চন্দ্রিমা উদ্যানের সমাধিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের দেহাবশেষ আছে কি নেই, সেই বিতর্কের অবসান ঘটাতে ডিএনএ পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বলেছেন, ডিএনএ পরীক্ষায় যদি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার দেহাবশেষ পাওয়ার প্রমাণ মেলে, তাহলে তিনি নাকে খত দেবেন।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় এ কথা বলেন মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদ নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে এই আলোচনার বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হত্যা রোধে করণীয়’।
মন্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস, চন্দ্রিমার সমাধিতে জিয়ার মরদেহ থাকতেই পারে না। তিনি বলেন, ‘যদি ওখানে কোনোকিছু থেকে থাকে, ডিএনএ টেস্ট করে প্রমাণ করুক। যদি প্রমাণ হয়, জাতির কাছে নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইব।
‘আমি যদি মিথ্যা কথা বলে থাকি, জাতি বিচার করুক। অন্য কোনো দণ্ড দিলেও মেনে নেব। আমি চ্যালেঞ্জ করি যে, সেখানে তার কোনো মৃতদেহ নেই।’
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে নিহত হন জিয়াউর রহমান। তাকে সেখান থেকে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গুনিয়ায় সমাহিত করা হয় বলে তথ্য আছে।
মাস দুয়েক পর দেহাবশেষ সেখান থেকে তুলে এনে চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করার কথা জানানো হয়। তবে যে কফিন আনা হয়েছিল, তার মুখ খোলা হয়নি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে হত্যার মাস দুয়েক পর এই কফিনটি সমাহিত করা হয় চন্দ্রিমা উদ্যানে। এতে জিয়াউর রহমানের দেহাবশেষ ছিল না বলে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে তর্ক -বিতর্ক।
তাতে জিয়ার সমাধি ছিল কি না, এ নিয়ে পুরোনো বিতর্ক সম্প্রতি চাঙা হয় গত ২৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যে।
সেদিন তিনি বলেন, ‘আজকে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে গিয়ে যে মারামারি করল বিএনপি, তারা জানে না যে সেখানে জিয়ার কবর নাই, জিয়া নাই ওখানে, জিয়ার লাশ নাই? তারা তো ভালোই জানে। তাহলে এত নাটক করে কেন? খালেদা জিয়াও ভালোভাবে জানে।’
দুই দিন পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বক্তব্যের জবাব দেন। তিনি আরেক প্রয়াত সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সাক্ষী মানেন।
ফখরুল সেদিন বলেন, ‘চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন করা হয়েছিল। এটা তো চাঁদের আলোর মতো পরিষ্কার। এর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু হতে পারে না। কারণ তৎকালীন সেনা অধিনায়ক জেনারেল এরশাদ নিজেই জিয়াউর রহমানের লাশ বহন করেছেন।’
ফখরুলের এই বক্তব্যের জবাব আবার দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন করলে মূল প্রসঙ্গ এড়িয়ে সামঞ্জস্যহীন জবাব দেন। জিয়াউর রহমানের লাশ প্রসঙ্গে জেনারেল এরশাদ লাশ কাঁধে বহন করেছেন বলে উত্তর দেন। …জেনারেল এরশাদ কফিন বহন করেছেন। কিন্তু ভেতরে জিয়ার লাশ আছে কি না সেটা তো তিনি কখনও বলেননি।’
যে কফিনটি সেদিন চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়, তার মুখ খোলা হয়নি। সাধারণের শ্রদ্ধার জন্য রাখা হয় সেটি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী ডিএনএ পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘কারও না কারও মৃতদেহ পাওয়া গেল, জিয়ার কবর বলে চালিয়ে দেবেন, এমন মিথ্যাচার হতে পারে না। একটি মিথ্যা কবরকে জিয়াউর রহমানের কবর বলে চালিয়ে দেবেন, এটি মিথ্যাচার।’
জিয়াউর রহমানকে একেবারে কাছে থেকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়েছিল। এই বিষয়টি উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার অনুসারে সবকিছুর ছবি ধারণ করা থাকে। জিয়াউর রহমানের লাশের ছবিটা তাহলে দয়া করে দেখান। মহাসচিব আরও বলেছেন তার পোস্টমর্টেম হয়েছে, ২২টা বুলেট পাওয়া গেছে। যদি সত্য হয়ে থাকে ছবি দেখান, যদি বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে, মুখের ছবি দেখান।’
তিনি বলেন, ‘আমি আরও একটি কথা বলতে চাই। সেটি হলো মহাসচিব (ফখরুল) বলেছেন, আমি জিয়াউর রহমানের কবর অপসারণের কথা বলেছি। তবে আমি বলতে চাই যে, কথাটি আসলে আংশিক সত্য, পুরোপুরি সত্য নয়।
‘বিষয়টি হচ্ছে আমি জাতীয় সংসদে একাধিকবার বলেছি সংসদের নকশাকার বাইরে যা কিছু আছে, তার সবকিছুই আমাদের অপসারণ করা উচিত। কেননা এটি বিশ্বের মধ্যে একটি অনন্য নিদর্শন। আমি নকশার বাইরে সবকিছুই অপসারণ করতে বলেছি। সেখানে অন্যদের কবরও আছে। শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের কবরকে নির্দেশ করে বলা নয়।’