বলিউডের নায়ক শাহরুখ খানের কাছ থেকে কোনো নায়িকাকে সরিয়ে নিতে হলে সেটা কাজল নয়, দীপিকাকে সরাতে হবে। বললেন, সাকিব বিন রশীদ – এ সময়ের জনপ্রিয় অনলাইন এডুকেটর ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
নিউজবাংলার লাইভ শো ‘নিউজবাংলা গপসপ’ এর তৃতীয় এপিসোডে অতিথি হিসেবে এলে, তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়।
সম্প্রতি সাকিব বিন রশীদ বলিউড ও শাহরুখ খানকে নিয়ে অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছেন, যেগুলো জনপ্রিয় হয়েছে। এই সূত্র ধরে তাকে প্রশ্নটি করা হয়েছিল।
সাকিব বলেন, ‘শাহরুখের কাছ থেকে কখনোই কাজলকে সরানো যাবে না। শাহরুখ-কাজল ইজ এ থিং।’
সাকিব বিন রশীদ বলেন, ‘আমরা কনটেন্ট ক্রিয়েটররা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নতুন আইডিয়া পেয়ে যাই। সেইটা নিয়ে নতুন কিছু করে ফেলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এডুকেশন ভিডিও, সামাজিক সচেতনতামূলক ভিডিও, কমেডি ভিডিও এতো কিছু একসাথে করার মধ্যেও কমেডি ভিডিও করতে আমার সবচেয়ে বেশি মজা লাগে। কারণ মানুষকে হাসানোর মধ্যে একটা আনন্দ আছে।’
অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম ‘টেন মিনিট স্কুল’-এর চিফ স্ট্রাটেজিস্ট সাকিব বলেন, ‘আয়মান, সামিরের সাথে বন্ধুত্বের সূত্রেই টেন মিনিট স্কুলে আসা। হুট করে আমরা কোনো কিছু শুরু করিনি। ওই সময় আমাদের পুরো বন্ধু সার্কেলটাই টিচিংয়ের সাথে যুক্ত ছিল।’
কনটেন্ট ক্রিয়েশনের এই প্রজন্মের একটি পেশা হওয়া প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘বাংলাদেশে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের যে বয়স, আমি মনে হয় সেইটার শেষ বয়সে আছি। আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোটরা খুবই ভালো কাজ করছে। কনটেন্ট ক্রিয়েশনের ব্যবসায়িক লাভের জায়গাটা তারা ধরতে পেরেছে। এইটা এই মুহূর্তে প্রোফেশন হিসেবে নেয়ার সুযোগ আছে। তবে আমি বলব সবারই প্ল্যান-বি রাখা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় যে, এইটা সারাজীবন করার মতো কাজ না। আমি নিজে সারাজীবন ভিডিও কনটেন্ট বানাতে চাই না। আমি আরও সলিড কিছু করতে চাই। এই মুহূর্তে ভালো লাগতেসে, কিন্তু ভবিষ্যতে আর ভালো লাগবে কিনা আমি নিশ্চিত না।’
নতুন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য পরামর্শ হিসেবে সাকিব বলেন, ‘যারা ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করছেন, তারা এইটা ভাববেন না যে এইগুলা করতে পড়াশুনা করা লাগে না। এইটা একদমই ভুল। আপনি পড়াশুনা না করলে আপনার নতুনভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে না। পড়াশুনা করলে আপনি নতুন যে কোনো কনটেন্টকে নতুনভাবে দর্শককে দেখাতে পারবেন।’
শিল্প টিকে থাকার জন্য অনেক দর্শক থাকতে হবে, সাকিব বিন রাশীদ তা মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘দুনিয়াতে এমন অনেক শিল্প বেঁচে আছে, কারণ শিল্পমানের দিক থেকে সেইগুলো ভালো। যেমন, বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের খুব বেশি দর্শক কখনই নেই। তাও বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক কিন্তু টিকে আছে। কারণ শিল্প মানের দিক থেকে সেইটি অনেক উন্নত।’
সাকিব বলেন, ‘আপনি এই কান্না কেঁদে লাভ নাই যে, ফালতু টিকটকারদের ভিডিও দেখে আমাদের ভিডিও দেখে না। একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে “অ্যারাউন্ড মি বিডি” নামে, যেই চ্যানেলটা মূলত একটা গ্রামের উপর করা। যেখানে গ্রামের কিছু মানুষ সেইখানটাতে বসে রান্না বান্না করে। গ্রামের মানুষের চমৎকার জীবন তুলে ধরা হয়েছে এই চ্যানেলটিতে। মানুষ তো দেখে এই ভিডিওগুলো। মানুষ শুরুতে কম দেখলেও ভালো কিছু দিতে থাকলে একটা সময় দর্শক অবশ্যই দেখবে।’
প্রেমের কনটেন্ট বানানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যত প্রেমের কনটেন্ট বানানো হয়, সেইগুলো সবই সুড়সুড়ি দেয়ার জন্য। আমি যেইটা করি, সেইটা হল কাউন্টার সুড়সুড়ি দেই। কারণ প্রেম ব্যাপারটাকে যেভাবে দেখানো হয়, সেইটা এইরকম নয়। বরং এইটা আরও অনেক বেশি বাস্তবভিত্তিক। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করি, তখন আমার মধ্যে এই বোধোদয় হয় যে, আমাদের এই পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই প্রেম জিনিসটাকে যেইভাবে দেখানো হয়, সেইটা ভুল। অনেক ক্ষেত্রেই বিষাক্ত। প্রেম করলেই আমরা মনে করে ফেলি, সব কিছু আমার। আমার যা খুশি তাই আমি করতে পারি। নারীরা কেউই আমাদের সম্পত্তি নয়। এইটা আমরা বুঝি না। তাদের সাথে আমরা শুধু একটা সম্পর্কে যুক্ত, এ ছাড়া আর কিছুই না। তাদের উপর শোষণ, জুলুম চালাতে পারি না। এইগুলা আমরা বুঝার চেষ্টা করি না। ভুল এইগুলা।’
আমাদের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিডিও বানানোর আগে গবেষণা কম হয় বলে মনে করেন সাকিব বিন রশীদ। তিনি মনে করেন, ‘আমাদের প্রতিদিন কনটেন্ট বানানোর প্রবণতার কারণে আমরা একদমই গবেষণা করি না। ফলে নতুন কোনো দিক আমরা যুক্ত করতে পারি না। আমি কমেডি কনটেন্টগুলোও একটু গবেষণা করে করার চেষ্টা করি।’