বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউটিউবেই বাজিমাত করলেন শেরপুরের সুমন

  •    
  • ২৭ এপ্রিল, ২০২১ ১২:১৩

সুমন প্রথমে খালি ম্যাচের প্যাকেট দিয়ে একটি এয়ারকপ্টার তৈরি করেন। এরপর ভিডিওটি ইউটিউবে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ভিডিওটির প্রায় ৯ কোটি ভিউ হলে বদলে যায় সুমনের জীবন। এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক ভিডিও ইউটিউবে দিয়েছেন। এতে মাসে তার ইউটিউব থেকে আয় ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।

শেরপুর বাজিতখিলা ইউনিয়নের রিকশাচালক দুলাল মিয়ার ছেলে সুমন। পেশায় ‘ইলেকট্রিক মিস্ত্রি’। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বৈদ্যুতিক কাজ করার পাশাপাশি লেখাপড়াও করছেন সুমন। গত বছর এইচএসসি পাসের পর স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন শেরপুর সরকারি কলেজে।

অনেকটা সাদামাটা জীবনযাপনের মাঝেই সুমন ‘বিস্ময়কর’ কিছু কাজ করে চমকে দিয়েছেন সবাইকে। ইতোমধ্যে ছয় শতাধিক যন্ত্রপাতি তৈরির ভিডিও তিনি ছেড়েছেন ইউটিউব চ্যানেলে। এখন মাসিক আয় প্রায় লাখ টাকা। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা সুমন প্রতিদিনই নতুন কিছু করছেন। এ ক্ষেত্রে বই কিংবা প্রশিক্ষণ নয়, সুমনের ভরসা ইউটিউবেই।

রিকশাচালক বাবা দুলাল মিয়া ও সমতা বানুর তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সুমন তৃতীয়। ইউটিউবে বিভিন্ন সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি তৈরির প্রযুক্তি দেখে সুমন নিজে নিজেই শিখেছেন কৌশল।

ক্যামেরাসহ ড্রোন, ফ্যান, রিচার্জেবল হট এয়ারগান, রিচার্জেবল পাওয়ারফুল এয়ারকুলার, ওয়্যারলেস, সিসিটিভি ক্যামেরা, ফ্লাইং হেলিকাপ্টার, পাঁচ ধরনের এয়ারফোন, সিম ছাড়া ওয়াইফাই রাউটার, পাওয়ারফুল ওয়াটার পাম্প, হ্যান্ড কন্ট্রোল আরসি ড্রোনসহ অসংখ্য ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি তৈরি করছেন নিজেই।

পুরাতন ফেলে দেয়া ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ, কাগজ, গাম, আর কিছু নতুন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে নানা আকর্ষণীয় খেলনা, ব্যবহার্য সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি তৈরি করেন তিনি। এসব যন্ত্রপাতি হাতেকলমে তৈরির ভিডিও ধারণ করেন সুমন। সেগুলো নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ছেড়ে দিয়ে মাসে আয় করছেন ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।

সুমন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবা অনেক কষ্ট করে আয় করতেন। আমরা একটা ঝুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে থাকতাম। একপর্যায়ে আমি বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ শুরু করি। এসএসসি পাস করার পর শেরপুরের ডা. সেকান্দর আলী কলেজে ভর্তি হলে সেখানে ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা পাই ওয়াইফাই লাইনের মাধ্যমে। তখন ইউটিউবে ঢুকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরির ভিডিও দেখি। একসময় আমিও বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি শুরু করি।’

সুমন বলেন, ‘প্রথমে খালি ম্যাচের প্যাকেট দিয়ে একটি এয়ারকপ্টার তৈরি করে ইউটিউবে দিই। এটিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে, ভিডিওটিতে প্রায় ৯ কোটি ভিউ হয়। ছয় শতাধিক যন্ত্রপাতি তৈরির ভিডিও আমি ইউটিউবে ছেড়েছি। এতে মাসে ইউটিউব থেকে আয় হয় ৭০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ পর্যন্ত। আমাদের সংসারে এখন আর আগের মতো অভাব নেই।’

সুমন বলেন, ‘আমি একটি ড্রোন বানিয়েছি, যা অনেক উঁচুতে এবং দূরত্বে যেতে পারে। আমি দেশের সবচেয়ে বেশি ওজনবাহী একটি ড্রোন তৈরি করতে চাই। ওই ড্রোন মশা নিধনে কীটনাশক ছিটাতে পারবে। এ ছাড়া ড্রোনটি বিভিন্ন ধরনের তথ্যচিত্র ধারণ করতে পারবে।’

বাবা দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে রিকশা চালাইতাম, এহন আমার অটোগাড়ি। এখন ঝুপড়ি ঘর নেই, আধাপাকা ঘরে থাহি। সবকিছুই সম্ভব ঐইছে আমার পোলার জন্য।’

মা সমতা বানু বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করছি একসময়। ভাবি নাই আমার পোলা সুমন গরিব ঘরে থাইক্কা এত কিছু করব। আমি ওর জন্য বোতলের পাস, ম্যাচের খুল, পালাস্টিকের কৌটা আরও কত কিছু কুড়াই আনয়্যা দিতাম। ওই এইলা দিয়া ঘরো বইয়া সারা দিন কী যে করত বুঝতাম না। পরে দেহি আমার পোলা ঐলা দিয়া ভালা কিছ বানাইয়া টেহাও কামাই করে। এহন আমার পোলারে নিয়া গর্ব হই আমার।’

স্থানীয় কিশোর মো. মোশারফ বলেন, ‘ড্রোন তো আমি জীবনে দেখি নাই। সুমন ভাই বানাইছে, তাই দেখবার আইছি। এইডা আকাশে উঠলে তো দেহা যায় না।’

ইউপি সদস্য ইউনুস আলী মনু বলেন, ‘সুমনের মধ্যে বড় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে। সুমনকে সরকারিভাবে সহায়তা করলে সে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’

শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুমনের মতো মেধাবীদের জন্য আমাদের দুয়ার খোলা। তাকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর