বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ১৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১১ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:৪৭

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

শনিবার গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে নতুন করে ১৯ জন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া এদিন গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৫৫ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো গাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

একই সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার জানানো হয়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি আবাসিক এলাকায় ঘাব্বুন পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৬ জন নিহত হন।

এছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের কাছাকাছি এক বিমান হামলায় আরও দুই ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং পূর্ববর্তী হামলায় আহত একজন ফিলিস্তিনির চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয়।

বোমাবর্ষণের মাত্রা কিছুটা কমে আসায় এবং ইসরায়েলি সেনারা গাজার কয়েকটি অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ায় উদ্ধারকারী দলগুলো অবশেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া পাড়া-মহল্লায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা গত দুই বছরের ধারাবাহিক ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের লাশ উদ্ধার করছে।

সরছে ইসরায়েলি বাহিনী

দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজার কিছু প্রধান এলাকা থেকে তাদের সামরিক অবস্থান গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে যুদ্ধের মধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি তাদের পরিত্যক্ত ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ির দিকে ফিরতে শুরু করেছেন।

এর আগে গত শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করে, যার ফলস্বরূপ আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় শুরু হওয়ার কথা, যা দুই বছরের এই ভয়াবহ যুদ্ধ অবসানের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছে এবং জিম্মি মুক্তি পর্ব শুরু হয়েছে। এই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বহনকারী শত শত ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারবে, যা বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ মানুষের জন্য জীবনদায়ী ত্রাণ বয়ে আনবে।

যেভাবে জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি

যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো- জিম্মি ও বন্দি বিনিময়। আশা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাস ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রথমে তাদের কারাগারে থাকা ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে, যারা দীর্ঘ মেয়াদে সাজা ভোগ করছেন। এরপর যুদ্ধের সময় গাজায় আটক হওয়া আরও ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকেও মুক্তি দেওয়া হবে।

ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই যে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে ১৫ জনকে পূর্ব জেরুজালেমে ও ১০০ জনকে পশ্চিম তীরে পাঠানো হবে এবং বাকি ১৩৫ জনকে নির্বাসিত করা হবে বলে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। তবে হামাস মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় মারওয়ান বারঘৌতির মতো কিছু হাই-প্রোফাইল ফিলিস্তিনি নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

গাজায় হামাসের নির্বাসিত নেতা খলিল আল-হায়া দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে তারা এই মর্মে গ্যারান্টি পেয়েছেন যে যুদ্ধ শেষ। এই চুক্তি গাজায় দুই বছরের যুদ্ধ অবসানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রথম ধাপ। এই ধাপে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে সরে আসতে বলা হয়েছে, যদিও তারপরও গাজার প্রায় অর্ধেক অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

গাজার কিছু স্থান থেকে সেনা প্রত্যাহার

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গত শুক্রবার দুপুর থেকে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অবস্থান গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, কিছু ইসরায়েলি সেনা গাজার পূর্ব দিকে সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে পিছু হটেছে। তবে সেখানে ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। মধ্য গাজার নুসেইরাত শিবির এলাকায় কিছু ইসরায়েলি সেনা তাদের সামরিক অবস্থান গুটিয়ে ইসরায়েলি সীমান্তের দিকে চলে গেলেও শুক্রবার ভোরের দিকে গোলাগুলির শব্দ শোনার পর বাকি সেনারা সেই এলাকাতেই থেকে যায়। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে গাজা সিটির দিকে যাওয়ার রাস্তা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সরে এসেছে। এই অঞ্চলে ফিরে যাওয়ার আশায় শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিল; কিন্তু কাছাকাছি গোলাগুলির শব্দ শোনে অনেকে সামনে এগোনোর বিষয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফ্রিন গাজার বাসিন্দাদের ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন এবং তাদের চুক্তি মেনে চলার ও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ধ্বংসস্তূপেই ফিরছে মানুষ

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দুই বছরের যুদ্ধের মধ্যে উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকে তাদের অবশিষ্ট জিনিসপত্র পিঠে নিয়ে হেঁটে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছেন। যারা সামর্থ্যবান, তারা গাধার গাড়ি বা ছোট ট্রাক ভাড়া করে এই যাত্রা করছেন। অবশ্য দুই বছরের যুদ্ধে তাদের বেশিরভাগেরই ঘরবাড়ি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। তবে ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও নিজ এলাকায় ফিরতে পেরেই খুশি সবকিছু হারিয়ে নিঃস হয়ে যাওয়া এই ফিলিস্তিনিরা।

৪০ বছর বয়সি মাহদি সাকলা বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির খবর শুনে আমরা খুব খুশি, গাজা সিটিতে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। অবশ্য এখন আর বাড়ি নেই; সব ধ্বংস হয়ে গেছে; কিন্তু ধ্বংসস্তূপ হলেও সেখানে ফিরে যেতে পারলে আমরা খুশি। এটাও এক দারুণ আনন্দ। গত দুই বছর আমরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বাস্তুচ্যুত হয়ে কষ্ট সহ্য করেছি।’

স্ত্রী ও ছয় সন্তানকে নিয়ে খান ইউনিসে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া স্কুলশিক্ষক আলা সালেহ বলেন, ‘রাস্তা দীর্ঘ ও কঠিন, খাবার বা পানি নেই। আমি পরিবারকে পেছনে ফেলে উত্তরে হাঁটা শুরু করেছি। আমার চারপাশে হাজার হাজার মানুষ সংগ্রাম করছে। একটি গাড়ি ভাড়া করতে প্রায় ৪ হাজার শেকেল (১ হাজার ২২৭) খরচ হয়, যা বেশিরভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে।’

এ বিভাগের আরো খবর