বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোথা থেকে বানর ধরার অনুমতি গ্লোব বায়োটেকের?

  •    
  • ৫ জুলাই, ২০২১ ২১:২৮

গ্লোব কর্তৃপক্ষ গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে বানর ধরার দাবি করলেও বন বিভাগ বলছে, তাদের না জানিয়ে রোববার বরমী বাজার থেকে বানর ধরা হয়েছিল। বন অধিদপ্তরের অনুমোদনপত্রে দেখা যায়, বঙ্গোভ্যাক্স টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য গ্লোব বায়োটেক কেবল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে বানর ধরার অনুমতি পেয়েছে।  

গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমীতে বানর ধরতে গিয়ে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঞ্ছিত হওয়ার পর অনুমোদনহীনভাবে বন্য প্রাণী সংগ্রহের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে গ্লোব বায়োটেক ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বক্তব্য তৈরি করেছে অস্পষ্টতা। সরকারি নথিতে গ্লোব বায়োটেককে কেবল গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে বানর ধরার অনুমতির বিষয়টি থাকলেও বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পরে তারা ‘মৌখিকভাবে’ আরও এলাকা থেকে প্রাণী সংগ্রহের অনুমতি পায়।

বন কর্মকর্তারা বলছেন, গ্লোব বায়োটেক সেই মৌখিক অনুমোদনের ভিত্তিতে সাফারি পার্কের বাইরে থেকেও বানর সংগ্রহ করছিল। অবশ্য গ্লোব বায়োটেক কর্মকর্তাদের দাবি তারা সাফারি পার্কের বাইরে যাননি।

শ্রীপুরের বরমী বাজারে রোববার বেশ কয়েকটি বানরসহ লাঞ্ছনার মুখে পড়েন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ঘটনায় স্থানীয়দের দায়ী করছেন প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আবেদনের পাঁচ মাস পর বঙ্গভ্যাক্সের হিউম্যান ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদনের দেয়া হয়েছে। তবে বানর বা শিম্পাঞ্জির ওপর ট্রায়াল করে তারপর হিউম্যান ট্রায়াল করতে হবে।

এ জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা আবেদন করি। এরপর বন অধিদপ্তর আমাদের এনওসি (ছাড়পত্র) দেয়। আমাদের জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয় গাজীপুর সাফারি পার্ক।’

ড. মহিউদ্দিনের দাবি, তারা গত কয়েক দিন ধরেই গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে বানর সংগ্রহ করছিলেন। এর মধ্যে রোববার ঢাকায় ফেরার পথে বরমী বাজারে স্থানীয়রা তাদের গাড়ির গতিরোধ করেন।

ড. মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের লোকজন স্থানীয়দের কাগজপত্র দেখায়। তারা তখন টাকা দাবি করে। আমাদের লোকজন বলে, সরকারের অনুমতি নিয়ে এই কাজ করছি, কেন টাকা দেব? তখন স্থানীয়রা তাদের ওপর চড়াও হন। পরে প্রশাসন এসে তাদের উদ্ধার করে।’

ড. মহিউদ্দিন গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে বানর ধরার দাবি করলেও বরমী বাজারের মানুষ, স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি বন বিভাগ বলছে উল্টো কথা।

বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম অভিযোগ করেন, গ্লোব বায়োটেকের লোকজন ওই এলাকা থেকেই বানর ধরছিলেন। এ কারণে তাদের বাধা দেয়া হয়।

আবুল হাসেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বানর ধরতে আসা লোকদের কাউকে লাঞ্ছিত বা তাদের কাছ থেকে কেউ কিছু ছিনিয়ে নেয়নি। এসব মিথ্যা অভিযোগ। বরং নিয়ম না মেনে, স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে তারা বরমীর ঐতিহ্যের সাক্ষী বানর ধরতে এসেছিল।

‘শ শ বছর ধরে বরমী বাজারের বাসিন্দারা বানরের নানা অত্যাচার সহ্য করে উল্টো যত্ন-আত্তি করে আসছে। শাটডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকার পরও বানরগুলোকে বরমী বাজারবাসী অভুক্ত রাখেনি। এ বানরগুলো বরমী বাজারের ইতিহাসের অংশ। বানরগুলোকে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে খাঁচায় বন্দি করা হয়, এমনকি অজ্ঞানও করা হয়। এ কারণে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হন।’

শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম জানান, স্থানীয় জনতা গ্লোবের কয়েকজনকে আটকে রেখে বানরগুলো ছাড়িয়ে নেয়। এর মধ্যে অজ্ঞান করা দুটি বানর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সেগুলোকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে ছাড়িয়ে থানায় নেয়া হয়। পরে বন মন্ত্রণালয় ও বন বিভাগের অনাপত্তিপত্রসহ যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই করে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

গ্লোব কর্তৃপক্ষ গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে বানর ধরার দাবি করলেও বন বিভাগও বলছে, তাদের না জানিয়ে রোববার বরমী বাজার থেকেও বানর ধরা হয়েছিল।

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সাফারি পার্কে কিছু বানর আছে। এর মধ্যে যেগুলো অন্য প্রাণীর ক্ষতি ও সমস্যা করছে সেখান থেকে কিছু বানর ধরার পারমিশন দেয়া হয়েছিল। এরপর কোম্পানির লোক সরাসরি আমাদের এখানে এসে ডাক্তার ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ১০ থেকে ১২টা বানর ধরে।’

নিউজবাংলার হাতে আসা বন অধিদপ্তরের অনুমোদনপত্রে দেখা যায়, বঙ্গোভ্যাক্স টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য গ্লোব বায়োটেক কেবল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে বানর ধরার অনুমতি পেয়েছে।

তবে সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, গ্লোব বায়োটেককে পরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান থেকেও বানর সংগ্রহের ‘মৌখিক অনুমতি’ দেয় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ।

তবিবুর রহমান বলেন, ‘সাফারি পার্কে কিছু সমস্যার জন্য তাদের ভাওয়াল বন অঞ্চল থেকে প্রয়োজনীয় বানর সংগ্রহ করতে বলা হয়। সেকেন্ড ও থার্ড দিন তারা ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান থেকে বানর সংগ্রহ করে। তবে ওখানেও বানর ধরা জটিল হয়ে গেলে তারা মনে করেছিল যে, যেখানে এভেইলেবল সেখানে যাবে। সে জন্য তারা গতকাল (রোববার) বরমী বাজার এলাকায় গিয়েছিল।’

বরমী যাওয়ার বিষয়টি গ্লোব বায়োটেক স্থানীয় পুলিশ বা প্রশাসনকে জানায়নি বলে দাবি করেন তবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তারা যে ওখানে গেছে সেটা আমারও জানা ছিল না বা আমার কর্তৃপক্ষেরও জানা ছিল না। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়। ওখানে স্থানীয় লোকজন ঝামেলা করে। পরে পুলিশ তাদেরকে রেসকিউ করে।’

বরমী বাজার এলাকা ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের আওতায়। এটি সরাসরি ঢাকা বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান তবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বরমীতেও তাদের (গ্লোব বায়োটেক) বানর ধরার অনুমতি ছিল। তবে আমাদের না জানানোর ফলে ভুল বোঝাবুঝিটা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর