বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ দেশে আসছে বৃহস্পতিবার সকালে। এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় তার মরদেহবাহী বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
সচিবালয়ে বুধবার সাংবাদিকদেরকে তিনি এ তথ্য দেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে যে ইনফরমেশনটা আছে, আগামীকাল সকাল সাড়ে ৮টায় ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ দেশে পৌঁছাবে। বিষয়টা বিমান বাংলাদেশ দেখছে।’
কোন প্রক্রিয়ায় আনা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনটা পদ্ধতি ছিল। একটা হলো, ওখান থেকে ফ্লাইট আসার পথে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে আনা। অথবা ডেডবডি ওই জায়গায় নিয়ে, যেখান থেকে ফ্লাইট আসে সেখানে নিয়ে গিয়ে আনতে হবে, বা আমাদের একটা বিমান ওখানে গিয়ে ডেডবডি নিয়ে আসা। সবগুলো অপশনই আমরা ওপেন রেখেছি।
‘যেটা সহজ হয় সেভাবেই আমরা আনব। যেহেতু রেগুলার ফ্লাইট অপারেট হচ্ছে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পারমিশন, প্লাস ওই দেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির পারমিশন এসব নিতে হবে। যে অপশন সহজ হয়, সেই অপশন ব্যবহার করে আমরা নিয়ে আসব।’
বিমানসচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘মোটামুটি একটা ঠিক আছে যে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সাড়ে ৮টার দিকে মরদেহ আসতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি। মাননীয় প্রতিমন্ত্রীসহ আমরা সেখানে যাবো, যা যা ফরমালিটিজ আছে সেগুলোর ব্যবস্থা করব।’
বিমানের দোহা থেকে ফিরতি একটি ফ্লাইটে নওশাদের মরহেদ আনা হবে বলে জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।
জানানো হয়েছে, ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ আনতে সংস্থার ঢাকা-দোহা রুটের পরিকল্পনায় আংশিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বুধবার দোহা থেকে ফিরতি পথে নাগপুর হয়ে ঢাকায় আসবে বিমানের একটি ফ্লাইট। এই ফ্লাইটেই আসবে নওশাদের মরদেহ। সঙ্গে ওই ফ্লাইটে নাগপুরে থাকা তার দুই বোনকেও ফিরিয়ে আনা হবে।
প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিমানের বুধবারের দোহাগামী ফ্লাইট বিজি ০২৫ ঢাকা থেকে উড়াল দেবে দুপুর সাড়ে ১২টায়। সেটি দোহায় পৌঁছাবে স্থানীয় সময় ৫টা ৪০ মিনিটে।
ওই দিনই স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৭টায় ফিরতে পথে উড়াল দেবে বিমানটি। সেটি নাগপুর পৌঁছাবে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায়। সেখান থেকে ভোর ৫টায় রওনা হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করবে।
নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে কয়েকদিন ধরে চিকিৎসাধীন নওশাদকে সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালটির হিমঘরে রাখা হয়েছে তার মরদেহ।
গত শুক্রবার সকালে ওমানের মাসকাট থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে ঢাকায় ফেরার পথে মাঝ আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়েন নওশাদ। এ সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিজি-০২২ ফ্লাইটটি ভারতের নাগপুরের ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। ওই ফ্লাইটে যাত্রী ছিলেন ১২৪ জন। পরে জানা যায়, নওশাদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
ওই দিন রাতেই বিকল্প পাইলট ও ক্রু পাঠিয়ে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। আর নওশাদকে ভর্তি করানো হয় নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে।
এর আগে ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ঝুঁকিপূর্ণ একটি ফ্লাইট নিরাপদে অবতরণ করিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হন পাইলট নওশাদ। বিজি-১২২ ফ্লাইটটিতে যাত্রী ছিলেন ১৪৯ জন, ক্রু ছিলেন ৭ জন এবং কো-পাইলট ছিলেন ২ জন। বলতে গেলে নওশাদের দক্ষতায় বেঁচে যায় তাদের জীবন।
ওই বিমানটিও ওমান থেকে বাংলাদেশে এসেছিল। বিমান বাংলাদেশের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি মাসকাট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে উড়াল দেয়ার পর সেখানকার কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত বিমানের এয়ার ক্রাফটের হতে পারে।
পাইলট নওশাদ যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নওশাদ বিমানটি চট্টগ্রামে না নিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালালে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন।
অবতরণের আগে ক্ষতিগ্রস্ত টায়ারের বিষয়ে নিশ্চিত হতে রানওয়ের ওপরে দুইবার লো-লেভেলে ফ্লাই করেন নওশাদ। তখন দেখা যায়, উড়োজাহাজের পেছনের ২ নম্বর টায়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এটি নিশ্চিত হওয়ার পর দক্ষতার সঙ্গে ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণ করেন নওশাদ। এই কৃতিত্বে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনপত্র পাঠায় আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশন।