সামাজিক পরিবর্তনে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিন শতাধিক তরুণ। প্রিন্সেস ডায়ানার জন্মদিন সামনে রেখে সোমবার রাত ৯টায় এ অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্পূর্ণ তালিকাটি আছে দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডস ওয়েবসাইটে। এদের মধ্যে ১৯ জন বাংলাদেশি।
জেনে নেয়া যাক, কোন খাতে কীভাবে অবদানের ফলে এ সম্মাননা পেয়েছেন তারা।
মাহবুবুল আবরার
বেসরকারি সাহায্য সংস্থা জাগো ফাউন্ডেশনের অঙ্গ সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের তরুণ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মাহবুবুল।
করোনাভাইরাস মহামারিতে ১৩টির বেশি জেলায় ত্রাণ সরবরাহের কাজ শুরু হয় তার হাত ধরে, যার সুফলভোগী প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
৪৫টি জেলায় ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে তিনি ‘আপনার মাস্ক কোথায়’ কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন।
মহামারির সংকটজনক সময়ে এসব উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়ে বিপুলসংখ্যক তরুণকে সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি।
মোহাম্মদ আফজাল সুলতান সাফি
চট্টগ্রামভিত্তিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা দূরবীণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা সাফি দেশের শিক্ষা খাত ও কর্মক্ষেত্রে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কাজ করেন। একজন দক্ষ নারী দর্জির অধীনে ১০ জন করে নারীকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন সরবরাহের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসা দাঁড় করাতে সাহায্য করেছেন তিনি।
২১ বছর বয়সী এই তরুণ ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ ত্রিপুরা শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনতে চান। এ পর্যন্ত ৩৪টি শিশুকে স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেছেন তিনি।
পারিবারিক নির্যাতন, এর কারণ, ক্ষতিকর প্রভাবের মতো বিষয়ে কর্মশালারও আয়োজন করেছেন সাফি, যে বিষয়ে ক্ষুদ্র এ নৃগোষ্ঠীর আগে কোনো ধারণাই ছিল না।
আফজালের উদ্যোগে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানার পর ১৮ বছর বয়সের আগে কিশোরীদের বিয়ে না দেয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়েছেন ত্রিপুরা অভিভাবকরা।
আনিকা সুবাহ আহমেদ উপমা
২০১৬ সালে ‘ইভোল্যুশন ৩৬০’ নামে তরুণদের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন উপমা। নারী-পুরুষ বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নির্মূল আর জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের পাঁচ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা জেন্ডার সমতা তৈরির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে সংগঠনটি।
বর্তমানে ২১ বছর বয়সী এই তরুণী মাত্র ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে শুরু করেন ‘হি ফর শি’ কর্মসূচি, যা পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রসারণ হয়। এর আওতায় যৌনশিক্ষার আওতায় কিশোর ছেলেদের পারস্পরিক সম্মতির বিষয়টি উপলব্ধি করানোর উদ্যোগ নেয়া হয় এবং কিশোরী মেয়েদের দেয়া হয় আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ।
বর্তমানে তার দলে রয়েছে ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক। নতুন প্রকল্প হিসেবে শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি বন্ধে ‘গুড টাচ ব্যাড টাচ’ শীর্ষক সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছেন উপমা।
শওকত আরাফাত
১৭ বছর বয়সে চট্টগ্রাম থেকে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের হয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন শওকত। কঠোর পরিশ্রম আর পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শওকত ২ বছরের মধ্যে সংগঠনের জেলা পর্যায়ের প্রধান হন।
বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী এই যুবক কাজ করেছেন ৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তথ্য তালিকাভুক্তকরণে। তাদের বাসস্থান ও শিক্ষা কর্মসূচিতে যুক্ত হতেও সহযোগিতা করেছেন।
রাঙ্গামাটিতে ভূমিধসে গৃহহীন হওয়া মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ, পবিত্র রমজান মাসে ১০০ শিশুর ইফতারের ব্যবস্থা করাসহ সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণে বিভিন্ন কাজে অংশ নিয়েছেন তিনি।
রিজভী আরেফীন
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিজভী ব্যক্তিজীবনে নানা রকম হয়রানির শিকার হয়ে ভুগতেন হীনমন্যতায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করে উপলব্ধি করেন যে, তার শৈশবের বিভিন্ন ঘটনার জন্য তিনি দায়ী নন। এ রকমই ভুক্তভোগী বাকিদের জন্যও সুযোগের পথ উন্মুক্ত করতে কাজ শুরু করেন তিনি।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন রিজভী। শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তার জনস্বার্থমূলক কাজের সুফলভোগী দেড় লাখের বেশি মানুষ।
গত ৮ বছরে ১০ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় রিজভী ব্যয় করেছেন স্বেচ্ছাসেবার কাজে।
মুরশিদুল আলম ভূঁইয়া
২০১৬ সালে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ‘টিম ব্যর্থ’ গড়ে তোলেন মুরশিদুল। মানুষের মধ্যে সৃজনশীল জ্ঞানচর্চা বাড়ানোর লক্ষ্যে বহুমুখী কাজ করছে তার সংগঠন।
বর্তমানে ১৯ বছর বয়সী এই তরুণের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশের মানুষকে নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্প্রদায়, যেখানে তুলে ধরা হয় জীবনের নানা গল্প আর স্মৃতিচারণা।
মুরশিদুলের আশা, বৈচিত্র্যময় মানবজীবনের জীবনের বিভিন্ন দিক, গল্প, স্মৃতিচারণা আর অভিজ্ঞতার সংস্পর্শে নিয়ে আসার মাধ্যমে অনেককেই জীবন সম্পর্কে আশাবাদী হতে সাহায্য করবেন তিনি।
খাদিজা তুল কুবরা বিনতে আহসান
বাংলাদেশে মেয়ে শিশু ও কিশোরীদের মধ্যে বেড়ে ওঠার সময় যারা হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তাদের একজন খাদিজা। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সমতা তৈরিকে জীবনের লক্ষ্য করেছেন ২৪ বছরের এই তরুণী।
২০১৮ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘উইমেন ভিউ’ (WeMen View)। বর্তমানে সংগঠনটির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে ৭০ জন। ১ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীকে নিয়ে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতাবিষয়ক কর্মশালা পরিচালনা করেছেন তারা।
৮ হাজার ডলারের বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছেন খাদিজা। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে ১ হাজারের বেশি মানুষকে খাদ্য ও নিত্যপণ্য বিনা মূল্যে সরবরাহ করে নিজের দাতব্য কাজগুলো অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
২০২০ সালে সাইক্লোন আম্ফানে গৃহহীন মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করতে সমন্বিত প্রকল্প চালু হয় খাদিজার হাত ধরে।
সাদিদ বিন হাসান
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোতে পূর্ণকালীন চাকরি ছাড়েন সাদিদ। ঝরে পড়া ৭ হাজার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন তিনি।
‘ক্রসরোডস ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে পরবর্তী ৩ বছরে সরাসরি ও অনলাইনে ১ লাখ শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করেছেন সাদিদ। মূলত পরামর্শদানের মাধ্যমে তরুণদের দিকনির্দেশনা দিতে সংযোগ স্থাপনের কাজ করে প্ল্যাটফর্মটি।
এ পর্যন্ত তার সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা ১০ লাখ ডলারের বৃত্তি পেয়েছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাগ্রহণের যোগ্য করে তুলতে চান সাদিদ।
সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন সাদিদ। তিনি জানান, আমৃত্যু প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে সাহায্য করতে চান।
আনাস হোসেন
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে সেইফহুইল। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনাস হোসেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করা আনাস কাজ করেছেন পরিবেশবিদ হিসেবে, জাগো ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারসহ (বিওয়াইএলসি) বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে।
সাগর মজুমদার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সাগর মজুমদারের নার্ডিজ। প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার তিনি।
ইতিহাস, ভূগোল ও বিজ্ঞান বিষয়ে ১২০টির বেশি পাঠ্যসূচি তৈরিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন। এর সুফলভোগী বাংলাদেশের ২৭টি জেলার ৪০ হাজারের বেশি শিশু।
পাঠদান কার্যক্রমে ভিআর প্রযুক্তিকে কার্যকর উপকরণ হিসেবে প্রমাণ করেছেন সাগর ও তার দল।
বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার ঘাটতি পূরণে এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদী সাগর। তার মতে, এর মাধ্যমেই একদিন দেশের সব শিশু মানসম্পন্ন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা নেয়ার সুযোগ পাবে।
গুলনাহার মাহবুব মনিকা
নিজের পেশায় মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি বাস্কেটবল খেলায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে কাজ করছেন ২৪ বছরের তরুণী মনিকা। নারীদের মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো, নারীদের ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করেন তিনি।
এ লক্ষ্যে সব বয়সের নারীদের জন্য বিভিন্ন টুর্নামেন্টের নিয়মিত আয়োজন করেন মনিকা। তার সহযোগিতায় পাঁচ নারী অ্যাথলেট পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন।
ভবিষ্যতে কেবল নারীদের নিয়ে জাতীয় লীগ ও বাংলাদেশে বাস্কেটবলে প্রথম নারী দল গঠন নিয়ে আশাবাদী মনিকা। তিনি নিজেও জাতীয় পর্যায়ের একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়।
সিদরাতুল মুনতাহা
বাংলাদেশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশলবিদ্যা ও গণিতে পরবর্তী প্রজন্মকে আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন ২৪ বছরের তরুণী সিদরাতুল। ‘বাংলাদেশ চ্যাপ্টার অফ টেকনোভেশন গার্লস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন তিনি।
কিশোরী ও তরুণীদের দারিদ্র্য নির্মূল, জলবায়ু পরিবর্তন, জেন্ডার সমতা, নারীদের নিরাপত্তা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, বেকারত্বসহ সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সাহায্য করেন তিনি।
সিদরাতুলের দুই শিষ্য নারীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে ঋণদানভিত্তিক এবং বাল্যবিবাহ বন্ধে অ্যাপ চালু করেছেন। ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য অ্যাপ তৈরির কাজ করছেন অনেকে।
মারিয়া মুমু
এক বন্ধুর আত্মহত্যার ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন মারিয়া মুমু। তিনি নিজেও ভুগছিলেন হতাশা ও অবসাদে।
‘মশাল মেন্টাল হেলথ’ নামে একটি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণী। মূলত তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি।
সামাজিকভাবে তার প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা শুরু হয় ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বার্তা পৌঁছে দেন লাখো মানুষের কাছে।
করোনাভাইরাস মহামারিকালীন মানসিক সুস্থতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। এ সময়ে বিনা মূল্যে সেবাদানের প্রথম উদ্যোগ নেয়া অন্যতম প্রতিষ্ঠান মারিয়ার ‘মশাল মেন্টাল হেলথ’।
ইউসুফ মুন্না
কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখির আগ্রহ ছিল ইউসুফের। কিন্তু বারবার সম্পাদক ও প্রকাশনা সংস্থাগুলোর প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েছেন তিনি। বর্তমানে নিজের ‘রিফ্লেক্টিভ টিনস’ কর্মসূচির মাধ্যমে তরুণদের সৃজনশীলতা প্রকাশে সহযোগিতা করছেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ।
গত ৭ বছরে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছে ‘রিফ্লেক্টিভ টিনস’। তারা সহযোগিতা করেছে দেশের ৬১ হাজার কিশোর-কিশোরীকে।
শুধু ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির চারটি ভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে ১১ হাজার শিক্ষার্থী, যা আগের তুলনায় ১২ গুণ বেশি।
লামিয়া তানজিন তানহা
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ট্রান্সএন্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা ২০ বছর বয়সী তানহা। বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশজুড়ে ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবকের সহযোগিতায় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা হতে আর কর্মসংস্থানে যোগ দিতে ট্রান্সজেন্ডারদের সহযোগিতা করছে তানহার ট্রান্সএন্ড। কম্পিউটার আর ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়াতেও সাহায্য করে প্রতিষ্ঠানটি।
এ পর্যন্ত দেশের ৩ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছে ট্রান্সএন্ড। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে ১৩৫ জন ট্রান্সজেন্ডারকে প্রশিক্ষণ আর ৪৩ জনকে চাকরি পেতে সহযোগিতা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশি তরুণ সমাজের অগ্রগতির লক্ষ্যেও কাজ করছেন তিনি।
সরকার তানভীর আহমেদ
রাজশাহীর জয়পুরহাটের বাসিন্দা সরকার তানভীর আহমেদ। নিজ এলাকায় তরুণ সংঘের নেতা তিনি। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী তিনি।
২২ বছর বয়সী তানভীরের নেতৃত্বে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে কাজ করছেন ২৫টি দেশের ৩৫০ তরুণ-তরুণী। ২০০৯ সাল থেকে বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি, নারী নিরাপত্তা, তথ্যের অপপ্রচার, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা বিষয়ে কাজ করেছেন এই তরুণরা।
আফরুজা তানজি
স্কুলের একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে গ্রামাঞ্চলের নারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আফরুজা। জেনেছেন কর্মক্ষেত্রে আর আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা। এরপর থেকেই প্রান্তিক নারীদের ক্ষমতায়নে তাদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজনে কাজ শুরু করেন তিনি।
বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী আফরুজা ৭ শতাধিক কিশোরী ও নারীকে আর্থিক হিসাববিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি ক্ষুদ্র শিল্পবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ১০০ নারীকে। ১ হাজারের বেশি শিল্পকর্মের বাণিজ্যিকীকরণ করেছেন। তিনি হাজারো কিশোরী ও নারীকে জীবিকা উপার্জনে যুক্ত করেছেন।
মোস্তফা জামান
মোস্তফা জামান ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী। পেশায় চিকিৎসক ২৪ বছর বয়সী জামান ৬ বছর ধরে কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত নারী ও কিশোরীদের স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে।
‘স্যানিটেশন, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড ফলো আপ’ নামে আরেক কর্মসূচি চালু করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে ক্যান্টিনে কর্মরত কিশোরদের পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
২৫ স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল পরিচালনা করেন জামান। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষ জামানের সামাজিক কাজের কারণে উপকৃত হয়েছেন।
এ ছাড়া, ‘ওয়ান অব ইউ’ সংগঠনের আজিজুল ইসলামের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পাওয়া তরুণদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে কাজের পরিধি বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন এই বাংলাদেশিরা।
প্রতি বছর ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়।