বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অবশেষে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করল ইসরায়েল

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১১ অক্টোবর, ২০২৫ ১৭:৩৪

দীর্ঘ দুই বছর যাবত নৃশংস গণহত্যা চালানোর পর অবশেষে গাজা উপত্যকার কয়েকটি এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজা ভূখণ্ড থেকে তিন ধাপে সেনা প্রত্যাহার করা হবে। তবে সেনা প্রত্যাহার করা হলেও গাজার ৫০ শতাংশের বেশি এলাকা ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।গাজার বাসিন্দারা স্থানীয় সংবাদদাতাদের জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব দিকে সরে গিয়েছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমও নিশ্চিত করেছে যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে।ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেনারা এমন স্থানে ফিরে যাবে যেখানে ইসরায়েলের গাজা উপত্যকার প্রায় ৫৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক পোস্টে বলেছেন, ‘একটি নির্ধারিত সীমারেখা পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার করা হবে।কোনো কোনো এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে তা নিয়ে গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। এ মানচিত্রে হলুদ রেখা দিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের প্রাথমিক প্রত্যাহারের সীমারেখা দেখানো হয়েছিল। তখনই জানানো হয়েছিল, এটি সেনা প্রত্যাহারের তিন ধাপের প্রথম ধাপ।ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার আহত হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইউনিসেফের তথ্য মতে, এ যুদ্ধে ২০ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৪২ হাজারের বেশি শিশু; যাদের মধ্যে অন্তত ২১ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।হামাস কি অস্ত্র সমর্পণ করবে?যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস সমঝোতায় পৌঁছালেও, এখনো বহু জটিল ইস্যু অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে—সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, হামাস কি তার অস্ত্রসমূহ সমর্পণ করবে?ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র হতে হবে, পাশাপাশি গাজা শাসন থেকে সরে গিয়ে সংগঠন হিসেবে নিজেদের বিলুপ্ত করতে হবে।অন্যদিকে, হামাস প্রকাশ্যে অস্ত্র সমর্পণের দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তারা অংশিকভাবে অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে গোপনে কিছু নমনীয়তা দেখিয়েছে।ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিশেষজ্ঞ হিউ লাভাট বলেন, নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে হামাসের অবস্থানেই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। গোপনে তারা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আক্রমণাত্মক অস্ত্রগুলোর একটি অংশ তারা নিষ্ক্রিয় করতে রাজি হতে পারে।গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যেসব প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছেমিশরে তিন দিন ধরে পর্দার আড়ালে চলা নিবিড় আলোচনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েল এবং হামাস তার প্রস্তাবিত ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে।সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এর অর্থ, সব জিম্মিকে খুব দ্রুত মুক্তি দেওয়া হবে। একইসাথে, একটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েল তাদের সৈন্যদের একটি নির্দিষ্ট সীমানায় ফিরিয়ে আনবে।’তবে এই প্রথম ধাপের বিস্তারিত বিবরণ তিনি দেননি।এই সমঝোতা এমন এক সময়ে হলো, যখন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলার দুই বছর দুই দিন পূর্ণ হয়েছে। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই অভিযানে ৬৭, ১০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে বিপন্ন করে তুলতে পারে—যদি হামাস সম্পূর্ণভাবে অস্ত্র ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করতে পারে।ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের গাজাভিত্তিক গবেষক আজমি কেশাওয়ি বলেন, হামাস হয়তো স্বল্প ও দীর্ঘ পাল্লার রকেটের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র সমর্পণ করতে পারে। কিন্তু ছোট অস্ত্র বা গোপন টানেল নেটওয়ার্কের মানচিত্র কখনোই দেবে না।তার মতে, হামাস কেবল তখনই অস্ত্র ছাড়বে, যখন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ইসরায়েল তার দখল শেষ করবে।গাজার অনেক ফিলিস্তিনি মনে করেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় হামাসের কিছু সামরিক সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, কারণ ইসরায়েল গাজায় কিছু গ্যাং সংগঠনকে সহায়তা দিয়েছে—যারা এখন মানবিক সহায়তা লুট করছে।ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন বিশ্লেষক তাগরিদ খোদারি বলেন, ইসরায়েল নিজেই এমন গ্যাং তৈরি করেছে যারা এখন নিজেদের জনগণকে হত্যা করছে। হামাস না থাকলে গাজায় নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে।লাভাটের মতে, হামাস একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা টাস্কফোর্সের সঙ্গে আংশিক সহযোগিতায় রাজি হতে পারে, যদি সেই বাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা না করে।আইসজি-এর কেশাওয়ি বলেন, ইসরায়েল হামাসকে যতই দমন করুক না কেন, গোষ্ঠীটি পুরোপুরি নির্মূল হবে না।হামাস এখন কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি একটি প্রতিরোধের প্রতীক। তারা এমন এক যুদ্ধ লড়েছে যা কেউ কল্পনাও করেনি বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর