বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিকাশের নামে মন ভুলিয়ে ভয়ংকর প্রতারণা

  •    
  • ১৪ আগস্ট, ২০২১ ২০:৫০

ডিএমপির সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া ই-ট্রানজেকশনের যত ঘটনা ঘটে তার মধ্যে অল্প সংখ্যক ভুক্তভোগীই মামলা করেন। অনেকে ঝামেলা এড়াতে সাধারণ ডায়েরিও করেন না। সম্ভবত কম টাকা খোয়া যাওয়ার কারণে কিংবা অজ্ঞতার কারণে অথবা আইনি জটিলতা এড়াতে অনেকে মামলা বা অভিযোগের দিকে যান না।’

‘হ্যালো, ব্র্যাক ব্যাংক বিটিআরসির বিকাশ অফিস থেকে তরিকুল বলছিলাম। আপনি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার গ্রাহক সেলিম হায়দার (ছদ্মনাম) বলছেন? আপনি বর্তমান যে বিকাশ অ্যাকাউন্টটা ব্যবহার করছেন তার লেনদেন অপশনটা আমাদের অফিস থেকে সাময়িক সময়ের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ মুর্হূতে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না। আপনার অ্যাকাউন্টে যে জমানো টাকা আছে তা উত্তোলন বা বের করতে পারবেন না।’

এভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্ট ‘সাসপেন্ড’ হওয়ার এবং জমানো টাকা আর তুলতে না পারার ভয় দেখিয়ে এক গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল ০১৮৪২-৬৪১২৮৮ থেকে ফোন করে। পুলিশ বলছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে এই ফোনটি করা হয়েছিল। এই প্রতারক চক্রের অনেকেই রয়েছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলায়।

তরিকুল হিসেবে পরিচয় দেয়া এই ব্যক্তি প্রতারণা করার জন্য ওই গ্রাহককে ‘সন্দেহমুক্ত রাখতে’ আরও নানা ধরনের কথা বলেন। যেমন, ‘বিকাশ কোম্পানি কখনও গ্রাহকের কাছ থেকে গোপন পিন জানতে চাইবে না, বিকাশের নামে নানা ধরনের প্রতারণা হচ্ছে, তাতে তিনি যেন পা না দেন।

এ ধরনের কথা বলার কারণ যাতে ওই গ্রাহক মনে করেন, বিকাশ থেকেই তাকে ফোন দেয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে আরও যেসব কথোপকথন হয় সেগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো-

গ্রাহক: কেন হলো এমন?

তরিকুল: বাংলাদেশে যে ব্যক্তিগত সাড়ে তিন কোটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাদের মালিকানাধীন তথ্য জাস্টিফাই করে ২০৩০ সাল অব্দি পুনরায় চালু করা হচ্ছে। যারা সঠিক মালিক, সঠিক হোল্ডার, সঠিক তথ্য দিচ্ছে তাদের অ্যাকাউন্ট কোম্পানি চালু করে দিচ্ছে। আর যারা তথ্য দিচ্ছে না তাদের অ্যাকাউন্টটা ডুপ্লিকেট মালিক হিসেবে কোম্পানি বন্ধ রাখছে। এসব অ্যাকাউন্টে যে টাকা থাকছে সেগুলো সরকারি ফান্ডে জমা রাখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনার মূল্যবান মতামত উইদাউট স্টেটমেন্টে জানার জন্য কল করা হয়েছে। আপনার যে অ্যাকাউন্টটা বন্ধ রাখা হয়েছে সেটা বন্ধ থাকবে, নাকি সঠিক তথ্য সরবরাহ করে অ্যাকাউন্টটা একটিভ রাখতে চাচ্ছেন?

গ্রাহক: কী ধরনের তথ্য সেটার ওপর নির্ভর করছে...

তরিকুল: আচ্ছা, তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে আমি আপনাকে বলি। বিকাশ কোম্পানি কখনও গ্রাহকের কাছ থেকে গোপন পিন জানতে চাইবে না, অর্থাৎ যে পিন দিয়ে টাকা লেনদেন বা উত্তোলন হয় সেটা বিকাশ জানতে চায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিকাশ শিওর না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো তথ্য দেয়া যাবে না কাউকে। কারণ বিকাশের নামে নানা ধরনের প্রতারণা হয়ে আসছে।

এই অ্যাকাউন্ট খুলতে যে আইডি কার্ড ব্যবহার করা হয়েছিল সেই ব্যক্তি কি আপনি?

গ্রাহক: জ্বী, হ্যাঁ।

তরিকুল: আচ্ছা, আপনার অ্যাকাউন্টটা কি আপনার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হচ্ছে, নাকি কোনো ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার হচ্ছে?

গ্রাহক: ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হচ্ছে।

তরিকুল: স্যার ধন্যবাদ, আপনার তথ্যটা সঠিক হয়েছে। যেহেতু পারসনাল কাজে অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করছেন, সেহেতু আপনার এই অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন বা ট্রান্সজেকশন কি আপনি নিজে করছেন?

গ্রাহক: জ্বী হ্যাঁ। আমি নিজে করছি।

তরিকুল: যেহেতু লেনদেন আপনি নিজে করছেন, সেক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাউন্টের লেনদেন ভিত্তিক মালিকানাধীন তথ্যটা জাস্টিফাই করার ক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে সবশেষ যেসব ম্যাসেজ আছে সেখান থেকে একটা তথ্য বলবেন আমাকে। সর্বশেষ কী লেনদেন করা হয়েছে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে। সেটা হলো আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে সবশেষ টাকা জমা করা হয়েছে, নাকি বের করা হয়েছে?

গ্রাহক: এটা আমার খেয়াল আসছে না...কারণ আমি বিকাশ নিয়মিত ব্যবহার করি না।

তরিকুল: তাহলে কি আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে না?

গ্রাহক: না না, করতাম আগে। সবশেষ রোজার ঈদের আগে লেনদেন হয়।

তরিকুল: আচ্ছা। সেবার কি টাকা বের করেছিলেন, না জমা করেছিলেন?

গ্রাহক: সম্ভবত বের করা হইছিল।

তরিকুল: কত টাকার মতো বের করেছিলেন?

গ্রাহক: দেড় হাজারের মতো।

তরিকুল: আপনার অ্যাকাউন্টটা এখন বন্ধ আছে। আপনার কত টাকা জমা রেখে কোম্পানি অ্যাকাউন্টটা বন্ধ রেখেছে, এটা জানা আছে? এই যে তথ্যটা দেবেন, সেটা জাস্টিফাই করে আপনার টাকাটাসহ অ্যাকাউন্টটা চালু রাখার চেষ্টা করব। আর যদি টাকার অ্যামাউন্ট না বলতে পাবেন, তাহলে জিরো ব্যালান্সে চালু হবে। আপনি কি অ্যামাউন্টটা বলতে পারবেন?

গ্রাহক: সম্ভবত এক হাজার টাকা থাকতে পারে ব্যালেন্স।

তরিকুল: এই মুর্হূতে বিকাশ থেকে আপনার সিরিয়াল নম্বরটা পাঠিয়ে দেয়া হলে, আপনি যে আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন, কথা বলা অবস্থায় কি আপনি এসএমএসটা দেখতে পারবেন, নাকি লাইন কেটে দিয়ে দেখে জানাতে পারবেন?

গ্রাহক: না না। আমি দেখতে পারব।

তরিকুল: আপনি যে ফোন দিয়ে কথা বলছেন, সেটা কি নরমাল ফোন নাকি স্মার্ট ফোন?

গ্রাহক: স্মার্ট ফোন থেকে কথা বলছি।

তরিকুল: তাহলে তো কথা বলা অবস্থায় মেসেজ দেখতে পাবেন। আমি লাইনে আছি। আপনি আপনার মেসেজ ইনবক্সে ঢুকে দেখেন, বিকাশ থেকে একটা মেসেজ গিয়েছে। মেসেজটির ভেতরে দুই থেকে তিন লাইন নিচে ৬ সংখ্যার একটা সিরিয়াল নম্বর আছে, এই সিরিয়াল নম্বরটি হলো বাংলাদেশ থেকে কত তম সিরিয়ালে আপনি অ্যাকাউন্টটি চালু করছেন সেটা। নম্বরটি আমাদের বলে সিরিয়ালটি চালু করে নেন স্যার। একটু কষ্ট করে ইনবক্সে যান, দেখেন বিকাশ থেকে কোনো মেসেজ পাইছেন?

গ্রাহক: না। বিকাশ থেকে কোনো মেসেজ আসেনি।

তরিকুল: আপনি ইনবক্সে গিয়েছেন?

গ্রাহক: হ্যাঁ, আমি ইনবক্সেই আছি।

তরিকুল: আচ্ছা আপনি ইনবক্সেই থাকেন। আমি চেক করে মেসেজটা এখনি পাঠিয়ে দিচ্ছে। পেয়েছেন?

গ্রাহক: হ্যাঁ পেয়েছি।

তরিকুল: দেখেন মেসেজটির দুই থেকে তিন লাইন নিচে একটা ৬ সংখ্যার ওটিপি নম্বর আছে, সেটা বলেন। এটা বললে বাংলাদেশ থেকে এই সিরিয়ালে আপনার অ্যাকাউন্টটি চালু হয়ে যাবে। আচ্ছা, এটা কিন্তু ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে দিতে হবে, তা না হলে সিরিয়াল আবার পরিবর্তন হয়ে যাবে।

গ্রাহক: ওটিপি নম্বর দেয়াটা আমি সেইফ মনে করছি না।’

তরিকুল: এটা কিন্তু বিকাশ অফিস থেকে মেসেজ দিয়েছে, আপনি মনে রাখবেন। বিকাশ কোম্পানি কিন্তু আপনাক সিক্রেট নিরাপত্তা দিচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিকাশে প্রতিনিয়ত প্রতারণা হচ্ছে। আর এসব প্রতারণা এড়াতে কোম্পানিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে।

গ্রাহক: সে যাই হোক, আপনি বললেন যে বিকাশ থেকে এসএমএস আসবে। কিন্তু আমার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ওটিপি আসল কেন? আমি তো টাকা পেমেন্টের জন্য কোনো কিছু করি নাই। তাহলে ওটিপি কেন আসল? ওটিপি তো কোনো সিরিয়াল নম্বর না। আপনি ভুল বোঝাচ্ছেন। ওটিপি হলো ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড। এটা তো আমি কাউকে দিব না। বিকাশ অ্যাপেই কিন্তু বড় করে লেখা আছে যে ওটিপি আপনি কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এমনকি বিকাশের সঙ্গেও না।

তরিকুল: আচ্ছা আমরা যদি বিকাশ না হবো, তাহলে আপনাকে মেসেজ দিলাম কীভাবে? আপনি কি কাউকে এমন মেসেজ দিতে পারবেন?

গ্রাহক: না না। এটা পারব না। আমি এটাই চিন্তা করছি যে, আপনি এই মেসেজ পাঠালেন কীভাবে?

তরিকুল: আপনার কি সন্দেহ হচ্ছে? আপনি কি বিকাশ কোম্পানিকে ডাউট করছেন?

গ্রাহক: হ্যাঁ, হচ্ছে। আমার যদি কনফিউশন লাগে তাহলে আপনি কেন, বিকাশের যে কান্ট্রি ডিরেক্টর আছেন তাকেও আমি সন্দেহ করব। আপনি আপনার আইডেনটিটি দেন।

তরিকুল: আচ্ছা ঠিকাছে স্যার আপনি যেহেতু ডাউট ফিল করছেন সেহেতু আপনি যখন মনে করেন তখন আপনার অ্যাকাউন্টটি চালু কইরেন। আপনার আমাকে কিছুই দিতে হবে না।

গ্রাহক: আপনি ভুয়াবাজি করতেছেন। আপনার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কানেক্ট করে দেই আপনার নম্বরটা।

এ কথা শোনার পররপরই সংযোগ কেটে দেন তরিকুল হিসেবে পরিচয় দেয়া প্রতারক।

বিকাশের এই গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতারকের ফোন নম্বর পেয়ে পুলিশের সাহায্য নেয় নিউজবাংলা। এরপর জানা যায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়ন থেকে ফোনটি করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলা থেকেই এ প্রতারণামূলক ফোন বেশি করা হয়। এর বাইরে যেসব প্রতারণার ঘটনা ঘটে সেগুলোর সঙ্গেও এদের যোগসূত্র পাওয়া যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের তথ্য বলছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণা শিকার হওয়ার অভিযোগে এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ১২০টি মামলা হয়েছে।

এই মামলাগুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ৩০ ধারায় হয়েছে। এই ধারায় অনুমতি ছাড়া ই-ট্রানজেকশনের ঘটনার প্রতিকারের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধের অধিকাংশই মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা সংশ্লিষ্ট। ২০২০ সালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার অভিযোগে সারাদেশে মামলা হয় ৪১২টি।

ডিএমপির সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া ই-ট্রানজেকশনের যত ঘটনা ঘটে তার মধ্যে অল্প সংখ্যক ভুক্তভোগীই মামলা করেন। অনেকে ঝামেলা এড়াতে সাধারণ ডায়েরিও করেন না। সম্ভবত কম টাকা খোয়া যাওয়ার কারণে কিংবা অজ্ঞতার কারণে অথবা আইনি জটিলতা এড়াতে অনেকে মামলা বা অভিযোগের দিকে যান না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিকাশের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা শামসুল হায়দার ডালিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা বিকাশ প্রতারণার মূল ধরন। কথার প্যাঁচে মূলত এরা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে। আমরা সারা বছর সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছি যে, এ ধরনের কোনো প্রতারণামূলক কথা বা গোপন পিন বা অন্য তথ্য চাইলে শুনবেনই না। ফোন কেটে দেবেন।

‘তারপরও অনেক গ্রাহক প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। বিকাশ বিভিন্ন প্রচারে কিন্তু বলছে, বিকাশ কারও কাছে ফোন দিয়ে কোনো তথ্য চায় না। তারপরও অনেকে প্রতারকের কথার প্যাঁচে পড়ে তথ্য দিয়ে দেয়। অনেকে প্রতারণার বিষয়টি ধরে ফেলেন, আবার অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এক্ষেত্রে আমরা বলব, কেউ ফোন দিলে কোনো গ্রাহক যেন তথ্য না দেয়।’

প্রতারক চক্র গ্রাহকের কাছে বিকাশের মতোই হুবহু এসএমএস কী করে পাঠায়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে যে কেউ মেসেজ পাঠাতে পারে। কেননা একটা ভিন্ন ডিভাইসে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে সেখানে কোনো গ্রাহকের নম্বর দিয়ে ঢুকতে গেলে ওই নম্বরেই একটা এসএমএস আসে। সেখানে ওটিপি নম্বর থাকে। ওই ওটিপি নম্বর দেয়ার কারণ হলো, গ্রাহক নিজেই অন্য ডিভাইসে তার অ্যাকাউন্টে ঢুকতে চাইলে সে কিনা তা অ্যাশিউর হওয়া। ওটিপি নম্বর কনফার্ম করার পর ওই অ্যাকাউন্ট নম্বরেই গোপন পিনের মেসেজ আসে।’

শামসুল হায়দার ডালিম বলেন, ‘এক্ষেত্রে প্রতারকরা গ্রাহকের নম্বর জোগাড় করে প্রথমে গ্রাহক থেকে কৌশলে ওটিপি নম্বর নেয়ার চেষ্টা করে। তারপর গোপন পিন নিতে পারলেই গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়। কিন্তু বিকাশ কর্তৃপক্ষ বারবার বলে যে বিকাশ থেকে ফোন দিয়ে কখনও কোনো গ্রাহকের তথ্য চাওয়া হয় না।’

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারকরা বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে স্পুফ কল করে। যেমন বিকাশের ২৪৭ নম্বর দিয়ে গ্রাহকদের ফোন কল করে কখনও বিকাশ অ্যাকাউন্ট আপডেট করার কথা বলে ওটিপি ও পিন নম্বর নিয়ে নেয়।

আবার কখনও বিকাশ এজেন্টের দোকান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে যে নম্বরে টাকা পাঠানো হয় তাকে কল করে বলা হয় ভুলে টাকা চলে গেছে।

পুলিশ বলছে, সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের টার্গেট করেছে প্রতারকরা। তারা বিভিন্ন শিক্ষকদের মোবাইল ফোনে শিক্ষার্থী বেশে কল করে বলছে, স্যার বা ম্যাডাম অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ করতে গিয়ে ভুলে আপনার নম্বরে টাকা কিংবা গোপন নম্বর চলে গেছে। শিক্ষকরা সেসব কথা বিশ্বাস করে তাদের বিকাশ বা নগদের টাকা খুইয়েছেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) একটি প্রকল্পে কর্মরত প্রান্তিক পর্যায়ের ১৮ নারীর বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের উপকমিশনার (ডিসি) আ ফ ম আল কিবরিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণায় যুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে থাকে। একটি কৌশলের কথা ফাঁস হয়ে গেলে আরেক কৌশল ব্যবহার করে।

‘তাদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীদের সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে কোনোভাবেই কেউ তার ওটিপি কিংবা গোপন পিন নম্বর অন্য কাউকে সরকরাহ না করেন।’

তিনি জানান, এসব বিষয় নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিকাশ কর্তৃপক্ষের একাধিক বৈঠক হয়েছে। প্রতারণার ঘটনা প্রতিরোধে তাদেরকে ‘আপডেট’ ও ‘প্রটেক্টেড’ প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে এধরনের প্রতারণা ব্যাপক হারে বেড়েছে। সারা দেশেই প্রতারক চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’

এ বিভাগের আরো খবর