শরীয়তপুর পৌরসভার বাসিন্দা উত্তম কুমার ঘোষ অসুস্থ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বুধবার থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের মধ্যে নতুন নৌরুট হিসেবে ফেরি চলাচলের কথা ছিল। সেই ফেরিতেই উত্তম কুমারের মরদেহ বাড়ি নেয়া হতো। কিন্তু নাব্যসংকটে ফেরি চলাচল শুরু না হওয়ায় তার সৎকার করা হয় ঢাকার পোস্তগোলা শ্মশানে।
উত্তম কুমারের স্বজন পলাশ রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফেরি চালু থাকলে লাশ বাড়িতে আনা যেত। বাড়িতে সবাই শেষবারের মতো তাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু কোনো উপায় না পেয়ে পরিবারের সিদ্ধান্তে ঢাকার পোস্তগোলায় সৎকার করা হলো। শেষ ঠিকানাও হলো না নিজ বাড়িতে। ফেরিও আসেনি, লাশও এলো না। এ দুঃখ কী দিয়ে সান্ত্বনা দেব।’
প্রবল স্রোতের কারণে ও কয়েকবার ফেরি পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দিলে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে শরীয়তপুরের বাংলাবাজার ঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে নতুন ঘাট প্রস্তুত হলেও নাব্যসংকটে ফেরি চলাচল শুরু না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে পদ্মার দুই পারের মানুষ।
কবে ফেরি চলাচল শুরু হবে সেটিও বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
বুধবার জাজিরা-শিমুলিয়া নৌপথে পানির গভীরতা ৫ ফুট থাকায় বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও সেনাবাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের টিম জরিপ শেষে স্থগিত ঘোষণা করে ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত।
বিআইডব্লিউটিসির বাণিজ্যিক বিভাগের পরিচালক আশিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তীব্র স্রোতের কারণে শিমুলিয়া থেকে পদ্মা সেতুর চ্যানেলে প্রবেশের মুখে লৌহজং পয়েন্টে আবার নাব্যসংকট দেখা দিয়েছে। গতকালও সেখানে ৯ থেকে ১০ ফুট পানির গভীরতা ছিল। সেখানে আজ ৫ ফুট গভীরতা পাওয়া গেছে। যা দিয়ে ফেরি চালানো সম্ভব নয়।’
ঘাট এলাকার ইউনিয়ন পূর্ব নাওডোবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেদ ফরাজি সকাল থেকে ঘাটে অবস্থান করছিলেন ফেরি আসবে বলে। কখন ফেরি আসবে তা দেখার জন্য বারবার নদীর দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। পরে জানতে পারেন ফেরি আসছে না।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই শুনছি ফেরি আসবে। কিন্তু আর আসছে না। আজকেও এলো না। সন্দেহের বাসা বাঁধছে আমাদের মনে। আমরা এই সন্দেহের অবসান চাই, আমরা ফেরি চাই এক কথায়।’
‘সকাল থাইকা বইসা রইছি ফেরি আইব, কিন্তু অহন হুনি ফেরি আইব না। আমার কাছে খুব খারাপ লাগদাছে।’ কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব আলম হাওলাদার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এইহান দিয়া চললে বাস্যাকালের লিগ্যা সুবিদা অইবো আবার শীতেও সুবিদা অইব। অহন নদীতে সোরোত আবার শীতের সিজনে কুয়াশা পড়ব। খুয়ায় এক জায়গার গর বাড়িই দ্যাহা যায় না।
‘ফেরির এই মাথা ওই মাথা দ্যাহা যায় না। হেসুম সেতুর লগে আরও বেশি গুঁতা (আঘাত) লাগব। আর নামা দিয়া যদি ফেরি যায়, তাইলে ব্রিজটা আমাগো দক্ষিণবঙ্গের মানুষের বিশাল সম্পদ, এইডা রক্ষা পাইব।’