এক লাখ গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠা ই-অরেঞ্জসহ ই-কমার্সভিত্তিক চারটি প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ স্থগিত করেছে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-ক্যাব।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, টোয়েন্টিফোর টিকিটি.ডট কম (24tkt.com), গ্রিন বাংলা ই-কমার্স লিমিডেট (www.greenbangla.space), এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রো ফুড অ্যান্ড কনজ্যুমার লিমিটেড (www.excellentbigbazar.com) এবং ই-অরেঞ্জ ডটকম (www.eorange.shop)।
বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠান চারটির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানান ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার।
তিনি বলেন, ‘ই-ক্যাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই চার প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে কেন তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হবে না- সে বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশও পাঠানো হবে। যদি তাদের বক্তব্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে সদস্যপদ একেবারে বাতিল করা হবে। আর যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।’
ই-ভ্যালিসহ অন্য যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের সদস্যপদ স্থগিত করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে শমী কায়সার বলেন, ‘ই-ভ্যালিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সময় দিয়েছে। আমরা সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করব। মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা নেয়, তার উপর ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এর বাইরে ধামাকাসহ অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা যদি ই-ক্যাবের গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা না করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ই-ক্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু সদস্য প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ই-ক্যাব আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। ভোক্তা ও বিক্রেতাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে। এর মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে জবাব না দেয়া অথবা জবাব সন্তোষজনক না হওয়ার কারণে এই চার প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
ই-ক্যাব বলছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো হলো- অর্থ আত্মসাৎ, ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি না করা, ই-ক্যাবের কারণ দর্শানো ও সতর্কীকরণ পত্রের জবাব না দেয়া, ই-ক্যাবের পাঠানো অভিযোগের সমাধান না করা, ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা মেনে না চলা এবং এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কেউ কেউ অভিযোগ নিষ্পত্তি ও ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা মেনে চলার প্রতিশ্রুতিসহ সময় চেয়েছে। তাই ৯টি প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষণে রেখে অধিকতর তদন্ত চলছে। সন্তোষজনক সমাধান না হলে তাদের বিষয়ে একই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
ই-ক্যাব ক্রেতার আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে অস্বাভাবিক অফার দেয়া পণ্য কেনাকাটায় সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ করছে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা মানছে না সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছে।
ক্রেতা-ভোক্তারা কোনো প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রতারিত হয়ে থাকলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে বলেছে ই-ক্যাব।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি তদন্ত সংস্থাকে ই-ক্যাব সহযোগিতা করে আসছে।
অস্বাভাবিক অফার বন্ধ করা, সময় মতো পণ্য ডেলিভারি করা, ব্যাংক ডিপোজিটের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা, ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা মানা, দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলা, ভোক্তা অধিকারে আসা অভিযোগ দ্রুত সমাধান ও ই-ক্যাবের অভিযোগের সমাধান করে প্রতিবেদন পেশ করতে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ই-ক্যাব।