ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন।
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল সভায় খসড়া আইনটি অনুমোদন হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সংসদ অধিবেশনে না থাকায় সংশোধিত আইনটি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। এটির বাস্তবায়ন শুরু মঙ্গলবার থেকেই।
বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে দলগত ধর্ষণ বা ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে প্রাণদণ্ডের বিধান আছে। পাশাপাশি দণ্ডিতের অর্থদণ্ডের বিধান আছে।
তবে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারী নির্যাতনে ভিডিও ফাঁসের পর গড়ে উঠা আন্দোলনে আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার দাবিটি প্রধান হয়ে উঠে।
এর মধ্যে ৮ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। সেদিনই তিনি জানান, সাজা বাড়িয়ে সংশোধিত আইন মন্ত্রিসভায় উঠবে সোমবার।
আরও পড়ুন: ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের দাবি মানছে সরকার, ‘কর্মসূচি স্থগিত’
ধর্ষণ বরাবরই বাংলাদেশে একটি আলোচিত বিষয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, দিনে চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৪৮টি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসেই ঘটেছে ৫৯টি।
সাম্প্রতিককালে দল বেঁধে ধর্ষণের বিষয়টি সামনে আসছে। চলতি বছরের নয় মাসে এই ধরনের ২০৮টি ঘটনার কথা জানতে পেরেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে ৪৩টি। আর আত্মহত্যার তথ্য মিলেছে ১২টি।
২০১৯ সালে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪১৩টি।
ধর্ষণের ঘটনা নিষ্পত্তিতে ১৮০ কার্যদিবস এবং তদন্তে ৯০ দিন সময় বেঁধে দেয়া আছে। তবে সাজার পরিমাণ খুবই কম।
গত ১৬ বছরে ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে চার হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে ৬০টি।
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডই ধর্ষণের উপযুক্ত সাজা
আন্দোলনের মধ্যে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে সরকারপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একজন নেতা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিবসহ বেশ কয়েকজনকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। ছাত্রলীগ এই দাবিতে মিছিল সমাবেশও করেছে।
বিক্ষোভের তৃতীয় দিন প্রথমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা এবং পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ধর্ষণকারীর ফাঁসির পক্ষে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা
ইন্দিরা বলেন, ‘আমি তো মনে করি ধর্ষণকারী যদি প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই তার ফাঁসি হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন: ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের দাবি অযৌক্তিক নয়: কাদের
কাদের বলেন, ‘এদের (ধর্ষক) ছোটখাট লঘুদণ্ড দিয়ে লাভ নেই, সর্বোচ্চ বিচারে যে দাবি উঠেছে, আমার মনে হয় এটা অযৌক্তিক নয়।’