বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাঠে থেকে অনলাইনে ব্যবসায় সফল

  •    
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৮:৫৮

তৌহিদ বলেন, ‘শহরে এক চায়ের দোকানে এক ছোট ভাই ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখায়, লোহা দিয়ে তৈরি রুটি তৈরির একটি যন্ত্র। আমি ভিডিও দেখে বাড়ি গিয়ে কাঠ দিয়ে বানানোর চেষ্টা করি এবং সফলতা পাই মাত্র চার দিনে। সেই থেকে এই ব্যবসার শুরু।’

মাগুরা পৌরসভার নালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মোহাম্মদ তৌহিদের বাড়ির চারপাশে পাট ও ধানক্ষেত। বাড়ির রাস্তা বলতে অন্যের জমির আইল ধরে আধা কিলোমিটার হেঁটে প্রথমে যেতে হয় গ্রামের পাকা সড়কে। সেখান থেকে গন্তব্যে।

বর্ষায় কর্দমাক্ত সেই মাঠ পাড়ি দিয়েই প্রতিদিন মাগুরা শহরে যান তৌহিদ। হাতে থাকে ‘রুটি মেকার’ নামে একটি যন্ত্র। অনলাইনে অর্ডার পেয়ে সেগুন কাঠের যন্ত্রটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সারা দেশে পাঠান তিনি।

এলাকায় তিনি পরিচিত তৌহিদ মিস্ত্রি নামে। বাপ-দাদার আমল থেকে তারা কাঠের আসবাবপত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তৌহিদের শুরুও আসবাবপত্র বানানো দিয়ে। তবে পুঁজি কম থাকায় দুই বছর আগে এটি ছেড়ে দেন। এখন রুটি তৈরির কাঠের যন্ত্রটি বানান তিনি।

ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কাঠের এই রুটি মেকার বেচে এখন স্বাবলম্বী তিনি। তার কারখানায় কাজ করেন আরও পাঁচজন। মাসে বিক্রি ৪-৬ লাখ টাকা।

তবে তৌহিদের শুরুটা এত সহজ ছিল না। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এতদূর এসেছেন।

তৌহিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাঠের আসবাবপত্র তৈরির জন্য ভালো পুঁজি লাগে। তাই আমার মতো হতদরিদ্র মানুষের কাজটি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। এরপর শহরে এক চায়ের দোকানে এক ছোট ভাই ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখায়।

‘লোহা দিয়ে তৈরি রুটি তৈরির একটি যন্ত্র। আমি ভিডিও দেখে বাড়ি গিয়ে কাঠ দিয়ে বানানোর চেষ্টা করি এবং সফলতা পাই মাত্র চার দিনে। সেই থেকে এই ব্যবসার শুরু।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে মাগুরার বিভিন্ন প্রান্তে ফেরি করে বিক্রি করতাম। রোদের মধ্যে সারা দিন ছেলেকে নিয়ে বসে থাকতাম। খুব কষ্ট। বিক্রি হতো, তবে সন্তোষজনক না।

‘তবে করোনা যখন শুরু হলো, তখন আমার হাতে একটি নতুন সুযোগ এলো। এলাকার যুবক ছেলেরা আমার রুটি মেকার বিক্রি করতে একটা ফেসবুক পেজ খুলে দিল। সেখানে ছবিসহ ভিডিও দিলাম। এরপর অর্ডার পেতে থাকলাম। আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’

এখন তার কারখানায় আরও পাঁচজন কাজ করেন জানিয়ে তৌহিদ বলেন, ‘সারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে অর্ডার পাচ্ছি ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আমার বাড়ি মাঠের মাঝে বলে নেটওয়ার্ক পেতে সমস্যা হয়। তবু আমি এসব বাধাকে মেনেই ব্যবসা করছি।’

এখন অর্ডারের পরিমাণ এত বেশি যে সময়মতো ডেলিভারি দেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে বলে জানান তৌহিদ। তিনি বলেন, ‘মাল ডেলিভারি দিতে হিমশিম খাচ্ছি এখন। আমার মাল যারা নিয়েছে তারা আবার নিচ্ছে। কারণ আমি ভালো জিনিস তৈরি করি। এ কারণে আমার অনলাইন ব্যবসা এখন মাসে ৪-৬ লাখ টাকার বিক্রিতে পড়েছে।’

রুটি মেকারের বিষয়ে তৌহিদ জানান, সেগুন কাঠের তৈরি যন্ত্রটি তৈরিতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। তবে এটি ব্যবহার করা খুব সহজ। খামির গোল করে যন্ত্রটির মাঝে রেখে ওপর থেকে একটি পাটাতন হাতে ধরে চাপ দিলে বড় গোল আকারের রুটি তৈরি হয়।

তিনি আরও জানান, এই রুটি মেকার দিয়ে এক মিনিটে ১০টি রুটি তৈরি সম্ভব। এতে মানুষের শ্রম বাঁচে, সঙ্গে কষ্টও কমে; এ জন্য চাহিদা বেশি। গত দুই বছরে দেশের প্রায় সব জেলায় তিনি এটি পাঠিয়েছেন।

দামের বিষয়ে জানান, মানভেদে তিন ধরনের দাম রয়েছে তার রুটি মেকারের। ৭৫০, ৯০০ এবং ১ হাজার ১৫০ টাকায় একটি যন্ত্র বিক্রি করেন তিনি।

স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামান হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পড়ালেখা না জেনেও তৌহিদ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছেন। এটা খুবই পজিটিভ একটা বিষয়। কত শিক্ষিত বেকার কত কিছুই জানে। তারাও অনেকে অনলাইনে ব্যবসা করছে, কিন্তু দুদিন পর লস গুনে হতাশ হচ্ছে।

‘অথচ তৌহিদ মিস্ত্রি কাদা মাঠে বসবাস করে। একটা পিসিও নেই। শুনেছি তার এক ভাস্তের (ভাইয়ের ছেলে) মোবাইল ব্যবহার করে সে লক্ষ টাকার ব্যবসা করছে। তার মাল সারা দেশের মানুষ কিনছে। ভাবতে ভালো লাগে যে আমার এলাকায় এ রকম একজন উদ্যোক্তা কাজ করছে।’

এ বিভাগের আরো খবর