বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউমের মরদেহ ঢাকায় এনে উত্তরায় তার বাসায় নেয়া হয়েছে।
ছোটবেলার বন্ধুকে শেষবার এক নজর দেখতে ছুটে যান নাট্যনির্মাতা অমিতাভ রেজাসহ কয়েক বন্ধু। তারা বন্ধুর মরদেহ দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। এরপর তারা স্মৃতিচারণা করতে থাকেন বন্ধুকে নিয়ে।
বন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে নাট্যনির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘স্কুলে ও সবার টিফিন চেক করত; কার টিফিনে কী আছে দেখত। নওশাদ ভালো ফুটবল খেলত; গোলকিপার ছিল। ওকে দেখেছি ছোটবেলায় কাগজের বিমান বানিয়ে হাতে নিয়ে ঘুরত। সে বড় হয়ে প্যাশনেট ক্যাপ্টেন হয়েছে।’
পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউম গত ২৭ আগস্ট সকালে ওমানের মাসকাট থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে ঢাকায় ফেরার পথে মাঝ আকাশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। এ সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন।
পরে বিমান জরুরি অবতরণ করে নাগপুর বিমানবন্দরে। পরে সেখান থেকে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ক্যাপ্টেন নওশাদকে ৩০ আগস্ট স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১১ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ দেশে আনা হয়। সেখান থেকে পরে নেয়া হয় উত্তরার বাসায়।
ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ বিমানবন্দরে পৌঁছালে সেখানে স্যালুট দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সহকর্মী পাইলটরা। ছবি: পিয়াস বিশ্বাসস্মৃতিচারণা করেন নওশাদের আরেক বন্ধু খন্দকার মোহাম্মদ জিয়া। তিনি বলেন, ‘বন্ধু হিসেবে যখনই যাকে বিপদগ্রস্ত দেখেছে, তার পাশে এগিয়ে গেছে নওশাদ। খুবই মিষ্টভাষী, অসাধারণ চিন্তাভাবনার মানুষ ছিল সে।
‘ছোটবেলা থেকে আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। নানা স্মৃতি আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। দেশ শুধু একজন পাইলটকে হারায়নি, ভালো মানুষকে হারিয়েছে।’
নওশাদ খুব ভোজন রসিক ছিলেন বলে জানান তার আরেক বন্ধু রানা।
তিনি বলেন, ‘খুবই অমায়িক মানুষ ছিল। ও বিরিয়ানি খুব পছন্দ করত। কিছুদিন আগেই আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, কী রান্না করেছি? ছোট মাছ ছিল বলে আসে নাই। বলে, ভালো খাবার না থাকলে বাসায় যাব না।
‘খুবই মজার মানুষ ছিল নওশাদ, হাসাতো সবাইকে। বিমানের সকল সহকর্মী তাকে খুব পছন্দ করত। আজকে অনেক পাইলট এসেছেন। তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন।’
২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ঝুঁকিপূর্ণ একটি ফ্লাইট নিরাপদে অবতরণ করিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছিলেন পাইলট নওশাদ। বিজি-১২২ ফ্লাইটটিতে ১৪৯ জন যাত্রী, ৭ ক্রু ও দুজন কো-পাইলট ছিলেন। বলতে গেলে নওশাদের দক্ষতায় বেঁচে যায় তাদের জীবন।