রাজধানীর কলাবাগানে স্কুল শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মাঠ পর্যায়ের তদন্ত শেষ করেছে পুলিশ। মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে পেলেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
কলাবাগান থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে জানান, সংবেদনশীল মামলা হওয়ায় শুরু থেকেই তদন্তে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে থানার সবচেয়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদু্জ্জামানকে।
থানার একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা জব্দ করা আলামত, আসামির জবানবন্দিসহ ঘটনা সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য, সিসিটিভি ফুটেজ, হাসপাতালের নথি, চিকিৎসকদের বক্তব্য সবকিছু যাচাই-বাছাই করে এ ঘটনার মোটিভ চিহ্নিত করেছেন। এখন অভিযোগপত্র প্রস্তুতের কাজ চলছে। মেডিক্যাল পরীক্ষার ফলাফল এলেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আ ফ ম আসাদু্জ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিস্তারিত বলা যাবে না, তবে এইটুকু জানুন তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে।
‘আমরা ঘটনাটির সবগুলো সম্ভাব্য দিক বিবেচনায় রেখে প্রতিটি বিষয়েই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। শুধু পলাতক দারোয়ান দুলালকে নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। গতকাল (সোমবার) তাকে পাবার পর তদন্তে এখন সবদিক কভার হয়েছে। বেশ কিছু মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রসেসিংয়ে আছে, সেগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, ভিকটিম-আসামির ডিএনএ প্রোফাইল, আসামির ডোপ টেস্টের রিপোর্টগুলো হাতে পেলে আমরা আমাদের ফাইন্ডিং এর সাথে মিলিয়ে দেখব। ’
ময়না তদন্তের ভিসেরা রিপোর্ট ও ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে অন্তত মাসখানেক অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান আসাদু্জ্জামান।
এ মামলার একমাত্র আসামি আসামি ফারদিন ইফতেখার দিহান এরই মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে তিনি দাবি করেন, গত বৃহস্পতিবার কলাবাগানের ফাঁকা বাসায় তার সঙ্গে মেয়েটির শারীরিক সম্পর্ক ঘটে। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটির মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়া দিহানের বাড়ির দারোয়ান দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার হেফাজতে নেয় কলাবাগান থানা পুলিশ। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মামলায় দু্লাল একমাত্র চাক্ষুস সাক্ষী। আমরা তাকে সোমবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে তার দেখা ঘটনার বিবরণ দিয়েছে, যা আমরা লিখিত সাক্ষ্য হিসেবে রাখছি। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে কারও জিম্মায় ছেড়ে দেয় হবে। পরে আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য তাকে হাজির করা হবে।’
দিহানের সঙ্গে কিশোরীর শারীরিক সম্পর্কের সময় ‘অস্বাভাবিক কিছু’ ব্যবহারের আলামত পুলিশ পায়নি বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। কিছু সংবাদ মাধ্যমে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো আলামত জব্দ করতে পারিনি। চিকিৎসক যেহেতু বলেছেন বিষয়টি তিনি তার রিপোর্টে তা উল্লেখ করবেন। আমরা সে রিপোর্ট অভিযোগপত্রের সাথে আদালতে উপস্থাপন করব।’
- আরও পড়ুন: সেই দুই ঘণ্টায় যা ঘটেছে
ইফতেখার ফারদিন দিহান মাদকাসক্ত ছিলেন কিনা- জানতে ডোপ টেস্ট করা হবে বলেও জানান আসাদু্জ্জামান। এর আগে সোমবার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
- আরও পড়ুন: দিহানের মাদকাসক্তি জানতে ডোপ টেস্ট হচ্ছে
ওই কিশোরীর মৃত্যুর পর গত বৃহস্পতিবার রাতে তার বাবা কলাবাগান থানায় ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ফারদিন ইফতেখার দিহানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করলেও শুক্রবার দুপুরে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ওই তিন বন্ধু দিহানের ফোন পেয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। এর বাইরে ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।