০ পয়সা, আর ১০ টাকায় ফেরা মুন্নু ফেব্রিক্সের দর ওঠে ৩৭ টাকা ২০ পয়সা।

আরও কোম্পানির যে অবস্থা

শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ার উত্থান শুরু ২০ জুন। সেদিন দাম ছিল ৪২ টাকা ১০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে উঠে যায় ১৪১ টাকা ২০ পয়সায়।

তবে এখন কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকা ৭০ পয়সায়।

মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেডের শেয়ারদরের উত্থান শুরু ২৭ জুলাই থেকে। যখন এর শেয়ারপ্রতি দর ছিল ১০ টাকা ৫০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে হয়ে যায় ২৬ টাকা ৩০ পয়সা।

তারপর দর পতনের মুখে পড়ে কোম্পানিটি। সাত কার্যদিবস শেষে রোববার কোম্পানিটির শেয়ার দর নেমে আসে ১৯ টাকা ৮০ পয়সা।

বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের শেয়ার দরের উত্থান শুরু ৪ মে। সেদিন শেয়ারপ্রতি দর ছিল ১১ টাকা ৭০ পয়সা।

সেখান থেকে দর বেড়ে ১ সেপ্টেম্বর শেয়ারদর পৌঁছে ৩১ টাকা ২০ পয়সায়। তারপর পতন শুরু। সাত কার্যদিবসে দর নেমে এসেছে ২৪ টাকা ৪০ পয়সায়।

কখনও লভ্যাংশ না দেয়া সাভার রিফ্যাক্টরিজের শেয়ারদরের উত্থান শুরু ২১ জুন থেকে। সেদিন দর ছিল ১৫৫ টাকা। শেয়ারপ্রতি মাত্র ৬ টাকা সম্পদমূল্য থাকা কোম্পানিটির দর এত কীভাবে হয়, এ নিয়ে প্রশ্নের মধ্যে সেটি বেড়ে হয়ে গেছে দ্বিগুণ।

৯ সেপ্টেম্বর শেয়ারপ্রতি দর পৌঁছে ২৯৯ টাকা ৯০ পয়সায়। সেখান থেকে এক দিনের ব্যবধানে শেয়ারদর কমে নেমে এসেছে ২৭৩ টাকা ৭০ পয়সায়।

এক দশকেও লভ্যাংশ না দেয়া মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের উত্থান শুরু ২১ জুন থেকে। সেদিন শেয়ারপ্রতি দর ছিল ১১ টাকা ৬০ পয়সা। ক্রমাগত বেড়ে ২ সেপ্টেম্বর শেয়ারদর পৌঁছে ২৯ টাকা ২০ পয়সায়। তারপর পাঁচ কার্যদিবসে কমে দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ২০ পয়সায়।

তাল্লু স্পিনিং মিলসের দর বাড়তে শুরু করে ৩ মে থেকে। সেদিন শেয়ারদর ছিল ৪ টাকা। ৬ সেপ্টেম্বর পৌঁছে ১৫ টাকা ৮০ পয়সায়। তারপর দর পতন শুরু। রোববার কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩ টাকা ১০ পয়সা।

এ বিভাগের আরো খবর