নোয়াখালীর মাইজদীতে আওয়ামী লীগের তিন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এই সংঘর্ষে অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, সোমবার আওয়ামী লীগের তিন গ্রুপের সমাবেশ ও আলোচনা সভাকে কেন্দ্র করে আজ শোডাউন করা হয়। ওই শোডাউন থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে।
রোববার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাইজদী টাউন হলকে কেন্দ্র করে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সোমবার সকাল ১০টায় শহরের টাউন হল মোড়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সমাবেশের ডাক দেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহীন।
একই সময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।
অন্য দিকে একই সময়ে নোয়াখালী পৌরসভায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন করেন মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল।
রোববার বিকেলে শহরের রশিদ কলোনি থেকে মোটরসাইকেল শোডাউন বের করেন শিহাব উদ্দিন শাহীনের সমর্থকরা। শোডাউনটি শহরের বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে তাদের বাধা দেয় পুলিশ।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থাকা সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারীরা শাহীনের সমর্থকদের ধাওয়া দেয়ার চেষ্টা করলে তারা (শাহীনের অনুসারীরা) পাল্টা ধাওয়া করে পুলিশ এবং একরামের অনুসারীদের। পুলিশ তখন লাঠিচার্জ করে।
এতে শাহীনের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত হন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলম ছিদ্দিকী রাজু, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন, যুবলীগ কর্মী মোহন, ছাত্রলীগ নেতা রাজু, পথচারী আলমগীর, জনি, ইসতিয়াক, নাসিমা বেগমসহ অন্তত ১৬জন।
নোয়াখালীর মাইজদীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলের সমর্থকরা সোমবারের কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে বিকেল ৫টার দিকে শহরের প্রধান সড়কে শোডাউন শুরু করেন। শোডাউনটি টাউন হল মোড়ে পৌঁছলে তাদের ওপর সাংসদ একরামের অনুসারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবারও শহরের পৌর বাজার থেকে রশিদ কলোনি পর্যন্ত প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন শিহাব উদ্দিন শাহীনের অনুসারীরা।
মেয়র সোহেল বলেন, ‘আমার নেতা-কর্মীরা সোমবারের কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে বিকেলে শোডাউন বের করে। ওই শোউডাউনে সাংসদ একরামের লোকজন হামলা চালালে আমার পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হন।’
শাহীন বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় সোমবার সকালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের কর্মসূচির উদ্যোগ নিই। ওই কর্মসূচি সফল করতে দলের নেতা-কর্মীরা বিকেলে শহরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রাটি বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে সুধারাম থানার ওসি শাহেদের নেতৃত্বে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ওসির সহযোগিতায় একরাম চৌধুরীর কিছু সমর্থক আমার কর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে আমাদের কর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধ করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।’
মুজিব শতবর্ষের শোভাযাত্রায় পুলিশি বাধার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শাহীন। একই সঙ্গে তিনি ওসি শাহেদের অপসারণ দাবি করেন।
সুধারাম মডেল থানার ওসি শাহেদ উদ্দিন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৯ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
নোয়াখালী পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা
সোমবার জেলা শহরে আওয়ামী লীগের তিন গ্রুপের সমাবেশ, আলোচনা সভা ও র্যালির আগের দিন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ারা ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
জনগণের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নোয়াখালী পৌর এলাকায় সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
রোববার সন্ধ্যা ৭টায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের এক যৌথ প্রজ্ঞাপনে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘সম্ভাব্য সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ এড়ানোতে এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে নোয়াখালী পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ ধারা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’