টানা বিক্ষোভের মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার দাবি মেনে নিচ্ছে সরকার।
আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পেয়ে তারা আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকেই উঠছে সংশোধিত আইন।
এই খবরে বিক্ষোভকারীরা আনন্দ প্রকাশ করেছে। কর্মসূচি স্থগিতের কথাও জানিয়েছেন একাধিক নেতা। তবে আইন সংশোধনে যেন বেশি সময় না নেয়, সে অনুরোধ করেছেন তারা।
আরও পড়ুন: ‘দাবি একটাই, ডেথ ফর রেপ’
বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে দলগত ধর্ষণ বা ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে প্রাণদণ্ডের বিধান আছে। পাশাপাশি দণ্ডিতের অর্থদণ্ডের বিধান আছে।
তবে গত সোমবার থেকে চলা কর্মসূচিতে আইন সংশোধন করার দাবি উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, সর্বোচ্চ সাজা প্রাণদণ্ড হলে ধর্ষণের প্রবণতা কমবে।
বিক্ষোভের চতুর্থ দিন আনিসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধর্ষণের শাস্তি বৃদ্ধি করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল (বুধবার) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, ধর্ষণের অপরাধের সাজা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া (আইন সংশোধন) শুরু করার জন্য।’
‘এ কারণে সাজা বাড়াতে আইন সংশোধন করার যে প্রক্রিয়া তা আমরা শুরু করে দিয়েছি। আগামী সোমবার সাজা বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে।’
আরও পড়ুন: ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের দাবি অযৌক্তিক নয়: কাদের
ধর্ষণ বরাবরই বাংলাদেশে একটি আলোচিত বিষয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, দিনে চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৪৮টি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসেই ঘটেছে ৫৯টি।
সাম্প্রতিককালে দল বেঁধে ধর্ষণের বিষয়টি সামনে আসছে। চলতি বছরের নয় মাসে এই ধরনের ২০৮টি ঘটনার কথা জানতে পেরেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে ৪৩টি। আর আত্মহত্যার তথ্য মিলেছে ১২টি।
২০১৯ সালে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪১৩টি।
ধর্ষণের ঘটনা নিষ্পত্তিতে ১৮০ কার্যদিবস এবং তদন্তে ৯০ দিন সময় বেঁধে দেয়া আছে। তবে সাজার পরিমাণ খুবই কম।
গত ১৬ বছরে ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে চার হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে ৬০টি।
আরও পড়ুন: ধর্ষক আমাদের হলেও বিচার করুন: ছাত্রলীগ
ধর্ষণ এবং বিচারে জটিলতা নিয়ে এমনিতে ক্ষোভ আছে। এর মধ্যে সিলেটে এমসি কলেজে স্বামী নিয়ে ঘুরতে যাওয়া তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এরপর নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় হতাশা রূপ নেয় বিক্ষোভে।
আন্দোলনকারীরা ধর্ষকের ফাঁসির সাজা নিশ্চিত না হলে ঘরে ফিরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
আন্দোলনের মধ্যে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের বিধান করতে সরকারপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একজন নেতা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিবসহ বেশ কয়েকজনকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। ছাত্রলীগ এই দাবিতে মিছিল সমাবেশও করেছে।
বিক্ষোভের তৃতীয় দিন প্রথমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা এবং পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ধর্ষণকারীর ফাঁসির পক্ষে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা
ইন্দিরা বলেন, ‘আমি তো মনে করি ধর্ষণকারী যদি প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই তার ফাঁসি হওয়া উচিত।’
কাদের বলেন, ‘এদের (ধর্ষক) ছোটখাট লঘুদণ্ড দিয়ে লাভ নেই, সর্বোচ্চ বিচারে যে দাবি উঠেছে, আমার মনে হয় এটা অযৌক্তিক নয়।’
বিক্ষোভকারীরা খুশি, ‘কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা’
‘উই আর স্টুডেন্টস’ এর ব্যানারে ধানমন্ডি-ফার্মগেট এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আহ্বায়ক নাইম খান নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি ছিল ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা। সেটা যেহেতু বিবেচনায় নেয়া হিয়েছে, তাতে আমরা খুশি হলাম। আমাদের আন্দোলন আমরা স্থগিত করলাম।’
হলিক্রস কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, ‘আমরা সোমবার দেখব বিষয়টা নিয়ে কী হচ্ছে। যদি কোনো কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য চাপা পড়ে যায় সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখব।’
মিরপুরে প্রতিবাদকারীদের একজন মিরপুর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ তানভীর বলেন, ‘জেনে খুশি হলাম, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নিল। যেহেতু আমাদের মূল দাবি মেনে নেয়ার কার্যক্রম চলছে সেক্ষেত্রে আমরা আন্দোলন স্থগিত করলাম।’
বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী রবিন বলেন, ‘তবে সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে এটার আইন পাস করতে যেন তারা বেশি সময় না নেয়।’