করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে চারপাশের চার জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার দিন নিজ জেলা মানিকগঞ্জ যেতে উদগ্রীব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রহমতউল্লাহ।
রহমত থাকেন পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জে। সকালেই ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জমুখী বাস বন্ধ হয়ে গেলেও তিনি চলে আসেন গাবতলীতে। আশায় ছিলেন, একটা না একটা গাড়ি পেয়েই যাবেন।
তবে ছিল না কোনো বাহন। পরে শুরু করেন হাঁটা। আমিনবাজার বা সাভারের দিকে এগিয়ে গেলে একটা না একটা উপায় হবে- এই বিশ্বাস মনে।
হাঁটছেন হাজার হাজার মানুষ। এর মধ্যে রহমতউল্লাহ দৃষ্টি কেড়ে নেন তার সঙ্গীর কারণে।
পিঠে ব্যাগ আর হাতে লোহার খাঁচায় রহমতের সঙ্গী পিকো।
পিকো একটি বিড়াল। রহমতের খুব আদরের।
৯ দিনের জন্য ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই কয়টা দিন বাড়িতেই কাটাতে চান রহমত। আর আদরের পোষা প্রাণীটিকে রেখে একা যেতে চাইছিলেন না তিনি। তাই তাকে নিয়েই ছুটে চলা।
পিকোকে নিয়ে বাড়ি যাবেন বলে এই খাঁচাটা বানিয়েছেন রহমত। পথে তার যেন কষ্ট না হয়, সে জন্য খাঁচাটি একটু বড়সড় করেই তৈরি করা হয়েছে। আর রোদ যেন না লাগে সে জন্য খাঁচার ওপরে দেয়া আছে কাপড়ের একটি ছাউনি। আর পিকোর বসার জন্য কয়েক স্তরে মখমলের কাপড়ের বিছানা।
বিড়ালের নাম কী- এমন প্রশ্ন শুনেই আপত্তি করেন রহমত।
বলেন, ‘এইডার নাম বিড়াল না, এইডা আমার পিকো। পিকোকে ঢাকায় কার কাছে রাইহা যাব? জন্মের পর আমার কাছে বড় হইছে। পিকোর মা কয়ডা দিন ছিল, পরে একদিন আর দেহা নাই।’
ছোটবেলায় প্রথমে গরুর দুধ, পরে পাউডারের দুধ খাইয়ে বড় করেছেন পিকোকে। বেশ যত্ন যে নেন, সেটি দেখলেই বোঝা যায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রাণীটির গলায় বেশ যত্ন করে একটি ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছেন।
আরও বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল রহমতের কাছে। তবে তিনি হাঁটতে হাঁটতে আর কথা চালিয়ে যেতে রাজি ছিলেন না। এর মধ্যে আবার তার মোবাইল ফোনে আসে কল। আকাশেও মেঘের ঘনঘটা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও শুরু হয়। তাই কথা না বাড়িয়ে রহমতের চেষ্টা ছিল পিকোকে বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর।