ঢাকায় পথকুকুর স্থানান্তরের পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে কুকুরকে আবার টিকাদান শুরু হয়েছে।
প্রায় দেড় বছর পর শুরু হওয়া এই কর্মসূচি ৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ থেকে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে। পরে বাকি ওয়ার্ডে শেষ করা হবে। এরপর দেয়া হবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে।
রাজধানীর এই অংশে কাজ শেষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে টিকা দেয়া শুরু হবে।
স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ জন্য ১২টি দল কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ম্যাস ডগ ভ্যাকসিনেশন প্রকল্প- এমডিভি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. কামরুল ইসলাম।
তিনি জানান, সবশেষ ২০১৯ সালের মে মাসে ঢাকা দক্ষিণে ২৩ হাজার ৭৩২টি এবং ঢাকা উত্তরে ১৯ হাজার ২০৩টি কুকুরকে টিকা দেয়া হয়।
- আরও পড়ুন: বেড়েছে কুকুরের কামড়, কমেছে জলাতঙ্ক
পথ কুকুরের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ পেয়ে সেপ্টেম্বরে ঢাকা দক্ষিণ থেকে কয়েক হাজার কুকুর সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে পশুপ্রেমী নানা সংগঠন ও ব্যক্তি এই উদ্যোগের সমালোচনা করেন। হাইকোর্টে রিটও হয়। এতে থেমে যায় নগর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ।
ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে বছরে জলাতঙ্ক থেকে বাঁচতে টিকা নিতে আসে ৭০ থেকে ৭৮ হাজার মানুষ।
তবে কুকুরের আক্রমণ বাড়লেও জলাতঙ্ক রোগ কমে আসছে। এর কারণ, কুকুরকে টিকাদান কর্মসূচি। যদিও সময় মত অর্থ ছাড় না হওয়ায় গত দেড় বছর এই কর্মসূচি বন্ধ ছিল।
জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মকর্তারা মনে করছেন, কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী করতে পারলে তারা কামড়ালেও আর বিপদ থাকবে না।
২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরে কাজ চলছে।
এমডিভি সুপারভাইজার হাসান সায়েদুল মুরসালিন নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ কুকুরকে টিকা দেয়া হবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে বাকি ৩০ শতাংশ কুকুরেও হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠবে। তখন বাকি কুকুরগুলোও নিরাপদ হয়ে যাবে।
সায়েদুল মুরসালিন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি এলাকার আনাচে কানাচে কুকুর খুঁজে টিকা দেব। আর টিকা দেয়া হলে সে কুকুরের গায়ে রঙ দিয়ে দেয়া হবে। সাত দিন থাকবে এই রঙ।’
তবে একবার টিকা দিলেই কুকুর সারা জীবনের জন্য নিরাপদ হয়ে যায় না। মুরসালিন জানান, টিকা দিলে এক থেকে দুই বছরের জন্য নিরাপদ হবে কুকুর। পরে আবার টিকা দেয়া হবে প্রাণীগুলোকে।
- আরও পড়ুন: ঢাকায় কুকুর বেশি নাকি কম
শুক্রবার সকালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১ এর ১৫ থেকে ২১ নং ওয়ার্ডে কুকুরকে টিকা দেয়া শুরু হয়।
কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশে ৬৭ কেন্দ্রের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হয়। এই কর্মসূচির আওতায় ২০১৯ সালে ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩০টি কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়।
- আরও পড়ুন: কুকুর নিয়ে আলোচনা কলকাতাতেও
বিশ্বে বছরের ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে মারা যায়। এই মৃত্যু কমাতে ব্যাপকহারে কুকুর টিকাদান কার্যক্রম গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে সারা পৃথিবীতে।
বাংলাদেশে জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত সারা দেশে প্রতি বছর গড়ে জলাতঙ্কে মারা যেত দুই হাজার জন। তবে ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মৃত্যু কমে ২৩০ জনে নেমেছে।
টিকা দেয়ার পর কুকুরের গায়ে রঙ দিয়ে সেগুলোকে চিহ্নিত করে রাখা হচ্ছে
কুকুরের কামড়ের মতোই জলাতঙ্কে মৃত্যুর সিংহভাগ হয় ঢাকায়। ২০১৮ সালে মহাখালির জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে মারা যায় ৩৬ জন। ২০১৯ সালে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ জন। তবে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত মারা গেছে ১৫ জন।
জলাতঙ্ক রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত। রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে বড়জোর দুই থেকে তিন দিন বাঁচেন একজন রোগী। সাধারণত দুই ধরনের জলাতঙ্ক রোগী দেখা যায়। এক ধরনের রোগী নীরবে মারা যান।
এছাড়া খিঁচুনি হওয়া, পানি দেখে ভয় পাওয়া, শরীরে বাতাস লাগলে ভয় পাওয়া, খাবার খেতে না চাওয়া, মানুষকে কামড়াতে যাওয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। এই রোগীদের বলা হয় রেবিজ এনসেফালাইটিস।