রাজধানীতে সমস্যার বোঝা মাথায় নিয়ে বছর কাটে ব্যাচেলরদের। ঈদের ছুটিতে আরও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি। ঢাকা যারা ছাড়তে পারেননি তাদের বেশির ভাগই এখন ভুগছেন খাবার সংকটে।
ঈদের ছুটিতে বন্ধ রাজধানীর অধিকাংশ খাবার হোটেল। বাসায় রান্না করার লোকও গেছে ছুটিতে। এতে তিন বেলা খাবার খাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যাচেলরসহ একা থাকেন এমন মানুষ। অনেকেই দূরে গিয়ে বেশি খরচায় আহার করতে হচ্ছে তাদের।
ঢাকা শহরে বড় অঙ্কের মানুষ হোটেলে খেয়ে বাঁচে। ঈদের সময় এদের কেউ কেউ নিজ বাড়িতে গেলেও জীবিকার তাগিদে কর্মস্থলে থেকে যান অনেকে। ঈদের সময় উপায় না থাকায় বাসার বাইরে হোটেলে খাওয়াদের দলে যোগ দিতে হয় ব্যাচেলরসহ অনেককে। কিন্তু এই সময়ে কর্মীদের ছুটি দেয়ার কারণে বন্ধ অধিকাংশ খাবার হোটেল।
কোনো কোনো হোটেল খোলা থাকলেও চলছে সংস্কার ও নতুন ডেকোরেশনের কাজ। অধিকাংশ খাবারের হোটেলে রান্না বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন পরিবার থেকে বাইরে থাকা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
বিশেষ করে খাবারের কষ্ট আছেন মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, রিকশা চালক, মেচ-হোস্টেলে থাকা ব্যাচেলর দিনমজুর, শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা।
মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, শ্যামলিসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কিছু স্টেশনারি, মুদি এমনকি চায়ের দোকান খোলা থাকলেও বন্ধ ছিল ভাতের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট।
ফলে ঢাকাতে কাজে আসা লোকজন এবং যাদের বাসায় রান্নার ব্যবস্থা নেই তারা পড়েছেন খাবার সংকটে।
খাবারের সংকটে পড়াদের মধ্যে একজন অ্যাম্বুলেন্স ফারুক হোসেন। কুষ্টিয়া থেকে ভাড়া নিয়ে ঈদের আগের রাতে এসেছেন ঢাকায়। তিনি জানান, ‘কুষ্টিয়া থেকে ভাড়া নি (নিয়ে) আসার সুমা (সময়) চাইড্ডি ভাত খাইছিলাম। কাইলকি থেইকি ভাতই জুগাড় করতি পারলাম না।
‘ভাতের হোটেল টোটেল খোলা পাচ্ছিনে। ঈদের দিন দেখলাম কারা জানি পথের ছাওয়াল-পাওয়ালগেরে (ছেলে- মেয়েদের) খাবার দিচ্ছে। ওগুলা চায়ি (চেয়ে) খাওয়া আমার দ্বারা সুম্ভব (সম্ভব) না। তাই কলা বিস্কুট, চা-রুটি ইডা উডা খুঁজি খুঁজি কিনি খাচ্ছি। কী করবো পেটের দায়। পেট কী মানতে চাই খাবার ছাড়া।’
মোহাম্মদপুর এলাকায় রিকশা চালান সিদ্দিক হাওলাদার। হোটেল খোলা না পেয়ে পেরেশানিতে সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘আমি তিন বেলা ভাত খাওয়া মানুষ। পায়ে প্যাডেল করা রিকশা চালান লাগে। কাঁড়ি কাঁড়ি শক্তির দরকার। আশপাশ দিয়ে ভাত খাওয়ার হোটেল পাইলাম না। কোথাও ভাত পেলেই খেয়ে নেব।’
আড়াই বছর হলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষ হয়েছে তামজিদ আকবরের। চাকরি হয়নি এখনও, তাই এক প্রকার লজ্জায় বাড়ি যাওয়া হয়নি তার।
ঈদের ছুটিতে অনেক হোটেলে চলছে সংস্কার কাজ। ছবি: নিউজবাংলা
তামজিদ বলেন, ‘অনেকে ভাবছে ঈদে বোধ হয় সবাই ঢাকা থেকে বাড়ি গেছে৷ কিন্তু না, বহু মানুষ ঢাকায় আছে। এই যেমন আমি মেচে থাকি। বুয়া নাই, ছুটিতে গেছে৷ রুমমেট- হোস্টেলমেটরা কেউ নেই। রান্নাটাও পারি না৷ মোটামুটি শুকনা খাবার খেয়েই থাকছি।
‘ঢাকায় ফুপুর বাসা ছিল তারাও বাড়িতে। ভাতের হোটেল খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। হোটেল খোলা না থাকায় ঈদের আগের দিন থেকে ভাত খাওয়া বন্ধ।’
এ বিষয়ে কথা হয় মোহাম্মদপুরের ছায়ানীড় হোটেলের মালিক জুবায়ের সরদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হোটেল যেসব কর্মীরা চালায় তারা সারা বছর মানুষকে খাওয়ানোর কাজই করে। ঈদের সময় তাদের ছুটি দিতে হয়। তারা না থাকার কারণে রান্না বন্ধ। এ সুযোগে হোটেল মেরামত করছি।
‘শুধু আমি একা না প্রায় সব হোটেল মালিক একই কাজ করে। আর যারা গলিতে হোটেল চালায় তারা দু একটা খোলা রাখে বাড়ি না গেলে। বাকি প্রায় সবাই বন্ধ রাখে।’