চীনা মহাকাশযান যখন চাঁদ থেকে পাথর সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরছে, সে সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত ঘোষণা দিলো, করোনার কারণে এ মুহূর্তে তাদের যা মহাকাশ মিশন আছে তাও পিছিয়ে যাচ্ছে।
‘গগনায়ন’ নামে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর ভারতীয় মিশন এক বছর পিছিয়ে যেতে পারে।
সোমবার ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এ কথা জানান দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আইএসআরও-এর চেয়ারম্যান কে সিভান। তিনি বলেন ‘কোভিডের কারণে এটা (গগনায়ন মিশন) দেরি হতে পারে।’
২০১৮ সালে স্বাধীনতা দিবসে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির আগে মহাকাশে ভারতীয় নভোচারী পাঠাবেন তারা।
প্রধামমন্ত্রীর ডেডলাইন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মহাকাশে মনুষ্য মিশনের আগে দুটি ক্রুবিহীন অভিযানেরও পরিকল্পনা রয়েছে আইএসআরও-এর। সূচি অনুযায়ী, প্রথমটি পাঠানোর কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এবং দ্বিতীয়টি ২০২১ সালের জুনে।
কিন্তু করোনার কারণে এসব কার্যক্রম সময়মতো পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলে জানালেন কে সিভান। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী বছরের শেষ দিকে বা পরের বছরে লক্ষ্য রাখছি।’
করোনার কারণে শুধু মনুষ্য মহাকাশ অভিযান নয়, আইএসআরও-এর বড় বাজেটের বেশ কয়েকটি মিশনও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের প্রথম সৌর অভিযান ‘আদিত্য এল ১’, যা চলতি বছরের মাঝামাঝিতে হওয়ার কথা ছিল।
নভেম্বরের শুরুতে পৃথিবীর কক্ষপথে ভারতের একটি স্যাটেলাইট উড্ডয়নের সময় আইএসআরও-এর প্রধান সিভান জানিয়েছিলেন, করোনায় অনেক কাজে হোম অফিস করা গেলেও মহাকাশ কার্যক্রমে তা হয় না। প্রত্যেক স্পেস প্রকৌশলীকে ল্যাব ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত থাকতে হয়।
‘প্রত্যেক প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান, টেক অ্যাসিস্টেন্টকে পৃথক পৃথক সব সেন্টার থেকে আসতে হয় এবং একটি উড্ডয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হয়। হার্ডওয়্যারগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসএইচএআরে (ভারতের রকেট উড্ডয়ন কেন্দ্র) নিয়ে আসতে হয়।’
আইএসআরও-এর প্রধান জানান, তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা একটি যোগাযোগ স্যাটেলাইট প্রেরণ করা। এরপর থাকছে পৃথিবী পর্যবেক্ষণে আরও একটি স্যাটেলাইট ‘ইওএস ০২’ প্রেরণের সূচি।
সৌর অভিযান ছাড়াও ২০২০ সালের মাঝামাঝি বা ২০২১ সালের শুরুতে চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল আইএসআরও-এর। কিন্তু ‘চন্দ্রায়ন-৩’ নামের এই অভিযানের দিনতারিখ এখনও ঠিক করা হয়নি বলে জানালেন সিভান।
মহামারির কারণে সব কিছু স্থিমিত হয়ে যাওয়ায় আইএসআরও এখন ভবিষ্যৎ মিশনগুলো সূচি পর্যালোচনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালের জুনে শুক্র অভিযানের পরিকল্পনার ব্যাপারটিও। পরের ধাপে শুক্র গ্রহে অভিযান চালানো না গেলে গ্রহটিতে পৃথিবীর নিকটতম অবস্থানে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও ১৯ মাস।
করোনার কারণে ভারতের মহাকাশ অভিযান অনেকটা গুটিয়ে এলেও একের পর এক সাফল্যের খবর শোনাচ্ছে প্রতিবেশি চীন।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছর পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে চাঁদে পতাকা উড়িয়েছে চীন। সেই সঙ্গে চাঁদ থেকে মাটি ও পাথরের নমুনা নিয়েও ফিরছে তাদের নভোযান ‘চ্যাংই-৫’। এ ছাড়া মহাকাশ নিয়ে বেশ কিছু সাহসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা।