মহামারি করোনায় ৫৪৪ দিন পর বাজল স্কুলের ঘণ্টা। স্কুল প্রাঙ্গণ আবারও মুখরিত চিরচেনা সেই রূপে। যেখানে শিক্ষার্থীরা আবার সশরীরে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে আর শিক্ষকরাও পাঠদান করছেন। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার চোখেমুখেই ছিল খুশির ঝিলিক।
রোববার সকাল থেকেই স্কুলের প্রধান ফটকে শিক্ষার্থীদের শরীরে তাপমাত্রা নির্ণয়, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদান শেষে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
সাভার
স্কুল খোলার প্রথম দিনে দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে বেশ উচ্ছ্বসিত। তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই এসেছে স্কুল ড্রেস ছাড়া।
ঢাকার সাভারে অনেক স্কুলে গিয়েই দেখা গেছে এমন চিত্র। স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশনা মেনে শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশ করালেও বেশির ভাগের ছিল না স্কুল ইউনিফর্ম।
আশুলিয়ার গাজীরচট এএম হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম হোসেন নিউজবাংলাকে জানাল স্কুলের পোশাক না পরে আসার কথা।
তামিম বলে, ‘অনেক দিন স্কুল বন্ধ ছিল। তাই ইউনিফর্ম ছোট হয়ে গেছে। নতুন ইউনিফর্ম বানাইতে দিছি। বানানো হলে নতুন ইউনিফর্ম পরে আসব।’
বরিশাল
সরকারঘোষিত সব নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে বরিশালে। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয়েছে পাঠদান।
করোনা মহামারিতে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থী এরই মধ্যে ঝরে পড়েছে। সশরীরে বিদ্যালয়ে আসতে পারায় তাদের মাঝে কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজেও। একটি বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থীকে বসিয়ে পাঠদান করা হয়েছে।
বরিশালের একে ইনস্টিটিউটের সহকারী শিক্ষক জসীম উদ্দিন বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি প্রত্যকে শিক্ষার্থীর হাতও স্যানিটাইজ করা হয়েছে। তারপর সবাইকে ক্লাসে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে।
মথুরানাথ পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘স্কুলের প্রধান ফটকে “নো মাস্ক নো স্কুল”-সংবলিত ব্যানার লাগানো হয়েছে। যে শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরেনি তাদের আমরা মাস্ক সরবরাহ করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়েছে।’
ভোলা
সারা দেশের মতো ভোলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে ভোলার ১ হাজার ৬০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান।
রোববার সকাল থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসবের আমেজ দেখা যায়। প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের হাতে ফুল, কলম ও ক্লাসরুটিন দিয়ে বরণ করেন নেন।
কথা হয় ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এলমার সঙ্গে। এলমা বলে, করোনাকালে অনলাইন ক্লাসে পড়ায় ততটা মনোযোগ বসত না। বোরিং লাগত। এখন স্কুল খুলে দেয়ায় অনেক ভালো লাগছে। সকালে স্কুলে আসার পরে আমরা অনেকটা সারপ্রাইজ হয়েছি। স্যার, ম্যাডামরা আমাদের ফুল ও কলম দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন।’
ভোলা জেলা মাধ্যমিক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মাধব চন্দ্র দাস জানান, জেলায় ২৬৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৪০টি মাদ্রাসা ও ৫০ কলেজে পাঠদান চলছে। এ ছাড়া মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার ভাঙনকবলিত এলাকায় কিছুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে থাকায় তাদের স্থানান্তর করে পাঠদান করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়সহ জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে পাঠদান। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে শিক্ষার্থীদের দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরাও। স্বাস্থবিধি মেনে একটি বেঞ্চে ২ জন শিক্ষার্থীকে বসানো হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ শফিয়ার রহমান জানান, প্রথম দিনে দশম, এসএসসি পরীক্ষার্থী, পঞ্চম শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হওয়ার পর শহরের বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান।
পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস করছে। প্রত্যেকে মাস্ক পরিধান করছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। তারা তা অনুসরণ করবে।’
ময়মনসিংহ
প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর ময়মনসিংহের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এর আগে কয়েক দিন ধরেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় ক্লাসরুমসহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা।
স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে পাঠদান দেয়া হবে বলে জানান শিক্ষকরা।
সিরাজগঞ্জ
দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পা রেখেই আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সশরীরে ক্লাসে ফিরে সবারই চোখেমুখে ছিল খুশির ঝিলিক।
স্কুল খোলার প্রথম দিনে উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও আগামীকাল থেকে আগের মতো শিক্ষার্থী উপস্থিতি পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
নাটোর
নাটোর বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদ হোসেন। রুটিন অনুযায়ী আজ তার ক্লাস না থাকায় বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখতে এসেছে।
সাদ বলে, ‘আজ বড় ভাইয়াদের ক্লাস হবে। তাদের ক্লাস করা দেখতে এসেছি। আমাদেরও ক্লাস হবে ভাবতেই ভালো লাগছে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নাটোরের প্রতিটি স্কুলে হাত ধোয়া ও তাপমাত্রার যন্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রংপুর
দেড় বছর পর খুলেছে শিক্ষার্থীদের প্রাণের বিদ্যালয়। আগ্রহ উচ্ছ্বাস আর উৎসবের কমতি ছিল না রংপুরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। একই আমেজ ছিল শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মাঝেও।
কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ফুল ছিটিয়ে বরণ করা হয়েছে। কোথাও আবার কাটা হয়েছে কেক।
রংপুর মহানগরীর অন্তত ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
বিদ্যালয়ে প্রবেশের আগে গেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিয়েছে প্রত্যেকে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বন্ধুদের কাছে গিয়ে হইহুল্লোড় করতে পারছে না। এক বেঞ্চে কাছাকাছি বসতেও পারছে না। শুধু দূর থেকে হাত নেড়ে বিদ্যালয়ে আসার অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে একে অপরের সঙ্গে।
রংপুর কারমাইকেল কলেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু তালহা বলে, ‘এত ভালো লাগছে যে বলে বোঝাতে পারব না। আর যেন আমাদের স্কুল বন্ধ না হয়, স্যার-ম্যাডামদের একটু বলে দিও।’