পাবনার বেড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে যমুনা নদীর পাড়ের সরকারি জমি দখলের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি পরিবীক্ষণ অধিশাখা থেকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এই নিদের্শনাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিশ্বাস রাসেল হোসেন।
খন্দকার আজিজুল হক আরজু পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
ডিসি জানান, আরজুর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাট এলাকায় যমুনা নদীর অংশ বালু দিয়ে ভরাট করে প্রায় ৫ একর জমিতে এমপি বাজার নামের একটি বাজার গড়েছেন।
সেই জমির বেশির ভাগ অংশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের মালিকানাধীন এবং সরকারি খাস জমি। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে দোকানের প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন আরজু। টাকা নেয়ার রসিদ দিলেও দেয়া হয়নি জমির কোনো কাগজ। এ-সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বিষয়টি তদন্তের জন্য একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জেলা প্রশাসন, নদী রক্ষা কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান ডিসি রাসেল। তদন্ত কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু
ডিসি আরও জানান, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় তদন্ত কমিটি গঠনে কাজ শুরু করেছে। দ্রুততম সময়ে সে কমিটি কাজও শুরু করবে।
স্থানীয়ভাবে এমপি বাজার নামে পরিচিত এ মার্কেট ২০১৮-১৯ সালে নির্মাণ করা হলেও জমি উদ্ধারে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি প্রশাসন। সম্প্রতি নতুন করে মাটি ভরাট করে বাড়ানো হয়েছে মার্কেটের পরিধি। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে নতুন প্লট।
স্থানীয়রা জানান, বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের নগরবাড়ী একসময় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ছিল। যমুনা নদী গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নগরবাড়ী ফেরিঘাট নদীর পাশ্ববর্তী কাজীরহাটে সরিয়ে নিলে স্থানটির গুরুত্ব কমে যায়।
ওই ফেরিঘাটের পাশেই ছিল নলখোলা মথুরাপুর হাট। তবে প্রায় ৩০ বছর আগে তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কয়েক বছর আগে ওই স্থানে ফের চর জাগে।
তারা আরও জানান, ২০১৮ সালে পাবনা-২-এর তৎকালীন সংসদ সদস্য আজিজুল হক স্থানটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেন। উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদকে না জানিয়ে অনুমোদন ছাড়াই যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে স্থানটি ভরাট করা হয়। পরে নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে ২৬৪টি প্লট করে বিক্রি করেন তিনি। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা পরে ওই জমিতে আরসিসি পিলার করে মার্কেট নির্মাণ করেন।
দোকানমালিকরা জানান, ৩২ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ২০ ফুট প্রস্থের প্রতিটি প্লট পেতে তাদের কাছ থেকে সাবেক এমপির প্রতিনিধিরা নিয়েছেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। টাকা নেয়ার রসিদ দিলেও, জমির জন্য দেয়া হয়নি কোনো কাগজ বা চুক্তিপত্র।
এমপি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন করে ফের নদী থেকে বালু তুলে ভরাটের কাজ চলছে। এসব জমিতে নতুন প্লট বরাদ্দ দেয়ার কাজও প্রায় শেষ। প্লট বরাদ্দের দায়িত্বে রয়েছেন সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া একসময়ের প্রভাবশালী জামায়াত নেতা ইমান আলী মোল্লা।
এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় নিউজবাংলাসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে।
মার্কেট নির্মাণের বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার করেছেন সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক আরজু। তবে নদী দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়নি বলে দাবি তার।
তিনি বলেন, ‘শতাব্দী প্রাচীন মথুরাপুর হাটের জমি নতুন করে জেগে উঠলে খাস জমিতে বর্তমান বাজার স্থাপন করা হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে দল মনোনয়ন না দেয়ায় সংসদ সদস্য হতে পারিনি। এ কারণে জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়নি।
‘লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া প্লটমালিকদের কাছ থেকে জমির উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য পরিচালনা কমিটি ৯৭ হাজার ১০০ টাকা করে নিয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত লাভের কোনো বিষয় নেই।’
সরকারি খাস জমিতে প্লট নির্মাণ করে বিক্রি করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আরজু
সড়ক ও জনপথ বিভাগের পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামান বলেন, ‘নগড়বাড়ীতে কোনো জমি লিজের আবেদন আমরা কখনোই পাইনি। লিজ দেয়ার সুযোগও নেই। আমাদের জমি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। শেষ হলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।’
উল্লেখ্য পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়া আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সাংসদ থাকাকালে নগরবাড়ী ঘাট এলাকায় সরকারি জমি দখল করে যমুনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করে ভরাট করেন। পাশের সড়ক ও জনপথের জমিও দখলে নিয়ে ২৬৪টি প্লটে ভাগ করে, প্রতি প্লট দেড় থেকে দুই লাখ টাকা দরে বরাদ্দ দেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।